গরমে অসুস্থ হয়ে গেলে করণীয়
প্রকাশিত : ০৯:১৬, ২৯ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ০৯:১৭, ২৯ জুলাই ২০১৯
সারা পৃথিবীতেই গরমের কারণে মানুষের মৃত্যুর কথা শোনা যায়। ব্রিটেনে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা যায় গরমে।
পুরানো রেকর্ডে দেখা যায় তাপদাহ শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মানুষ বেশি মারা যায়। ২০০৩ সালে ইউরোপ জুড়ে তাপদাহে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।
আসলে শরীরে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই কেবল মানুষ জাগতিক কাজকর্ম করে থাকে। তবে মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া তার নিজের তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে নির্দিষ্ট রাখতে চায়।
কিন্তু সূর্যের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল তাপমাত্রা নির্দিষ্ট একটি মাত্রায় ঠাণ্ডা রাখার জন্য শরীরকে বাড়তি কাজ করতে হয়।
এর ফলে ত্বকের কাছাকাছি রক্তবাহী ধমনীগুলো তীব্র তাপ চারপাশে ছড়িয়ে দিতে বেশি করে কাজ করতে শুরু করে, আর তখনই ঘাম হতে শুরু করে। সে শ্বেতবিন্দুর সঙ্গে শরীর থেকে ক্রমে তাপ বেরিয়ে যেতে থাকে।
শুনতে খুব সাধারণ শোনালেও, শরীরের জন্য ব্যাপারটি মোটেও সহজ নয়। যত গরম, মানব শরীরের জন্য তা সামলানো তত কঠিন।
ত্বকের নিচের ধমনীগুলো যখন খুলে যেতে থাকে, তখন রক্তচাপ কমে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কাজ বাড়িয়ে দেয়। শরীরের সবখানে রক্ত পৌঁছে দিতে হৃদপিণ্ডকে তখন দ্রুত পাম্প করতে হয়।
এর ফলে শরীরে হালকা র্যা শ বা দানা দেখা দিতে পারে, মানে ছোট ফুসকুড়ি মতন যা চুলকাতে পারে। অথবা কারো পা ফুলে যেতে পারে গরমে। কিন্তু রক্তচাপ বেশি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
সেই বেশি ঘামের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে দেখা দিতে পারে কিছু উপসর্গ-মাথাঘোরা, অজ্ঞান হয়ে পড়া, বমি ভাব, মাংসপেশিতে খিচ ধরা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ এবং মনে দ্বিধার ভাব হওয়া।
অতিরিক্ত গরমে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে শুরুতেই তাকে আধা ঘণ্টা ঠাণ্ডায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তাতে তিনি সুস্থ হয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, অসুস্থতা গুরুতর নয়।
তীব্র গরমে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে কী করা উচিত, সে বিষয়ে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
* ওই ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে
* শুইয়ে দিতে হবে এবং তার পা কিছুটা ওপরে তুলে দিতে হবে
* প্রচুর পানি বা পানীয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, পানিশূন্যতা দূর করার পানীয় দেয়া যেতে পারে
* আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে, ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে শরীর। বগলের নিচে এবং ঘাড়ে গলায় ঠাণ্ডা পানি দেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে
কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যে যদি সুস্থ না হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই কালক্ষেপণ না করে তক্ষুণি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিটস্ট্রোক হলে মানুষের ঘেমে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে ওই ব্যক্তি।
অতি গরমে স্বাস্থ্যবান মানুষের হিট স্ট্রোক হওয়ার আশংকা কম। কিন্তু কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। শুরুতেই বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই অসুস্থতা রয়েছে, তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি।
যাদের ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান বা টু রয়েছে তাদের শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয় বেশি গরমে।
অনেক সময় তারা নিজেদের অস্বস্তির কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, যে কারণে মা-বাবারা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না।
হার্ট অ্যাটাক বা হিট স্ট্রোক ছাড়াও আরো নানা ধরণের জটিলতার মধ্যে পড়ে শরীর। যেমন পানি ছাড়াও শরীরের নানা রকম খনিজ উপাদান বেরিয়ে যায় ঘামের সঙ্গে।
কিছু রোগের ওষুধ, যেমন মৃগীরোগ ও পারকিনসন্সরোধী ওষুধের কারণে গরম বাড়তে পারে। এছাড়া লিথিয়াম রয়েছে এমন ওষুধেও বাড়তে বাড়ে গরমের বোধ। আর তাপদাহের সময় কী করা উচিত?
* করণীয় একেবারে সাদামাটা- ঠাণ্ডা থাকুন আর শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না। গরমে রোদের মধ্যে কাজ না করা এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকা ভালো।
* ঘরে দিনের বেলাতে পর্দা টেনে দিন। প্রচুর পানি এবং দুধ পান করুন।
* সাধারণত দিনের বেলাতেই গরমে বেশি হয়। কিন্তু রাতের অতি গরমও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
(বিবিসি অবলম্বনে)