ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ে সতর্কতা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিয়ে একটি প্রয়োজন। বিয়ে একটি চুক্তি। শারীরিক মানসিক আবেগিক ও সামাজিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি।

এই চুক্তি সম্পাদনে দুই পরিবারের ভূমিকা যত সৌহার্দ্যমণ্ডিত হবে, পারিবারিক জীবনে আনন্দ-উচ্ছলতা তত বাড়বে।

১. সমসামাজিক, সমসাংস্কৃতিক, সম-আর্থিক ও সমধর্মীয় পরিমণ্ডলে বিয়ে করুন।

২. মা-বাবার সম্মতি ও দোয়া ছাড়া বিয়ে কখনো সুখের হয় না। সেখানে সবসময় একটা শূন্যতা থেকে যায়।

৩. যত ভালো লাগাই থাকুক−বিয়ের আগে যৌনাচার, একসাথে থাকা বা লিভ টুগেদার একটি বিকৃত চর্চা। এ ধরনের চর্চা পরিণামে হতাশা বাড়ায়, পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।

৪. জোর করে বিয়ে দেয়া খুন করার চেয়েও বড় অপরাধ। বিয়ের ব্যাপারে ছেলে/ মেয়ের শারীরিক বা মানসিক অনাগ্রহ বা অক্ষমতা পরবর্তীকালে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।

৫. পাত্র/ পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে মুরুব্বি/ আত্মীয়-পরিজনের সাহায্য নিন, পরামর্শ করুন। তবে নিজে পাত্র/ পাত্রীকে সরাসরি দেখুন এবং কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিন।

৬. পাত্র/ পাত্রীর রূপ, সম্পদ ও সামাজিক অবস্থানের চেয়েও গুরুত্ব দিন সুশিক্ষা, আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। খোঁজ নিন, তিনি জুয়া মাদক ঋণ ও ভার্চুয়াল ভাইরাস-সহ যে-কোনো ধরনের আসক্তি থেকে মুক্ত কিনা।

৭. নবীজী (স) বলেছেন, ‘কোনো নারীকে চারটি যোগ্যতার জন্যে বিয়ে করা যায়। ১. সম্পদ, ২. বংশমর্যাদা, ৩. রূপ, ৪. গুণ। এমন নারী খোঁজ করো যার গুণ আছে। অন্য বিবেচনায় বিয়ে করলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

৮. বিয়ে করার সাথে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শারীরিক-মানসিক ও আইনগতভাবে সাবালক হলে আপনি আপনার প্রয়োজনমতো সময়ে বিয়ে করতে পারেন।

৯. বিয়ের সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো করবেন না। পাত্রপক্ষ/ পাত্রীপক্ষের লৌকিক আচরণ দেখেই মুগ্ধ হবেন না। সব ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

১০. পাত্র/ পাত্রীর নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশী হিসেবে কেউ আপনার কাছে পাত্রী/ পাত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনি যতটুকু জানেন, ততটুকুই বলুন। অতিপ্রশংসা বা অহেতুক নিন্দা- কোনোটিই করবেন না।

১১. পাত্র/ পাত্রীর বায়োডাটা ও ছবি দেখেই পছন্দ বা নাকচ করবেন না। অভিভাবকদের কেউ তার সাথে দেখা করে এলে সে অভিজ্ঞতা শুনুন। তারপর নিজে দেখা করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নিন। ছবি আর কাগজের তথ্যের চেয়ে বাস্তব মানুষটির সাথে সাক্ষাৎ আপনার সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করবে।

১২. পাত্র/ পাত্রীর বায়োডাটা দেখে উভয়ের সম্মতি থাকলে এপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে সামনা সামনি দেখার ব্যবস্থা করুন। হঠাৎ করে পাত্র বা পাত্রীর কর্মক্ষেত্রে/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাকে অপ্রস্তুত করবেন না।

১৩. পাত্র/ পাত্রী তার নিজের বাসায় মানুষ হিসেবে কেমন, এ বিষয়ে জানতে তার নিকটাত্মীয়/ প্রতিবেশীর কাছে খোঁজ নিন।

১৪. বিয়ের কথা পাকা হওয়ার আগে দেখাদেখির খবর যত কম মানুষ জানবে তত ভালো।

১৫. বিয়ের আগেই নিজ উপার্জনের পরিমাণ এবং আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে হবু স্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলে তাকে সঠিক ধারণা দিন।

১৬. যৌতুক দেয়া ও নেয়া অপরাধ। যৌতুক নেয়া কাপুরুষতা। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন প্রত্যেক পুরুষের উচিত যৌতুক বর্জন করা।

১৭. দেনমোহর পাত্রের সাধ্যের মধ্যে নির্ধারণ করুন। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। তাই দাম্পত্য জীবন শুরুর আগে দেনমোহর পুরোপুরি শোধ করুন। বাস্তব কারণে সম্ভব না হলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে তা পরিশোধ করুন।

১৮. বিয়ের নিমন্ত্রণ মুখে জানানোই যথেষ্ট। সেইসাথে টেক্সট মেসেজ বা ই-মেইলও করে রাখতে পারেন। আর কার্ড করতে চাইলে পরিমিত খরচ করুন এবং তা সরাসরি সাক্ষাৎ করে দিন।

১৯. দাওয়াত করলে পুরো পরিবারকে করুন। পরিবারের একজন/ দুজন বা শুধু স্বামী-স্ত্রীকে দাওয়াত দেয়ার মানসিকতা পরিহার করুন। নিজেরাও পারতপক্ষে এ ধরনের দাওয়াতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

