আয়ু বাড়াতে চাইলে মেডিটেশন করুন
প্রকাশিত : ১০:২০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৪৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮
মেডিটেশন সচেতনভাবে দেহ মন এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করার আধুনিক বৈজ্ঞানিক এবং সহজ প্রক্রিয়া। আসলে মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা মনকে একাগ্র করি, নির্দিষ্ট কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে দূরে সরিয়ে আনি দৈনন্দিন জীবনের শত সমস্যা থেকে। এতে মনে আসে শান্তি, ধীরে ধীরে কাজে মনোযোগ বাড়ে, নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসে। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেডিটেশনে করলে আয়ু বাড়ে। সেইসঙ্গে জীবন সুন্দর হয়, আনন্দময় হয়।
আসলে সাধকরা মোরাকাবা বা ধ্যানের মাধ্যমে প্রবল মানসিক শক্তি ও প্রাণবন্ত জীবনের অধিকারী হয়েছেন। তাদের চেহারার ঔজ্জ্বল্য, ত্বকের লাবণ্য, মানসিক বিচক্ষণতা সাধারণ মানুষকে অভিভূত করত। এখনও সাধকদের বয়স বোঝা মুশকিল। আশি বছর বয়সেও তারা অনুভব করেন চল্লিশ বছরের প্রাণময়তা।
সাধকদের এই প্রাণবন্ত জীবনের ওপর আগে অলৌকিকত্ব আরোপ করা হতো। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বৃদ্ধ বয়সেও যে কেউ মেডিটেশন করে দেহের ভেতরের সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, প্রাণবন্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের এক চমৎকার সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকার ১৯৯০ সালের ২৮ এপ্রিল সংখ্যায়।
বিজ্ঞান বিষয়ক বস্তুনিষ্ঠ এ সাময়িকীর এই রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দু’দল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন আপনার আয়ু বাড়াতে পারে এবং জীবনের মান উন্নত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, তারা দেখেছেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি শিথিলায়ন পদ্ধতি হিসেবে দিনে দু’বার ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন করেন, তাহলে প্রাণবন্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ুও বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইওয়ার ফেয়ারফিল্ডের মহাঋষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস আলেক্সান্ডার ও হাওয়ার্ড শ্যান্ডলার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে নিয়ে ৭৩টি রিটায়ারমেন্ট হোম-এর বাসিন্দাদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। হোম-এর বাসিন্দাদের গড় বয়স ছিল ৮১ বছর। তারা বয়সের ওপর তিনটি শিথিলায়ন বা মেডিটেশন পদ্ধতির তুলনামূলক প্রভাব পর্যালোচনা করেন।
আলেক্সান্ডার ও তার সহযোগী গবেষকরা অপরিকল্পিতভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনটি পদ্ধতি থেকে একটি করে মেডিটেশন বা শিথিলায়ন পদ্ধতি শিক্ষা দেন। চতুর্থ গ্রুপকে কোনও শিথিলায়ন পদ্ধতি শেখানো হয়নি। অন্য তিনটি গ্রুপের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ পদ্ধতিতে মেডিটেশন করতে থাকেন।
গবেষকরা ৩ মাস পর এই ৪ গ্রুপের লোকদের অবস্থা জরিপ করেন। তারা দেখতে পান, ৪টি গ্রুপের মধ্যে যারা ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন করছিলেন, তাদেরই সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে। গড়ে তাদের সিসটোলিক রক্তচাপ ১৪০ থোকে ১২৮-এ নেমে এসেছে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, উচ্চ রক্তচাপ নেমে এলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। আর হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে মৃত্যুর একটি বড় ধরনের কারণ।
মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন গ্রুপের সবাই বেঁচে আছে। অপরপক্ষে অন্য ৩টি গ্রুপের প্রতিটি গ্রুপ থেকেই বেশ কিছু সদস্য মারা গেছেন। রিটায়ারমেন্ট হোমের ৪৭৮ জন বাসিন্দার মধ্যে যাদের এই গবেষণার আওতায় আনা হয়নি, এই সময় তাদের মৃত্যুর হার ছিল শতকরা ৬২ দশমিক ৫ ভাগ।
আরও অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক মনোদৈহিক প্রক্রিয়া, যেমন রক্তচাপ, দৃষ্টিশক্তি, কগনিটিভ ফাংশনিং, ডিয়াস হরমোন-এর মাত্রা ইত্যাদির অবনতি ঘটতে থাকে। কিন্তু ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশনে এই প্রক্রিয়াগুলোর উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। উল্লেখ্য, ডিয়াস হরমোন উৎপন্ন হয় এড্রিনাল গ্লান্ডে। তারুণ্যে এই হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা কমতে থাকে।
২০০৮ সালে গবেষক শর্মা ও তার সহকর্মীরা এক গবেষণায় দেখেন, নিয়মিত মেডিটেশন দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা বয়সের ছাপ ফেলাকে রোধ করে এবং লিম্ফোসাইট নামে দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর আয়ু বাড়িয়ে দেয়।