ঘরোয়া উপায়ে শিশুর ডায়রিয়া সারিয়ে তুলুন
প্রকাশিত : ১১:০৩, ৮ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১১:০৫, ৮ জানুয়ারি ২০২২
ছোট বাচ্চাদের মধ্যে অনেক সময় ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা যায়। এতে শিশুরা অসুস্থ, এমনকি দুর্বল পর্যন্ত হয়ে পড়ে। ডায়রিয়ায় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। ফলে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের জ্বরও চলে আসে। বাচ্চাদের ডায়রিয়া কেন হয়, এর লক্ষণ ও ঠিক করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।
বাচ্চাদের ডায়রিয়ার কারণ
> নবজাতক শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু মায়েরা সন্তানকে স্তন্যপান করিয়ে উঠতে পারেন না। তখন তাদের ফর্মুলা মিল্ক বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে গরুর দুধ পান করাতে হয়। এর ফলে বাচ্চাদের অ্যালার্জি বা ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। কারণ কমবয়সি বাচ্চারা ফর্মুলা মিল্ক বা গরুর দুধের প্রোটিন হজম করতে পারে না, তাই ডায়রিয়া হয়।
> কোন বাচ্চার রোটাভাইরাস হয়ে থাকলে তাদের ডায়রিয়া হয়। বাচ্চাদের রোটাভাইরাসের প্রতিষেধক না-দেওয়া হলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
> অ্যান্টিবায়োটিক পেটের ব্যাক্টিরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে বাচ্চাদের গা গোলানো, বমি, ডায়রিয়ার সমস্যা হয়।
> ডে কেয়ার বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসকারী বাচ্চারা জিয়ার্ডিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। জিয়ার্ডিয়া নামক পরজীবীদের কারণে বাচ্চাদের অন্ত্রে সংক্রমণ দেখা দেয়।
বাচ্চাদের ডায়রিয়া নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়
ডায়রিয়া বাচ্চাদের শরীর থেকে জীবাণু বের করে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। তবে খুব বেশি ডায়রিয়া হলে দেরি না-করে, তা নিরাময়ের চেষ্টা করুন। তবে ছোট বাচ্চাদের অ্যান্টিবায়োটিক না-দেওয়াই ভালো। ঘরোয়া কিছু উপায় করে ডায়রিয়ার সমস্যা সারিয়ে তোলা যায়।
কী ভাবে, জেনে নিন..
> বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের শরীর থেকে বেশি পানি বেরিয়ে যায়। তাই তারা খুব তাড়াতাড়ি ডিহাইড্রেশানের শিকার হয়ে পড়তে পারে। এই বয়সে বাচ্চাদের স্তন্যপান করাতে থাকুন এবং গরুর দুধ দেবেন না। পাশাপাশি অধিক মিষ্টি খাবার খাওয়াবেন না। এর ফলে ডায়রিয়া আরও বেড়ে যেতে পারে।
> মায়েরা যদি সয়াবিন, দুধ, গম ও চিনাবাদাম খেয়ে থাকেন, তা হলে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। তাই কয়েকদিন এ ধরনের খাবার খাবেন না। এর ফলে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যোন্নতি হবে।
> ঠিক কোন কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। ডায়রিয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হল দাঁত ওঠা। মনে করা হয় দাঁত ওঠার সময় অধিক লালা ঝরে, যা ডায়রিয়ার একটি কারণ।
> বাচ্চাদের ব্যবহার্য খেলনা, জামা-কাপড় বা যে কোন বস্তুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। কারণ বাচ্চারা যে কোনও জিনিস মুখে দিয়ে দেয়। যার ফলে তাতে লেগে থাকা জীবাণু তাদের শরীরে প্রবেশ করে। এই জীবাণুগুলো ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
> বাচ্চাদের ডায়রিয়া নিরাময়ের উল্লেখযোগ্য একটি উপায় হল ওআরএস। এর ফলে শরীর থেকে পানির অভাব দূর হয়। ২ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ৫০ থেকে ১০০ মিলি ওআরএস দেওয়া উচিত।
> বাচ্চাদের ডায়রিয়া ঠিক করার জন্য একটি কলা চটকে বাচ্চাদের খাওয়ান। কলায় তাকা ফাইবার মল শক্ত করতে সাহায্য করবে। আবার কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম, ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে নির্গত হওয়া পুষ্টিকর উপাদান পুনঃপ্রতিস্থাপিত করবে।
> দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিকস পাচনতন্ত্রে ভালো ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। বাচ্চাদের লাস্সি দিতে পারেন। তবে শিশুর বয়স ১ বছরের বেশি হলে তবেই এতে চিনি মেশাবেন।
> ডাবের পানিও বাচ্চাদের ডায়রিয়া ঠিক করতে সাহায্য করে। কারণ ডাবের পানিতে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান পেটের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। পাশাপাশি শরীরের পানির অভাবকেও দূর করে।
> আপেলে উপস্থিত পেক্টিংস মল ত্যাগকে সহজ করে তোলে। এই পেক্টিংস এক ধরনের দ্রাব্য ফাইবার। আপেল ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। তার পর তা চটকে বাচ্চাদের খাওয়ান।
> বাচ্চাদের ডায়রিয়া নিরাময়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হল লেবু। এটি জীবাণু ও জ্বালার হাত থেকে মুক্তি দেয়। সামান্য একটু পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে চার চামচ পান করান।
মনে রাখবেন
> ডায়রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি তিন দিনের চেয়ে বেশি জ্বর থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
> জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত বাচ্চাদের শক্ত ও ভারী কিছু খাওয়াবেন না।
> নির্দিষ্ট সময় পর পর বাচ্চাদের ডায়পার পাল্টে ফেলুন এবং নিম্নাংশ হাওয়ায় শুকোতে দিন।
> ডায়রিয়ার সময় শিশুর ডায়পার র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করুন।
সূত্র: এই সময়
এমএম/