২০. বিয়ের দিনটি হলো দায়িত্বপূর্ণ দীর্ঘ যাত্রার প্রথমদিন। তাই শুধু বিয়ের দিনটির সব আয়োজন, জল্পনা-কল্পনায় বিভোর না হয়ে বিবাহিত জীবন কীভাবে সুন্দর করা যায় তা নিয়ে ভাবুন।

২১. বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের উপস্থিতি, অতিথি আপ্যায়ন ও যাবতীয় আয়োজনে নির্ধারিত সময়সূচি অনুসরণ করুন।

২২. বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় জাঁকজমক করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হবেন না এবং অপচয় করবেন না। মনে রাখুন, যে বিয়েতে অপচয় ও হইহল্লা যত বেশি সে বিয়েতে সুখের পরিমাণ তত কম।

২৩. বিয়েতে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অর্থের অপচয় না করে দুপক্ষ মিলে যৌথ খরচে একটি অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করুন।

২৪. বিয়ে জীবনের একটি সহজ-স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু মিডিয়া, পণ্য আগ্রাসন, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কুসংস্কার একে করেছে জটিল ও ভারাক্রান্ত। সুখী হতে হলে অপ্রয়োজনীয় লোকাচার ও সংস্কার বর্জন করুন।

২৫. বিয়েতে অঢেল খরচ করলে সমাজের কাছে মাথা উঁচু হবে আর না করলে ‘ছোট মনের’ পরিচয় ফুটে উঠবে, সবাই খোঁটা দেবে- এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

২৬. বিয়ের অনুষ্ঠান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম ও ফটোগ্রাফারের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেবেন না। বর-কনে শুধু নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত না থেকে অতিথিদের শুভকামনা ও দোয়া নিতে মনোযোগী হোন।

২৭. অনুষ্ঠানের ভেন্যু নির্বাচনে মেহমানের সংখ্যা বিবেচনা করুন।

২৮. অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণপত্রের সময়সূচি অনুসরণে আন্তরিক হোন।

২৯. আত্মীয়স্বজন বিয়েবাড়িতে রাত্রিযাপন করলে তাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখুন।

৩০. অতিরিক্ত মেহমান চলে এলে অস্থিরতা বা বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। একে বাড়তি বরকত বা আশীর্বাদ মনে করুন।

৩১. বিয়ের অনুষ্ঠানে উভয়পক্ষই নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি অতিথি বা বরযাত্রী নেয়া থেকে বিরত থাকুন। তবে কোনো কারণে অতিথির সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে আগেই মেজবানের সম্মতি নিন।

৩২. সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে স্রষ্টার রহমত সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে প্রাত্যহিক ইবাদত/ উপাসনায় যাতে ছেদ না পড়ে, সেদিকে নজর রাখুন।

৩৩. বিয়েতে উপহার না দেয়ার জন্যে নিমন্ত্রিতদের অনুরোধ করুন। তারপরও কেউ উপহার নিয়ে এলে তা এমন কাউকে দিয়ে দিন যার প্রয়োজন আছে।

৩৪. বিয়ের আনন্দের সাথে মিষ্টির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে ও অতিথি আপ্যায়নে কাউকে ‘মিষ্টি’ নামের ‘বিষ’ না খাইয়ে মৌসুমি ফল, খেজুর বা বাদাম পরিবেশন করুন।

৩৫. কাবিন/ আকদ হয়ে যাওয়ার পর বর-কনের একসাথে থাকতে কোনো বাধা নেই। তাই পরে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা থাকলেও কাবিন হয়ে গেলে কনেকে (বরপক্ষের) বাড়িতে নিয়ে আসুন।

৩৬. বিয়ে হচ্ছে না বলে কাউকে খোঁটা দেবেন না, কটুকথা শোনাবেন না। তার প্রতি সমমর্মিতা পোষণ করুন।

৩৭. বিয়ে বিলম্বিত হচ্ছে বলে হতাশ হবেন না। হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। চেহারা গুণ যোগ্যতা−সবমিলিয়ে আগে নিজেকে নিজে শ্রদ্ধা করুন। এতে অন্যদের কাছেও আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

৩৮. বিয়ের অনুষ্ঠানে অবিবাহিত কাউকে ‘বিয়ে করেন নি কেন/ বিয়ে হচ্ছে না কেন’−এ ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করবেন না। উপযুক্ত পাত্র/ পাত্রীর খোঁজ জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলুন।

৩৯. বর-কনের গায়ের রং, চেহারা, উচ্চতা, বয়স, ডিগ্রি, সামাজিক মর্যাদা, সাজসজ্জা, পোশাক ও আপ্যায়নের ভুলত্রুটিসহ সব ধরনের নেতিবাচক আলাপ থেকে বিরত থাকুন।

৪০. কারো বিয়ের দাওয়াত না পেলে পরবর্তী সময়ে দেখা হলে কখনো রসিকতা করেও এ প্রসঙ্গ তুলবেন না। বরং বিয়ের খবরে যে খুশি হয়েছেন, তা বলুন। নবদম্পতির জন্যে দোয়া করুন।

৪১. বিয়ের পরে স্বামী/ স্ত্রী শুধু নিজেদের মধ্যে নয়, দুই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও সময় কাটান। তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করুন। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর হবে।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি