হেলদি ফুড হেলদি ব্রেন
প্রকাশিত : ১৬:২৭, ১০ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৮:০৮, ১০ জানুয়ারি ২০২৩
আজকে আমরা কথা বলব ব্রেনটাকে কীভাবে কাজে লাগাব এই বিষয়ে। প্রথমেই ব্রেনের কোন জায়গাটা কী- এ সম্পর্কে জানবো।
আমাদের ব্রেনের অনেকগুলো অংশ আছে। কপালের অংশটাকে আমরা ফ্রন্টাল বলি। কানের এই পাশটায় ব্রেনের যেটুকু জায়গা আছে এটা হচ্ছে পুরাটাই সেরিব্রামের ফ্রন্টাল লুক। হাত-পা নাড়ানো, হাঁটাচলা করার কাজ ব্রেনের এটুকু জায়গা করে।
কানের এই পাশটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট। এই অংশটার অনেকগুলো কাজ আছে। আর পেছনে যে জায়গাটা সেটা হচ্ছে অক্সিপিটাল। এটার মাধ্যমে আমাদের চোখের রশ্মিগুলো ব্রেনের একদম পেছনের দিকে চলে আসে। কোনো কারণে যদি ব্রেনের এই অংশটুকুর মধ্যে সমস্যা তৈরি হয় তখন চোখ ভালো থাকলেও আমরা দেখতে পারব না।
এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে, টেম্পোরাল লোব। টেম্পোরাল লোব কেন গুরুত্বপূর্ণ? এর একটা অংশ কানে শুনতে সাহায্য করে এবং এই জায়গাতেই হচ্ছে আমাদের মেমোরি সেন্টার। আমাদের যতরকম তথ্য, পড়াশোনা এসমস্ত তথ্য জমা থাকে এই জায়গাটার মধ্যে।
এখন যদি আমরা ব্রেনের ভেতরটা দেখি যে, টেম্পোরাল লোবটা দেখতে কেমন! এই যে আমাদের সমস্ত পড়াশোনা এসব থাকে কোথায়? এসব থাকার জায়গা হচ্ছে এই টেম্পোরাল লোব। টেম্পোরাল লোবের ভেতরে হচ্ছে আমাদের লাইব্রেরি। আমাদের সমস্ত তথ্য এখানে জমা থাকে।
এরপরে আমরা দেখব কীভাবে জমা থাকে? আমাদের ব্রেনের সেরিব্রাম আছে, দুইটা। একটা ডান একটা বাম। দুইটা সেরিব্রাম দুই রকমের কাজ করে। ডান দিকের কাজ হচ্ছে, কালার, আর্ট, সংগীত, গান, মিউজিক। আর বাম দিক হচ্ছে, অংক, হিসাবনিকাশ করে। ব্রেনের এই দুইটা পার্ট ওরা খুব ভালো বন্ধু।
এখন একবন্ধুর খুব অংক ভালো লাগে, আরেক বন্ধুর আঁকতে খুব ভালো লাগে। এদের মধ্যে যত বেশি কানেকশন বাড়ানো যাবে এদের মধ্যে বন্ধুত্ব যত ভালো হবে তখন একদম কমপ্লিট হবে। তখন আমাদের অংক করতেও ভালো লাগবে, ড্রইং করতেও ভালো লাগবে, মিউজিকও ভালো লাগবে।
বুয়েটে যারা পড়েন তারা বলেন যে, বামদিক ভালো লাগে! কেউ কেউ ভাবে যে, না ঠিক আছে! আমার বামদিক বাদ, আমি শুধু ডান দিক নিয়ে কাজ করব। তখন তারা শুধু আঁকাজোকা নিয়ে থাকে। আমরা চারুকলায় দেখি সারাক্ষণ আঁকাজোকা করে। তার মানে কি? তারা কিন্তু অংক পারে কিন্তু তারা অংকটাকে বলছে, না আমি আমার ডানদিক নিয়ে থাকব।
আবার বুয়েটে যারা পড়েন তারা আবার বলেন যে, না! আমার বামদিক ভালো লাগে। তখন তারা অংকটঙ্কের মধ্যে চলে যায়।
আইনস্টাইনের ব্রেনে এত বেশি ফোল্ডিং কেন?
