ঢাকা, বুধবার   ০৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আর্থ্রাইটিস আটকাতে বদলান কিছু অভ্যাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

অনেকেই হাঁটুর ব্যথায় কাবু। অস্থিবিশেষজ্ঞরা বলছেন হাঁটুর ভাল চাইলে বেশি করে কাজ করেন। আধুনিক জীবন থেকে সরে একটু পেছনে গেলে দেখতে পাবেন, আমাদের মা-বোনেরা উবু হয়ে বসে রান্না করতেন, ঘর মুছতেন, আছড়ে আছড়ে কাপড় কাচতেন৷ ডাইনিং টেবিলের পাঠ ছিল না৷ 

বাড়িশুদ্ধ মানুষ মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করতেন৷ পড়াশোনাও হত মাটিতে বা খাটে৷ এই ধরনের জীবনযাপনের ফলে তাঁদের শরীরের নমনীয়তা ছিল দেখার মতো৷ হাঁটু–কোমর ব্যথা পারতপক্ষে ত্রিসীমানায় আসত না৷

পশ্চিমী জীবনধারার প্রভাবে যত আমাদের দেশি ঘরে গ্যাস–মাইক্রোওভেন, খাওয়ার টেবিল–পড়ার চেয়ার, খাটপালং, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদির রমরমা শুরু হল, তত নমনীয়তা কমল শরীরের, বাড়ল ব্যথা–বেদনার প্রকোপ৷ 

অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম সাহার মতে, ‘‘মানুষ তথা যে কোনও জীবজন্তুর শরীরের পেশিসন্ধি এমন ভাবে তৈরি, যাতে সে ছুটে-দৌড়ে-লাফিয়ে–ঝাঁপিয়ে, প্রবল কায়িক শ্রম করে তার জীবিকা নির্বাহ করতে পারে৷ আজকের জীবনে সে সব করার মতো পরিস্থিতি নেই৷ ফলে শুধু যে সন্ধি–পেশির কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে তা নয়, ক্ষতিও হচ্ছে৷ হাঁটুর কথাই ধরুন, ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত যার ঘোরার কথা, আধুনিক যন্ত্রনির্ভর জীবনের কারণে ৯০ ডিগ্রির বেশি তাকে কখনওই ঘুরতে হচ্ছে না৷ ফলে প্রকৃতির নিয়মানুসারে তার ক্ষয় হচ্ছে৷’’

আমাদের শরীরের প্রতিটি সন্ধিতে আছে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামের এক তরল, যে সন্ধির অন্যতম প্রধান উপাদান কার্টিলেজকে পুষ্টি জোগায়৷ সন্ধি পুরোপুরি সচল না থাকলে, তার উপর যতটা চাপ এসে পড়ার কথা, তা না পড়লে এই তরলের পরিমাণ কমতে থাকে৷ শুরু হয় সন্ধির ক্ষয়৷ কাজেই হাঁটু বা কোমর যখন ১৮০ ডিগ্রির বদলে মোটে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাফেরা করা শুরু করে।

বিপদ আছে আরও৷ ২০১৪ সালে ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি’-তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান যে যাঁরা এক বার মাটিতে বসে গেলে হাত–কনুই বা পায়ের সাহায্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারেন না, যাকে বলে সিটিং–রাইজিং টেস্ট, তাতে রীতিমতো ফেল করেন তাঁরা। তাঁদের সার্বিক স্বাস্থ্যও খারাপ হতে থাকে৷

তা হলে কী? খাট–পালং–চেয়ার–ওয়াশিং মেশিন সব বিদায়? বাথরুম বা রান্নাঘরেরও আমূল পরিবর্তন? অফিসে কী হবে? তা হলে কি এখন থেকে বদলে যাবে অফিসের নিয়ম–কানুন? ‘তার প্রয়োজন নেই’— জানালেন গৌতমবাবু। ‘কোনও কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়৷ একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে লাভের বদলে ক্ষতি হয়৷ আমাদের দেশের কথা বলি প্রথমে৷ এখানে এখনও বেশ কিছু জায়গায় দিনে–রাতের অনেকটা সময় উবু হয়ে বা হাঁটু গেড়ে বসার প্রচলন আছে৷ তা সে মাঠের বা ঘরের কাজ করার জন্য হোক কি অন্য কাজের জন্য৷ হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, এ সব মানুষদের হাঁটুর আর্থ্রাইটিস বেশি হয়৷ এবং তার পরও বসার ধরন না পাল্টানোর ফলে নষ্ট হাঁটু বদলে কৃত্রিম হাঁটু বসাতে হয়৷ অর্থাৎ হাঁটু প্রতিস্থাপন সার্জারি বিদেশের তুলনায় বেশি হয় আমাদের দেশে৷ অতএব, কোনও বাড়াবাড়ি নয়, শরীরের অবস্থা বুঝে সব কিছুই ব্যালান্স করে চলুন৷ শুধু তা-ই নয়, এক রকম অভ্যাসে সারা ক্ষণ শরীরকে অভ্যস্ত করলে তার একটা খারাপ প্রভাব থাকবেই। উবু হওয়ারও এমন কিছু বিপদ আছে।’’

হাঁটুর হাড় বা মালাইচাকির যথাস্থানে বসে থাকার মূলে আছে তার চারপাশের অসংখ্য ছোট–বড় পেশি ও কার্টিলেজের নির্ভুল গাণিতিক টান৷ ঠিক দড়ি টানাটানি খেলার মতো চার দিকের সুষম টানে মালাইচাকি বসে থাকে যথাস্থানে৷ ফিটনেস ঠিক থাকলে এই টানও ঠিক থাকে৷ কিন্তু আনফিট শরীর নিয়ে যে কাজ কখনও করেন না বা ন’মাসে ছ’মাসে করেন, তা নিয়মিত করতে শুরু করলে, উবু হয়ে বসতে শুরু করলে, টানের হেরফের হয়ে কার্টিলেজের ক্ষয় শুরু হতে পারে বা আগে থেকে ক্ষয় শুরু হলে বাড়তে পারে তার প্রকোপ৷ প্রথম দিকে তাতে ব্যথা–বেদনা খুব একটা থাকে না৷ কিন্তু এই ক্ষয় বাড়তে বাড়তে এক সময় তার হাত ধরেই সূত্রপাত হয় অস্টিওআর্থ্রাইটিসের, যা এক বার শুরু হয়ে গেলে, তাকে আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না৷

কাজেই যদি উবু হয়ে বসার অভ্যাস মোটে না থাকে, হঠাৎ করে সে চেষ্টা না করে আগে পায়ের পেশিকে মজবুত  করুন, যাতে এই চাপ সে নিতে পারে৷ সাধারণ ব্যায়ামের পাশাপাশি কোমর ও পায়ের পেশি শক্ত করার ব্যায়াম করুন৷ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো৷ জিমে গিয়ে করতে পারেন৷ করতে পারেন মাঠে–ময়দানেও৷ থাই ও পায়ের ডিমের পেশি মজবুত  হয়ে গেলে অল্প করে বিভিন্ন ধরনের স্কোয়াট এক্সারসাইজ করতে করতে এক সময় ডিপ স্কোয়াটিং, অর্থাৎ টয়লেটে যে ভাবে উবু হয়ে বসতে হয়, তাও করতে পারবেন আরামসে৷ তার ফলে হাঁটুর পাশাপাশি কোমরের নমনীয়তা বাড়বে৷ কমবে আর্থ্রাইটিসের আশঙ্কা৷ আনন্দবাজার

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি