কেন জনপ্রিয় হচ্ছে যোগ ব্যায়াম?
প্রকাশিত : ১২:৩২, ২৯ জুন ২০১৯
যোগ দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এর কিছু কারণও রয়েছে। তবে আগে জেনে নেই যোগ কি? ‘ইয়োগা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘যুবক’ বা ‘যৌবন’। এটি মূলত সংস্কৃত শব্দ।
বাংলায় ‘যোগ’। যার অর্থ গ্রন্থিভূক্ত করা বা সমন্বয় সাধন করা। কীসের সমন্বয় সাধন? অর্থাৎ মানুষের দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার কৌশল। এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত প্রকাশ করেছেন।
কেউ বলেছেন আত্মা বা মন ও শরীরকে একত্র করার কৌশলকে ইয়োগা বা যোগ বলে। হটযোগ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী দেহযন্ত্রগুলোর কর্মক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করে স্নায়ুতন্ত্রের পূর্ণ পরিচর্যার মাধ্যমে মনোদৈহিক সম্পর্কসূত্রগুলোকে প্রকৃতিগতভাবেই একাত্ম করা।
এর মৌলিক ধারণা হচ্ছে ‘শরীরমাদ্যং খলু ধর্ম সাধনম্। ‘হঠযোগ’ হঠাৎ কোন আবিষ্কার নয়। প্রাচীন মুনি ঋষিরা যোগীশ্বর মহাদেবকে হঠযোগের ৮৪০০০ আসনের প্রকাশক বলে স্বীকার করে নিয়ে তাঁর ধ্যানে এই দুঃসাধ্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করতেন।
যোগ কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে?
প্রতিটি বিষয় জনপ্রিয় হওয়ার জন্য যেমন কিছু কারণ থাকে যোগ ব্যায়াম জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এরও বেশ ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে যোগের মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য জানতে এবং বুঝতে সাহায্য করে।
একবার এক কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে এক মাস্টারমশাই ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি যদি আমার মাথা নিচে আর পা উপরে করে দাঁড়াই, তোমরা দেখবে আমার মুখের রং একেবারে লাল হয়ে যাচ্ছে, কেননা আমার শরীরের সমস্ত রক্তই তখন মাথায় উঠে যাবে। অথচ আমি যখন আমার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই, তখন সেরকম কিছুই হয় না। কেন?’
একটা ছোট্ট ছেলে বলল, ‘পায়ের ভেতরটা খালি নয়, তাই।’ আপনার শরীর হলো অনেকটা ব্যারোমিটারের মতই। এটি কীভাবে দেখতে হয় তা যদি আপনি জানেন তবে এটি আপনার সম্পর্কে সব কিছুই বলে দেবে। নিজেকে নিয়ে আপনার যত উদ্ভট কল্পনা রয়েছে, সে সব নয়।
বরং বলে দেবে আপনার সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটুকুই। মন বিশাল বড় প্রতারক। প্রতিদিনই আপনার মন আপনার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। যদি আপনি জানেন শরীরকে কীভাবে পড়তে হয়, তবে শরীরই আপনাকে সবকিছু সঠিকভাবে বলে দেবে-একভাবে বলতে গেলে, আপনার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সবকিছু।
সে জন্যই প্রাথমিকভাবে যোগ শরীর থেকেই শুরু হয়। সকালে উঠে প্রথমেই একবার মাথার ওপর ভর করে দাঁড়ালে, অন্তত এটুকু বুঝে যাবেন আপনার মাথা কতটা খালি, আর কতটাই বা ভর্তি।