আর আমরা কি করতে চাই? আমরা দুইটাকে একসাথে কাজে লাগাতে চাই। আমাদের কানেকশন বাড়াতে হবে। তাহলে কানেকশনটা কোন জায়গা থেকে আসলো?
আমরা তাহলে পুরো ব্রেনটাকে চিন্তা করি। যেরকম পুরো বিল্ডিংটায় আমরা যদি বলি কয়টা ইট দিয়ে আছে, কেউ বলতে পারব? বলতে পারব না। কিন্তু হাজার হাজার ইট আছে।
ঠিক ব্রেনটাও এরকম। কিছু কিছু কোষ নিয়ে তৈরি এবং ব্রেনের কোষটাকে আমরা বলি, নিউরোন। দেখতে গাছের মতো। এখানে কিছু ডালপালা আছে। তো এই ডালপালা অর্থাৎ ব্রেনের ভেতরে যে নিউরোন এটার মধ্যে অনেক তথ্য থাকে।
এই যে আমি চোখে দেখলাম, কানে শুনলাম একটা টেস্ট পেলাম। একটা ঠান্ডা অনুভূতি হলো একটা গরম অনুভূতি হলো, যে-কোনো অনুভূতির মাধ্যমে সে তথ্য নেয়। তথ্য আসার পরে এই তথ্যটা সে আরেকজনকে দেয়। একটার মধ্য দিয়ে আরেকটা নিউরোনে একটা কানেকশন তৈরি হয়।
তো এই নিউরোনের মধ্যে যার কানেকশন যত বেশি সে তত বেশি ট্যালেন্ট হবে। আর আমরা যে যত বেশি জানব, জানার আগ্রহ থাকবে এবং যত তথ্য আমরা দেবো প্রত্যেকটা তথ্যে একটা করে এরকম ডাল গজায়।
তাহলে আমি যখন পড়াশোনা করলাম না সারাবছর, তাহলে আমার ডালপালা হবে? আমার মধ্যে কানেকশন তৈরি হবে? হবে না।
এখন যদি বলি যে, আমার সব মনে রাখতে চাই, তাহলে কী করতে হবে? তাহলে সবকিছু আগে বিল্ডিং করো। বিল্ডিং করো মানে কি? ডাল বানাও। গাছের ডাল তৈরি করো।
যখন ছোট গাছ থাকে, সুন্দর করে কেটে দিলে পরে আরো সুন্দর সুন্দর ডাল হয় না? ঠিক সেরকম আমরা যত তথ্য দেবো প্রত্যেকটা তথ্যে একটা করে ডাল হবে এবং যত বেশি ডাল হবে তার মধ্যে কানেকশন তৈরি হবে।
যত বেশি কানেকশন তৈরি হবে সেকেন্ড ধাপ এবং থার্ড ধাপ সেই দুই ধাপে আমরা আরো সহজে আরো সুন্দর করে আমাদের স্মৃতিশক্তিটাকে প্রখর করতে পারব এবং পরীক্ষাতে তখন আমরা ভালো রেজাল্ট করতে পারব।
এই যে ব্রেনের মধ্যে অনেক কানেকশন। আইনস্টাইনের ব্রেনের ভেতরে এত কানেকশন ছিল যে, ব্রেন যখন এনালাইসেস করা হয়েছে এত জায়গায় ভাগ করা। এত বেশি ফোল্ডিং ছিল আইনস্টাইনের ব্রেনের মধ্যে। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, এত ফোল্ডিংস কেন? কারণ যত চিন্তা যত তথ্য যতরকমের ব্রেনকে কাজে লাগাবে ব্রেনের ফোল্ডিং তত বেশি হয়। কানেকশন বেশি তৈরি হয় এবং তার স্মৃতিশক্তি তত বেশি ভালো থাকে।
যত ডাল তত বুদ্ধি তত স্মৃতি!
তো নিউরোনটা হচ্ছে অনেকটা কারেন্টের তারের মতো। কারেন্টের তারে বাইরে একটা প্লাস্টিকের কাভার থাকে। ঠিক সেরকম এটা হচ্ছে ভেতরের তার আর বাইরের দিকে এটা হচ্ছে আমাদের প্লাস্টিকের কাভার আর এটা হচ্ছে গাছের ডাল। যত ডাল তত বুদ্ধি তত স্মৃতি তত আমাদের তথ্য বেশি মনে থাকবে।
এবার আসি, আমরা যে-কোনো একটা জিনিস যদি পড়ি তাহলে তথ্যটা প্রথম ব্রেনের মধ্যে যায় এবং ব্রেনের লাইব্রেরিটা কিন্তু আমরা প্রথমে দেখে আসছি। ঐ যে টেম্পোরাল লোব। তো আমরা যত পড়াশোনা করব সব এই লাইব্রেরিতে আগে ঢুকবে।
তো তিন বার যদি পড়ি, প্রথমবারে কী হবে? একটা ডাল হবে এবং সমস্ত তথ্য লাইব্রেরিতে জমা হবে। তখন লাইব্রেরিটা দেখতে কেমন হবে? এইরকম হবে (চিত্র)।
তারপরে সেকেন্ড টাইম যখন পড়ব তখন গোছানো হবে। এক জায়গায় অংক বই, এক জায়গায় ফিজিক্স, এক জায়গায় ক্যামিস্ট্রি, এক জায়গায় বাংলা। এরকম সুন্দর করে গোছানো হবে।
এরপর যখন পরীক্ষার সময় আসবে তখন কী হবে? তখন আমার ব্রেন বন্ধু অটোমেটিকেলি তথ্য দেবে। যখন আমি বলব যে পরীক্ষায় কোয়েশ্চেন আসছে। এই বলো কী কোয়েশ্চেন আসছে! সাথে সাথে ব্রেন তথ্যগুলো বের করে দেবে।
এখন বলেন তো দেখি, এখানে যে লাইব্রেরি, এখান থেকে বই বের করা যাবে?
যদি আমি বইটাকে না গুছাই, সারা বছর পড়লাম না, পরীক্ষার আগে ইচ্ছামতো পড়লাম। একবার পড়েই শেষ। এরকম এলোমেলো বই।
এখন পরীক্ষার হলে গিয়ে আমি আমার ব্রেন বন্ধুকে বললাম, বাইর করো তো! আমার বন্ধু তো রেগে যাবে। সারা বছর পড়ো নাই, এখন আমাকে বই বের করতে বলছ! আমি এতগুলো বইয়ের মাঝখান থেকে কোন জায়গা থেকে বের করব? বের করতে পারবে আমার বন্ধু? বের করতে পারবে না।
পরীক্ষার হলে মনে হবে চোখের সামনে পড়া ভাসছে...
এই পড়াগুলো হবে প্রথম ৪৫ দিন। ৪৫ দিনে প্রথমে আমি লাইব্রেরির ভেতরের ঢোকালাম, সেকেন্ড টাইম গোছালাম। থার্ড টাইম আরো সুন্দর করে পড়লে তথ্যগুলো থাকবে। আর যত বেশি পড়ব যত বেশি তথ্য দেবো লাইব্রেরিটা বড় হবে।
এবং যখনই কোনোকিছু দরকার হবে অটোমেটিকেলি ব্রেন থেকে চলে আসবে। তখন নিজেই অবাক হয়ে যাব যে, এটাতো পড়ি নাই, এটাতো আমি জানি না কিন্তু মনে আসল কীভাবে? মনে নাই কিন্তু হাত কাজ করে যাচ্ছে। হাত থেকে লেখা বের হয়ে যাচ্ছে। পড়া মনে হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে চোখের সামনে পড়া ভাসছে। হয়তো বা এই পড়া আমার ইমিডিয়েটলি হয় নাই কিন্তু আমার যেহেতু সবকিছু গোছানো সুতরাং সবকিছু আমার অটোমেটিকেলি মনেও হয়ে যাচ্ছে।
ব্রেন বন্ধুকে রাত ২টা/৩টা পর্যন্ত জাগিয়ে রাখলে কী হয়...
