ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

অর্গানিক ফুড কী আসলেই অর্গানিক?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২৪, ৯ জানুয়ারি ২০২৩

বাজার সয়লাব অর্গানিক খাবারে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ, যাদের আর্থিক সঙ্গতি মোটামুটি, নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা পেতে একটু বেশি দামে হলেও কিনছে অর্গানিক খাবার। কিন্তু অর্গানিক ফুড নামে যত খাবার এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তার কত শতাংশ অর্গানিক?

অর্গানিক খাবার কী?
জৈব খাদ্য বা অর্গানিক ফুড হলো সেসব খাবার যা উৎপাদনে কোনো ধরণের রাসায়নিক সার, এন্টিবায়োটিক, হরমোন বা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়নি। এগুলো সারবিহীন অথবা জৈব সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন করা হয়।   

বাজারের অর্গানিক খাবারগুলো কতটুকু অর্গানিক?
খাদ্যপণ্যের গায়ে 'অর্গানিক' লেবেল থাকা মানেই যে সেগুলোতে কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহৃত হয় নি তা কিন্তু না! 

দ্য টেলিগ্রাফে ২৩৭টি গবেষণার রিভিউ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়, যেখানে বলা হয়েছে বাজারের সব অর্গানিক খাদ্য শতভাগ কেমিকেলমুক্ত নয়।

গবেষণাটিতে সাধারণভাবে উৎপন্ন ফল ও সবজির চেয়ে অর্গানিক ফল ও সবজিতে মাত্র ৩০ ভাগ কীটনাশক কম পাওয়া গেছে।

শতভাগ অর্গানিক হওয়া কী সম্ভব?
অসম্ভব হয়তো না, তবে বেশ কঠিন। কেনো কঠিন, তা অর্গানিক হওয়ার মানদণ্ডগুলো জানলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন।

বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাকশন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, জৈব প্রক্রিয়ায় চাষের জন্য প্রধানত পাঁচটি মানদণ্ড প্রয়োজন:

১. জমিকে কমপক্ষে ৩ বছর রাসায়নিকমুক্ত থাকতে হবে;

২. ১০ মিটার জমি রাসায়নিকমুক্ত হতে হবে;

৩. সার হতে হবে পরিবেশ বান্ধব;

৪. সেচ নিরাপদ হওয়া দরকার; এবং

৫. বীজও অর্গানিক হতে হবে।

অর্থাৎ, চাষাবাদে রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়নি- কেবল এই দিকটিই একটি কৃষিপণ্যের অর্গানিক হওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়।

ধরুন, একটি গাভীকে সরাসরি কোনো হরমোন, স্টেরয়েড বা অন্য কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল দেয়া হয়নি। কিন্তু একে যে তাজা ঘাস খেতে দেয়া হয়েছে, সেগুলো উৎপাদনে কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়েছে। এই গাভীর দুধ ও মাংস শতভাগ অর্গানিক নয়!

একইভাবে বিলের মাছও অর্গানিক হবে না, যদি এর পাশে কোনো শস্যক্ষেত থাকে, যেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয়েছে এবং বৃষ্টির সঙ্গে সেই সার ধুয়ে বিলের পানিতে মিশেছে।

'অর্গানিক খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত' বিজ্ঞানীদের মতে, এটি একটি ভুল ধারণা। স্ট্যানফোর্ড সেন্টার ফর হেলথ পলিসির শিক্ষক ড. কৃস্টাল স্মিথ-স্প্যাঙ্গলার বলেন, 'কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, অর্গানিক খাবার সবসময়ই অধিক স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর। বিস্ময়কর হলো, আমরা (গবেষণায়) এমনটা দেখি নি!'

গবেষণাটি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল হলো, অর্গানিক ও সাধারণ পণ্যে ভিটামিনের ব্যবধান নগণ্য। জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পণ্যে উচ্চমাত্রায় ফসফরাস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে গবেষকরা বলছেন, খুব কম সংখ্যক মানুষ ফসফরাস স্বল্পতায় ভোগেন, বিধায় অর্গানিক খাবারের এই দিকটির তাৎপর্য কম।

তাহলে কী অর্গানিক খাবার খাবো না?
খেতে নিষেধ নেই। তবে যেহেতু 'অর্গানিক' লেবেলযুক্ত হলেই অর্গানিক হয় না, তাই যাচাই-বাছাই করা জরুরি। এ ধরণের পণ্য অনলাইনে কেনার বদলে সরাসরি দোকান থেকে নিজে দেখেশুনে কেনাই ভালো।

ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা কীটনাশনমুক্ত খাবার খাওয়াই যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাহলে অর্গানিক খাবার খেতে পারেন। কিন্তু 'অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ'- স্রেফ এই লেবেল দেখে বেশি দামে কেনা হবে নির্বুদ্ধিতা। কারণ মূলত আমাদের অর্গানিক খাবারের প্রতি অত্যধিক আগ্রহের কারণেই দেশে অর্গানিক পণ্যের এত দাম।

মিস. স্প্যাঙ্গলারের মতে, আমাদের বেশি বেশি ফল ও সবজি খেতে হবে, তা যে প্রক্রিয়ায়ই উৎপন্ন হোক না কেন। কারণ বেশিরভাগের খাদ্য তালিকায় এগুলোর ঘাটতি রয়েছে।

অর্থাৎ, অর্গানিক, নন-অর্গানিক বাছবিচার করতে গিয়ে ফল ও সবজি খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয়াও উচিৎ নয়।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি