কর্মক্ষেত্রে অনুসরণীয়-বর্জনীয়
প্রকাশিত : ১৫:২৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩
ভালো মানুষের ভূষণ শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচারী মানুষই ভালো মানুষ। আসলে যা-কিছু ভালো, যা-কিছু কল্যাণকর তা-ই শুদ্ধ। যা শুদ্ধ ও কল্যাণকর তা-ই ধর্ম আর যা অশুদ্ধ ও অকল্যাণকর তা-ই অধর্ম। ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার।
আমাদের ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ এখান থেকে অর্থ উপার্জন করে জীবন চালাতে হয়। দুরাচারের মাধ্যমে অর্জিত আয় কখনই কল্যান বয়ে আনবে না।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কর্মক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় অনুসরণ করবেন আর কোনগুলো বর্জন করবেন....
কর্মক্ষেত্রে অনুসরণীয়
> নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে দশ মিনিট আগেই কর্মস্থলে উপস্থিত হোন।
> বাইরে অফিসিয়াল কোনো কাজ না থাকলে অফিসে প্রবেশের ও অফিস থেকে বের হওয়ার নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করুন।
> মধ্যাহ্ন বিরতিতে বেশি সময় নেয়া, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া প্রায়শই অফিস শুরুর পরে আসা, নির্ধারিত সময়ের আগে অফিস ত্যাগ করা−এ ধরনের আচরণ বর্জন করুন।
> নির্দিষ্ট বিরতির সময় ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে অফিসের বাইরে যাবেন না। কোথাও গেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট চাকরিবিধি মেনে চলা
> অফিসে নির্দিষ্ট ড্রেস কোড অনুসরণ করুন। ড্রেস কোড না থাকলেও নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মার্জিত, ভদ্র ও রুচিসম্মতভাবে উপস্থাপন করুন। মাথার চুল পরিপাটি রাখুন।
> কর্মক্ষেত্রের ধরন অনুযায়ী মানানসই শালীন পোশাক পরিধান করুন। কেননা আপনার পোশাক শুধু আপনাকেই নয়, তা আপনার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকেও তুলে ধরে।
> অফিসে আইডি কার্ড যথাসম্ভব দৃশ্যমানভাবে ধারণ করুন।
> হাঁটার সময় বেশি শব্দ হয় এমন জুতো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কড়া ঘ্রাণের সুগন্ধির চেয়ে হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
> সহকর্মীর পোশাক ও সাজসজ্জা নিয়ে আপত্তিকর-বিব্রতকর মন্তব্য করবেন না।
> সহকর্মীর ই-মেইল, এসএমএস বা চিঠিপত্রের প্রত্যুত্তরে তৎপর হোন। ফোনে আপনাকে না পেলে প্রথম সুযোগেই কল ব্যাক করুন।
> অফিসের কাজে হলেও দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোনালাপ এড়িয়ে চলুন। এ-ক্ষেত্রে ফোন ও ই-মেইল ব্যবহারের শুদ্ধাচারগুলো মেনে চলুন।
> জরুরি কাজের সময় অন্য ডিপার্টমেন্ট বা টিমের কেউ কোনো সাহায্য চাইলে তা করার আগে আপনার লিডারের অনুমতি নিন।
> অন্য ডিপার্টমেন্ট বা টিমের কারো সহযোগিতা আপনার প্রয়োজন হলে আগে তার টিম লিডারের সাথে কথা বলুন।
> অন্য ডিপার্টমেন্ট বা টিমের কারো সহযোগিতা আপনার প্রয়োজন হলে আগে ফোনে/ সরাসরি কথা বলে সময় চেয়ে নিন। তাদের জরুরি কর্মমুহূর্তে আচমকা হাজির হয়ে কাজ ধরিয়ে দেবেন না/ কাজের কথা শুরু করবেন না।
> সঠিক তথ্য-উপাত্তের জন্যে প্রত্যক্ষ উৎস বা মূল দায়িত্বশীলের সাথে যোগাযোগ করুন।
> চাকরি ছাড়তে হলে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী আগেই কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
কর্মক্ষেত্রে বর্জনীয়
> অন্যদের কাজের ব্যাপারে অহেতুক কৌতূহলী হওয়া।
> অফিসে আগতদের সামনে উচ্চকণ্ঠে নিজেদের মধ্যে কথা বলা। কাউকে ডাকতে হলে নাম ধরে চিৎকার করা।
> ব্যক্তিগত আলাপ ও হাসাহাসি করা।
> সহকর্মীদের সামনে একা কিছু খাওয়া। ‘আজ কী দিয়ে খেয়েছেন’ জিজ্ঞেস করা।
> আপ্যায়নে অফিসের ফান্ড থেকে অতিরিক্ত খরচ করা।
> অহেতুক শব্দ করে অন্যের বিরক্তির কারণ হওয়া।
> কাজ শেষে ফাইল- ব্যবহৃত জিনিস যথাস্থানে না রাখা।
> অফিসের গাড়ি, ফোন বা কোনোকিছু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা।
> অপ্রয়োজনে লাইট ফ্যান এসি কম্পিউটার চালিয়ে রাখা।
> অন্যের কাছে নিজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা।
> এ প্রতিষ্ঠানে আমিই একমাত্র কাজ করি আর কেউ করে না− এই মানসিকতা পোষণ করা।
> অপরের অর্জন-আইডিয়া নিজের বলে প্রতিষ্ঠা করা ও কৃতিত্ব নেয়া।
> কর্মপরিমণ্ডলে বয়সে ছোট-বড়, ঊর্ধ্বতন-অধস্তন পদ নির্বিশেষে যে-কাউকে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করা।
> যে তথ্য দেয়া যাবে না তা দেবো বলে অন্যকে আশায় রাখা।
> অন্য ডিপার্টমেন্ট বা অন্যের কাজ নিয়ে সর্বদা সমালোচনা করা।
> প্রাতিষ্ঠানিক-সাংগঠনিক আলাপে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা।
> কোনো সহকর্মীর দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা সেই বিষয় নিয়ে অন্য কারো সাথে কথা বলা।
> সহকর্মীর কাজের জায়গায় উঁকি দেয়া। কেউ কম্পিউটারে কী দেখছে, কী লিখছে, কী বই-ডকুমেন্ট পড়ছে−এ ব্যাপারে অতি-আগ্রহ পোষণ করা। সহকর্মীর অনুমতি না নিয়ে তার কোনো কাগজ ধরা বা পড়া।
> সহকর্মীর ব্যস্ততা দেখেও এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই বা জরুরি নয়−এমন বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে যাওয়া।
> কাজ ফেলে অন্যের ডেস্ক বা ক্যান্টিনে গালগল্পে-আড্ডায় মেতে ওঠা।
> প্রকাশ্যে- টয়লেটে ধূমপান করা।
এমএম/