আমাদের ব্রেন হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। এই বন্ধুটাকে খুব যত্ন করতে হয়। এই বন্ধুটাকে যদি আমরা কোনোরকমভাবে অত্যাচার করি যেমন আমাদের বাসায় একজন ভদ্রমহিলা আছেন সারা বছর পড়েন না। সে ভদ্রমহিলা পরীক্ষার আগের রাতে খুব পড়াশোনা করেন। এমনকি ২টা/৩টা পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
তো আমি তো তার বন্ধু না, তাকে যদি আমি রাত ২টা/৩টা পর্যন্ত জাগিয়ে রাখি! সকালবেলা এসে বললাম, আমাকে সাহায্য করো, আমাকে তথ্য দাও, সে দেবে? সে তো রেগে যাবে। বলবে, তুমি আমাকে সারা রাত ঘুমাতে দাও নাই, এখন আবার বলো তথ্য দাও। আমি কোনোকিছুই দেবো না। তখন তথ্য দেয়া বন্ধ। তার মানে পরীক্ষা হবে খারাপ।
সুতরাং এই বন্ধুকে খুব যত্ন করতে হবে। তাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, রেস্ট দিতে হবে এবং আগে থেকেই তার লাইব্রেরিটাকে সুন্দর করে গোছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
যখন আমরা এই তিনটা কাজ করব তখন আমাদের পরীক্ষা খুব ভালো হবে এবং পরীক্ষা খুব সহজ হয়ে যাবে।
ব্রেনের সংযোগ বেগবান করতে যেসব খাবার খেতে হবে...
আর এই যে আমরা বললাম একটা ব্রেনের সাথে একটা কানেকশন। একজনের সাথে আরেকজনের সংযোগ। এখানে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। কিছু তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়। যেটাকে আমরা বলি নিউরোট্রান্সমিটার। একদম পানির মতো তরল কিছু ইনফরমেশন। এক নিউরোন থেকে বের হয়ে আরেক নিউরোনের মধ্যে চলে যায়। তথ্য আদান প্রদান করে।
তাহলে আমরা যদি আমাদের কানেকশন বাড়াতে চাই, তথ্যটাকে খুব বেশি বেগবান করতে চাই তাহলে আমাদেরকে কী করতে হবে? আমরা এমন সব খাবার খাব যেটা ব্রেনের জন্যে খুব পুষ্টিকর এবং যেটা নিউরোট্রান্সমিটার বেশি বেশি তৈরি করবে, ব্রেনকে সতেজ করবে।
ব্রেনের সবচেয়ে প্রিয় খাবার- গ্লুকোজ
ব্রেনের খাবার হচ্ছে গ্লুকোজ। একমাত্র গ্লুকোজ খায় আর কিছু সে খায় না।
যখন খুব বিপদে পড়ে যায় গ্লুকোজ না-ই এখন কী করবে? চলতে তো হবে। তখন সে বাধ্য হয়ে কিটোন খায়। কিটোন মানে কী? কিটোন হচ্ছে ফ্যাট।
আমরা ফ্যাট চর্বি জাতীয় খাবার-দাবার খাই। সেই কিটোন সে বাধ্য হয়ে খায়। সেটা কিন্তু পিওর খাবার না। সে যখন নিতান্ত বাধ্য হয়ে যায় তখন সে কিটোন খায়। কিন্তু ব্রেনের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে গ্লুকোজ।
তাহলে আমরা যখন পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি বা পরীক্ষার হলে যাব তখন যে খাবারগুলোর মধ্যে গ্লুকোজ সমৃদ্ধ আছে তা ব্রেনকে দেবো। এবং সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সকালবেলা দিলে।
সকালবেলা একদম ভরপেট সুন্দর পুষ্টিকর খাবার খেলাম, সারাদিন সুন্দর পড়াশোনা করলাম, পড়াশোনা গোছাতে সাহায্য করলাম, ব্রেন সারাদিন খেলো, পড়াশোনা ঢোকাল। রাত্রিবেলায় ঘুমাও এবার। ব্রেনটাকে আমরা রেস্ট দিলাম।