যোগ, তাহলে, সর্বত্র এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেন? অনেক কিছুই সময়ের চলের সঙ্গে এসেছে আর পরিবর্তনের হাওয়ার সঙ্গে চলেও গেছে। কিন্তু যোগ হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে এবং এখনও তার প্রয়োজনীয়তা ধরে রেখেছে। যদিও হয়তো বহুক্ষেত্রেই খুবই অপরিণতভাবে এর শিক্ষাপ্রদান করা হয়েছে এবং অনেক সময় হয়তো বিকৃতভাবেও এটা শেখানো হয়েছে, তবু এটা রয়ে গেছে। কেন? এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার একটা কারণ অবশ্যই শিক্ষাপ্রদানের বহুল বিস্তার।
এই গ্রহে বুদ্ধিমত্তার হার আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। তাই, স্বাভাবিকভাবেই, বুদ্ধি যত ধারাল হয়েছে মানুষ সবকিছুর যুক্তিগ্রাহ্য সমাধানের দিকে ঝুঁকেছেন। তারা যতবেশি যুক্তি-নির্ভর হয়েছেন, বিজ্ঞানের ওপরও তত বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে তার ফলাফল হিসেবে এসেছে প্রযুক্তি।
বিশ্বে বুদ্ধির প্রয়োগ এবং কাজকর্ম যত জোরাল হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তত বেশি করে যোগের শরণাপন্ন হবে এবং মানুষের কল্যাণে এটি সব থেকে জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠবে।
আপনার মন যেটা বলে সেটা সঠিকভাবে আপনি কখনই বুঝবেন না। কখনো মনের বক্তব্য খুব যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক লাগতে পারে। আবার অন্য কোনো পরিপ্রেক্ষিতে সেটাই বেঠিক মনে হতে পারে।
বিশেষ করে, আপনার উপলব্ধির বর্তমান সীমার বাইরে কোনো কিছু বোঝার জন্য মন খুবই বাজে পথপ্রদর্শক। মন বিভিন্ন রকমের পরস্পরবিরোধী বার্তা দিয়ে থাকে, তার ফলে আপনার অসত্যকে সত্য মনে হতেই পারে, এবং যে সত্য আপনার সামনে উদ্ভাসিত রয়েছে সেটাই হয়তো আপনার নজর এড়িয়ে যায়।
এই কারণেই যোগ একটা সর্বাঙ্গীন পথ বেছে নিয়েছে আধ্যাত্মিকতাকে উপলব্ধি করার জন্য-শরীরের মাধ্যমে, শক্তি-সাধনার মাধ্যমে, শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে, আবেগের মাধ্যমে এবং অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। কিন্তু যোগের কোনো পথই বুদ্ধিকে অবলম্বন করে না, কারণ বুদ্ধি সবসময়ই প্রাসঙ্গিক।
বুদ্ধি সবসময়ই তার আশেপাশের পরিস্থিতির গণ্ডীর মধ্যে সীমিত এবং সেই পরিস্থিতির পরিধিকেই সর্বোচ্চ সত্য বলে মনে করে। স্বাভাবিকভাবেই, আমরা শরীরকে বেশি ভরসা করতে পারি। শরীরকে যদি কেবল একটা যন্ত্র হিসেবে দেখতে পারেন, এবং কেবল একটা যন্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন তাহলে এটা একটা অত্যন্ত শক্তিশালী যন্ত্র হয়ে উঠবে। আমাদের বোধগম্যের ভেতরের এবং বাইরের সবকিছুর জ্ঞান এই শরীরের মধ্যেই রয়েছে। শরীর নির্ভরযোগ্য, মন নয়।
মন সবসময় মতবাদের দিকে ঝোঁকে। মন এই ধরনের যুক্তি দেয়, ‘শরীরকে এভাবে দুমড়ে-মুচড়ে হবেটা কি? এভাবে উচ্চতর জ্ঞানলাভ করবে? নাকি স্বর্গে যাবে?’ শরীর কখনই মিথ্যে বলে না। এই শরীরকে যদি উন্নত করেন, যেই অহঙ্কার ও আসক্তিগুলোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন সেগুলো থেকে যদি নিজেকে মুক্ত করেন, যদি এটাকে একটা যন্ত্রের মতন ব্যবহার করতে শেখেন, তাহলে দেখবেন এটা পৃথিবীর অন্যতম অসাধারণ যন্ত্র। এই যন্ত্রটিকে পূর্ণরূপে উপলব্ধি ও সদ্ব্যবহার করতে পারার প্রণালী হলো যোগ।
সূত্র: ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক ও ঈশা ফাউন্ডেশন