খাবারে রুচি বা অরুচি হয় কেন?
প্রকাশিত : ১২:১৩, ১১ মার্চ ২০১৯
কিছু খাবার খেতে মানুষ খুব ভালোবাসে, আবার কিছু খাবার খুব অপছন্দ করে? বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এরকম খাবারের স্বাদের পার্থক্যের বেশ কয়েক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আমাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে মানসিকতা এবং জীববিজ্ঞানের মতো বিষয়ও।
এরকম কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করা হলো
সবচেয়ে বড় কারণ জিন
স্বাদ এবং গন্ধের বিষয়টি ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। এজন্য দায়ী আসলে আমাদের ডিএনএ। আমাদের জেনেটিক কোড ঠিক করে দেয় কিভাবে কোন বার্তাটি নিয়ে আমাদের মস্তিষ্ক সেটি কিভাবে প্রক্রিয়া করবে।
এর মানে হলো, প্রতিটি খাবারের ঘ্রাণ আমাদের একেক জনের ওপর একেকরকম প্রভাব ফেলে এবং আমরা সবাই আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখাই।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা ২০০৪ সালে আবিষ্কার করেন যে, ঘ্রাণ সনাক্তের বিষয়টি আসলে আমাদের জিনোমের ভেতরে রয়েছে, যা অন্যসব ক্ষেত্রের তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ।
এর ফলে ঘ্রাণ সনাক্তে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম আচরণ হয়। ফলে কেন সবাই একই ধরণের খাবার পছন্দ করেন না বা অপছন্দ করেন না, সেটার ব্যাখ্যাও সহজে মেলে।
গন্ধ প্রতিরক্ষার বড় অস্ত্র
আমাদের ঘ্রাণ বা গন্ধ সনাক্তের ক্ষমতাটি একসময় জীবন রক্ষাকারী হিসাবেই বিবেচিত হতো। পৃথিবীতে প্রথম দিকের মানুষরা তাদের ঘ্রাণ সনাক্তের ক্ষমতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, তারা গন্ধ শুকেই ভালো ফলটি সনাক্ত করতে পারতেন আর খারাপটিকে বাদ দিতেন।
খারাপ গন্ধ সনাক্ত করতে পারার ফলে সেটি পৃথিবীর ক্ষতির বা বিষাক্ত বস্তু থেকে মানুষকে দূরে রাখতো বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।
একই সময়ে মিষ্টি ঘ্রাণ সনাক্ত করতে পারার ফলে মানুষ সহজেই গ্লুকোজ বা মিষ্টিজাতীয় খাবারের উৎস খুঁজে বের করতে পারতো- যা ছিল তাদের টিকে থাকার অন্যরকম উপায়। তখন তো আর এখনকার মতো প্রস্তুতকৃত খাবার পাওয়া যেতো না।
ঘ্রাণের বিষয়টি জন্মের আগেই হয়তো নির্ধারিত
আমাদের স্বাদ গ্রহণের বিষয়টি অনেক সময় মনের ওপরেও নির্ভর করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে শিখে থাকি কোন খাবার পছন্দ করতে হবে আর কোনটি অপছন্দের। এটা শুরু হয়ে যায় মানব শিশু তার মাতৃগর্ভে থাকার সময় থেকেই।
দুই হাজার বছরের পুরনো ফরাসি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের খাবার থেকেই পেটে থাকা শিশুটি নানা ঘ্রাণ চিনতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পেটে শিশু থাকার সময় যে মায়েরা রসুন খেয়েছেন, সেই শিশুরা ঘ্রাণটি অনেক বেশি উপভোগ করে, সেসব শিশুর তুলনায়, যাদের মায়েরা রসুনের সংস্পর্শে আসেননি।
``দুই বছর বয়স পর্যন্ত আমরা সব কিছুই খেতে পারি,`` বলছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ ফিলিপস। এরপরে নতুন খাবারের বিষয়ে শিশুদের মধ্যে ভীতির তৈরি হয়।
``অভিভাবকরা হয়তো ভাবেন, তাদের সন্তান এই খাবারটি অথবা অন্যটি পছন্দ করে না। আসল ব্যাপারটি হলো, নতুন কোন কিছুই তারা পছন্দ করে না। অনেক সময় এই অপছন্দ পরবর্তী জীবনেও থেকে যায়। বিশেষ করে কোন খাবারের কারণে যদি আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন সেটি স্থায়ীভাবে থেকে যায়।``
লিঙ্গের ভূমিকা
খাবার পছন্দ অপছন্দের ক্ষেত্রের লিঙ্গ পরিচয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার আর পুরুষদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখতে পেয়েছেন।
সংস্কৃতি, পরিবেশের কারণেই অনেক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যে, কি খাবো আর কি খাবো না। এরকম সিদ্ধান্তের সময়েও লিঙ্গ ভেদে খাবার পছন্দ আলাদা হয়ে থাকে।
স্বাদ বদলানোর উপায় আছে
এত কিছু সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে যে, মানুষ যে খাবারটি ভালোবাসে, সেটিই অপছন্দ করতে শুরু করলো অথবা যেটি অপছন্দ করে, সেটিই পছন্দ করতে শুরু করছে।
কেন এমন হয়?
যতই আপনি নানা ধরণের খাবার যাচাই করে দেখবেন, তখনি আপনার খাবারের ধরণ পাল্টানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আবার কোন খাবার পছন্দ করতে আপনার মস্তিষ্ককে বোকা বানানোর মতো কৌশল অনেক সময় সহায়তা করে। যেমন সবজির মধ্যে চিনি দেয়া বা কোন খাবার বা পানীয়ের রং বদলে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৮০ সালের একটি স্বাদ গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয় খেয়েও চোখ বাধা অবস্থায় সেটিকে সনাক্ত করতে পারেননি। অথচ যখন তাদের দেখতে দেয়া হয়েছে যে, তারা কি খাচ্ছেন, তখন তারা সহজেই সেটি সনাক্ত করে ফেলেছেন।
যখন একটি লেবু স্বাদের পানীয় কমলা রঙে পাল্টে ফেলা হয়, তখন ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ভাবছিলেন, এটা কমলা স্বাদের পানীয়।
কিন্তু একই পানীয় স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে যখন শুধু রং পাল্টে সবুজ রঙ করে ফেলা হয়, তখন সেই স্বাদ অংশগ্রহণকারীদের কেউ আর সনাক্ত করতে পারেননি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/