সকালবেলা এসে আবার শুরু করলাম। তাহলে আমাদের পরীক্ষার আগে কী করতে হবে? গ্লুকোজ জাতীয় মানে শর্করা জাতীয় খাবার-দাবারগুলো বেশি বেশি করে খাব।
অল্প পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবার
আরেকটা জিনিস দরকার সেটা হচ্ছে ফ্যাট। ফ্যাট কেন লাগবে? ফ্যাট হচ্ছে আমরা বললাম না, প্লাস্টিকের যে কাভারিং এটার শিটটা ফ্যাট দিয়ে তৈরি হয়।
এখন যদি আমাদের ফ্যাট না থাকে তাহলে কাভারিং তো থাকবে না। তখন শর্ট সার্কিট হবে। কাভারিংটা যেন ঠিক থাকে, মজবুত থাকে সেজন্যে আমাদেরকে ফ্যাট জাতীয় খাবার-দাবারও কিছু পরিমাণে খেতে হবে। তবে খুব বেশি নেয়া যাবে না।
ব্রেনের তথ্যের আদান-প্রদানে দরকার প্রোটিন জাতীয় খাবার
আরেকটা হচ্ছে প্রোটিন জাতীয় খাবারদাবার। প্রোটিন লাগে কিসে? এই যে আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার অর্থাৎ তথ্যের আদান-প্রদানের জন্যে লাগে কিছু প্রোটিন।
নিউরোট্রান্সমিটার তৈরির জন্যে ভিটামিনস আর মিনারেলস
নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হওয়ার জন্যে আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লাগে। সেটা হচ্ছে, ভিটামিনস আর মিনারেলস। প্রোটিন খেলাম, কার্বোহাইড্রেড খেলাম, ফ্যাটও খেলাম। কিন্তু আমরা ভিটামিনস আর মিনারেলস খেলাম না তাহলে কী হবে?
ভিটামিনস যেমন ভিটামিন এ, ই, সি, বি-কমপ্লেক্স। এগুলো যদি না থাকে তখন এই নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হবে না। আর যদি নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি না হয় তথ্যের আদান-প্রদান হবে না।
তথ্যের আদান-প্রদান না হলে পরে কি আমাদের ডালপালা গজাবে? ডালপালা গজাবে না। তাহলে তো স্মৃতিশক্তি কই! আমাদের কোনোকিছু মনে থাকতে চাইবে না। ঐ যে বলে না, উহ! কী জানি পড়লাম, ভুলেই গেলাম। কিছুক্ষণ পর পর মনে থাকে না পরীক্ষার হলে তাই না। পরীক্ষার আগে মনে থাকে? মনে থাকতে চায় না।
কেন মনে থাকতে চায় না? একটু যদি খেয়াল করি, আমাদের খাবার-দাবারের মধ্যে সমস্যা তাই না? আমরা কিন্তু শাক-সবজি ফল-মূল এবং ভিটামিন মিনারেলস যুক্ত খাবার-দাবার খাই না।
এবং পরীক্ষার আগে অনেকে খাবার-দাবার বাদ দিয়ে দেই। খাবার খাওয়া কমিয়ে দেই। খাবারই খেতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় যেন সময় লস হয়ে যাবে নষ্ট হয়ে যাবে। এ সময় পড়ি। এরকম অনেকে করেন।
আর অনেকজনের পড়ার চিন্তাভাবনা থাকে, ধুর! পড়বনে! পরীক্ষার আগে আগে একটু বিরিয়ানি টিরিয়ানি খাই। খেয়ে একদম ঠিক ঠাক। তাহলে কী করতে হবে? মাঝখান থেকে কী চলে গেল? ভিটামিনস আর মিনারেলস চলে গেল। কিন্তু ভিটামিন মিনারেলস ছাড়া নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হবে না। আর নিউরোট্রান্সমিটার না হলে আমাদের তথ্য আদান-প্রদান হবে না।
ব্রেনের খাবার কী?
ব্রেনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে- গ্লুকোজ। ফ্যাট এবং প্রোটিন খাব প্রচুর। ভিটামিনস আর মিনারেলসও খাব। এতে খুব মজবুত এবং খুব শক্তিশালী নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি হয়। ব্রেনের মধ্যে তথ্য দেবে নিউরোট্রান্সমিটার যা সাঁই করে আরেকজনকে তথ্য দিয়ে দেবে। এরপরে হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাব।
কোন প্রোটিন খাব?
প্রোটিন খাবারের মধ্যে পরীক্ষার আগে এবং পড়াকালীন সময় কিছু রেস্ট্রিকশন আছে। সেটা হলো যে আমরা মাছের তেল এখানে থাকে আনসিচুরেটেড ফ্যাটিএসিড। এটা কিন্তু কাভার তৈরি করে। ঐ যে বললাম কারেন্টের তারের কাভার করে হচ্ছে মাছের তেল।
সামুদ্রিক মাছ হলে তো কথাই নাই। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে। ওমেগা থ্রি থাকে। এটা ব্রেনের জন্যে খুব ভালো। আমরা এই খাবারটা খাব।
ছোট মাছ আমরা প্রচুর পরিমাণে খেতে পারি। যত ছোট মাছ খাব আমাদের ভিটামিন এ আছে। ভিটামিন এ তো আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াবেই এবং ব্রেনের কর্মক্ষমতাও বাড়িয়ে দেবে।
আর যেটা খেতে পারি সেটা হচ্ছে টমেটো জাতীয় খাবার-দাবার।
বিরিয়ানি যদি আমরা খাই, খেতে ইচ্ছা করে না, আম্মু যদি একটু রান্নাবান্না করে দেয় বিরিয়ানি খেতে তো অনেকের অনেক পছন্দ করে, অনেকে আবার ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেতে খুব ভালো লাগে তাই না। চিকেন ফ্রাইট্রাই খেতে ভালো লাগে, আরেকজনের বার্গার খেতে ভালো লাগে। এই খাবারগুলো খেলে পরে কী সমস্যা?
আমরা যত তৈলাক্ত খাবার খাব, খেলে পরে গরম লাগবে। আমরা যখন বিয়ে বাড়িতে একদম খাওয়া-দাওয়া করি তারপরে একটু গরম লাগে না? একটু। ঠিক সেই ঘটনাই ঘটে আমাদের ব্রেনের ভেতর।
আমরা যখন একদম তৈলাক্ত জাতীয় খাবার-দাবার, খুব স্পাইসি খাবার-দাবার খাই তখন আমাদের ব্রেনের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে অক্সিডেন্ট মানে ফ্রি র্যাডিকেলস তৈরি হয়। প্রচুর এনার্জি তৈরি হয়ে যায় ব্রেনের ভেতরে। তখন ব্রেনের খুব গরম লাগতে থাকে। তখন বলে যে আমি আর পারছি না এত গরমের মধ্যে আমি কাজ করতে পারব না। কাজ করা তখন সে বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু পরীক্ষার আগে যদি মাথাকে আমি গরম বানাই তাহলে কি হবে? সব তো শেষ। তাহলে আমাদের কী করতে হবে? তখন মাথাকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
সুতরাং আমরা তখন বিরিয়ানি জাতীয় খাবার-দাবার মাংস জাতীয় খাবার-দাবার যেমন খাসির মাংস গরুর মাংস, এই জাতীয় খাবার-দাবার একদম পুরো বর্জন পরীক্ষার মধ্যে এগুলো খাওয়া নিষেধ।
ব্রেনের এসি হচ্ছে টমেটো
কী খাব তাহলে? এরকম তাপমাত্রা তৈরি করে এরকম খাবারদাবার যেন তৈরি না হয়ে যায়। একটা এসি জাতীয় খাবারদাবার তৈরি করে ব্রেনকে পাঠাতে হবে। সেই ব্রেনের এসিটা কি? ব্রেনের এসিটা হচ্ছে টমেটো। টমেটোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। অক্সিডেন্ট মানে হচ্ছে এটা তাপমাত্রা তৈরি করার জন্যে ফ্রিরেডিকেল বলি আমরা মানে শক্তি। সেটাকে কমানোর জন্যে আমরা কী করতে পারি? প্রচুর পরিমাণে টমেটো খেতে পারি।
নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে ভিটামিন ‘কে’, ‘সি’ এবং ‘ই’
আরেকটা হচ্ছে ভিটামিন কে। ব্রোকলিতে আছে এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার-দাবারের মধ্যে ভিটামিন কে আছে। আমরা ভিটামিন ‘কে’ খেতে পারি। ভিটামিন কে ‘কি’ করবে? ঐ নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে এবং ব্রেনকে সতেজ করতে এবং ব্রেনের কানেকশন তৈরি করতে খুব ভালো সহায়তা করবে।
আরেকটা হচ্ছে যে, আমরা ভিটামিন ই জাতীয় খাবার-দাবার খাব। ভিটামিন ই-ও হচ্ছে আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে।
আর ভিটামিন সি জাতীয় খাবারদাবার খাব। ভিটামিন সি কী করে? ভিটামিন সি নিউরোনকে সতেজ করবে, নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে ব্রেনের এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তার মানে ব্রেনকে উত্তপ্ত হতে দিবে না ব্রেনকে গরম হতে দিবে না। ঠিক আছে?
আর যে-কোনো শস্য জাতীয় খাবারদাবার আমরা খেতে পারি। বিশেষ করে লাল চাল এবং লাল আটা। এ ধরনের খাবার-দাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে।
তো এই খাবারগুলো ব্রেনের নিউরোনটাকে অনেক বেশি সতেজ রাখে। সুতরাং আমরা শস্যজাতীয় খাবার-দাবার খাব।
ব্রেনকে খুশি করতে ডিম
ব্রেনের জন্যে আমাদের কী কী আছে? ব্রেনটাকে যদি আমরা খুব সতেজ রাখতে চাই তাহলে আমরা ডিম খেতে পারি। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এরপর মাছ খাব কিছু পরিমাণে মাংস খাব। কারণ মাংসের মধ্যে আয়রণ আছে। আয়রনযুক্ত খাবার-দাবার আমরা খাব।
আর হচ্ছে দু্ধ এবং দুধ জাতীয় খাবার-দাবার খাব। ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম হচ্ছে নিউরোনের যে দেয়াল সেটাকে মজবুত করে।
আর আমরা আনলিমিটেড সবুজ শাকসবজি খাব। যে যত সবুজ শাকসবজি খাব তার নিউরোট্রান্সমিটার তত বেশি স্ট্রং হবে তার স্মৃতিশক্তি তত প্রখর হবে এবং পরীক্ষা অনেক সহজ হবে।
আমরা যেটা করব যে, শস্যদানা জাতীয় খাবারদাবার আমরা আনলিমিটেড খাবো সমস্যা নাই। কিন্তু যখন আমরা ফ্রুটস খাব- মাছ পরিমিতভাবে খুব বেশি মাছ খাওয়া খুব বেশি মাংস খাওয়া যাবে না। আমরা দুধ খাব।
আর যেটা হচ্ছে একদম চিনি জাতীয় খাবার-দাবার কাটা। তাই তো আমাদের ফুড পিরামিডের ওপরে এটা নাই। আমাদেরটা হচ্ছে এরকম অর্ধেক। তাই তো ওপরেরটা নাই।
এখন যদি আমরা আমাদের আলোচনাটাকে সামারি করি। তাহলে যেহেতু আমাদের সামনে পরীক্ষা বা যাই হোক আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই আমরা অগ্রগামী। আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমাদের ব্রেন। আমরা আমাদের ব্রেনটাকে নিয়ে আগাতে চাই।
ব্রেনকে যত আমি আনন্দে রাখব, যত আমি কষ্ট দেবো না ব্রেন আমাকে আমার বিপদের দিনে সবসময় সাহায্য করবে। সুতরাং আমরা ব্রেনের যত্ন নেব।
লেখক: শিশু বিশেষজ্ঞ ও পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট, আদদ্বীন উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এসএ/