ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘কুয়াকাটা অনন্যা পটুয়াখালী সাগরকন্যা’

এম জি আর নাসির মজুমদার

প্রকাশিত : ২২:০৭, ১ জুন ২০২১

‘আমরা পটুয়াখালীতে তো অনেক কিছু করে দিয়েছি। পটুয়াখালী আর খালি নেই। এখন ভরাট হয়ে গেছে, পটুয়াখালী এখন ভরপুর।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিককালে দৃঢ়প্রত্যয়ী উচ্চারিত কথাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দক্ষিণের সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীকে বিশ্ব দরবারে চিনিয়ে দিতে যথেষ্ঠ প্রামাণিক।

প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট পটুয়াখালী আজ সম্ভাবনার একটি আলোকবর্তিকা।

বাঙ্গালি জাতির মুক্তির মহা নায়কের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার অভিষ্ট লক্ষ্যে সতত ছুটে চলা এ দুরন্ত বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের একটি রোল মডেল। পিতার স্বপ্নকে পূরণ করতে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তা অর্জনে প্রতিটি জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে স্ব স্ব জেলার ব্র্যান্ডিং তথা ‘জেলা ব্র্যান্ড বুক’ অবমুক্ত করার এরূপ প্রশংসনীয় ও দূরদর্শী উদ্যোগ দেশ ও বিদেশে সকল মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।

পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পর্যটন স্থানসমূহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পটুয়াখালী জেলার অবিভাবক, জেলা প্রশাসনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও মান্যবর জনাব মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী মহোদয় প্রকাশ করেছেন ‘জেলা ব্র্যান্ড বুক’ এর দ্বিতীয় সংস্করণ। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একটি জনপদের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ আর ভালোবাসা যখন একাট্টা হয়ে যায় তখনই এ কর্ম পরিণত হয় একটি শিল্প বা আর্টে যা পরিণতি পায় অনন্যায়।

‘কুয়াকাটা অনন্যা, পটুয়াখালী সাগরকন্যা’ নামীয় পটুয়াখালী জেলার ব্র্যান্ড বুকটি নিংসন্দেহে নামকরণে সফল। বইটির কভারপেজ খুবই আকর্ষনীয় ও দৃষ্টি নন্দন।

মুক্তির আলোকবর্তিকার মাঝে নিগূঢ় দেশাত্মবোধের পরশ মাখানো তেজোদীপ্ত জাতির পিতার মুখায়ব সংবলিত জন্ম শতবর্ষের নাম-চিত্রটি যেন শ্রভ্রতার দ্যুতি ছড়াচ্ছে। পাশে পটুয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং লোগোটি বইয়ের প্রচ্ছদকে আরও দৃষ্টি নন্দন করেছে। গঙ্গামতির চরে লাল কাঁকড়ার অবাধ ছুটাছুটি, বিশ্ব পর্যটনের বিরল বৈশিষ্ট্য্ একই সৈকত থেকে সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৈকতের সাথে মিতালি, বেলাভূমিতে আচড়ে পড়া ঊর্মির নৈসর্গিক ছবি এসব কিছু মিলে প্রচ্ছদকে করেছে অনন্য ও অসাধারণ।

সৃষ্টিকর্তা কুয়াকাটাকে সাজিয়েছেন অপার কৃপায়। প্রকৃতি যেন সেখানে রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এ অনিন্দ্য সৌন্দর্য কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য। সাগর মাতার কোলে ছোট্ট, শান্ত, ফুটফুটে, স্নিগ্ধ সাগরকন্যা পটুয়াখালী। কুয়াকাটাকে ঘিরে পটুয়াখালীর পর্যটন শিল্প আজ সম্ভাবনার স্বপ্নচুড়ায় বিচরণ করছে। স্বভাবতই ব্র্যান্ডবুকের নাম ‘কুয়াকাটা অনন্যা পটুয়াখালী সাগরকন্যা’ যথার্থ ও পরিপূর্ণ হয়েছে।

‘কোন পর্যটকের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য’ – বইটির সার্বিক তত্বাবধান ও নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মান্যবর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয় জনাব মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরীর বাণীতে উপরিউক্ত বাক্যটির মধ্য দিয়েই পটুয়াখালী জেলার পরিচ্ছন্ন পরিপূর্ণ এবং যথার্থ ব্র্যান্ডিং সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। বইটি প্রকাশে প্রতিটি পাতায় তার রয়েছে আন্তরিকতার কোমল ছোঁয়ায়। ।

বইটি খুলতেই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির পিতাকে স্মরি। পাতা উল্টাতেই দেহ-মন –প্রাণ শিহরণ জাগিয়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর সেই চির অক্ষয় দেশপ্রেমের চেতনা জাগরণী উক্তি- ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙ্গালি হিসেবে যা কিছু বাঙ্গালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস অক্ষয় ভালোবাসা যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে’।

এরপরে রয়েছে জতির আশা আকাঙ্থার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যয়দীপ্ত একটি ছবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়প্রত্যয়ী উক্তিটির মাঝে সোনার বাংলা গড়ার অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলার একটি সম্মোহনী শক্তি। বইটিতে বাংলাদেশ সরকারের উর্ধ্বতন সম্মানিত কর্মকর্তাদের দেয়া বাণীতে জেলা ব্র্যান্ডিং এবং ব্র্যান্ড বুকের আবশ্যকতা স্পষ্টভাবে ফুটে ইঠেছে।

দ্বিতীয় সংস্করণে বইটির কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকখানি। চমৎকার পেপারে ছাপা বইটির গুণগতমান বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। পটুয়াখালীর খুঁটিনাটি সকল বিষয়ের চৌম্বক অংশ 
খুঁজে বের করে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তথ্যবহুল উপস্থাপনায় পটুয়াখালী জেলার উৎপত্তিগত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আছে জেলা প্রশাসনের ইতিহাস। জেলা প্রশাসন একটি জেলার অবিভাবক। আর সেই অবিভাবকত্বকে পাঠকের সামনে একদম পরিপাটি ভাবে তুলে ধরার জন্য বইটি পরিচিতি পেয়েছে জেলা তথ্য ভান্ডার রূপে।

মুক্তিযুদ্ধে পটুয়াখালীর সূর্যসন্তানদের বীরত্বগাঁথা, বদ্ধভূমির নিষ্ঠুরতা তুলে ধরা হয়েছে।

সাগরকন্যা পটুয়াখালীর পর্যটন শিল্পের অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক স্যেন্দর্যমন্ডিত কুয়াকাটার মসৃন তপ্ত বালুকাময় তটে রূপালি ঢেউয়ের আচড়ে পড়া সাগরের সাথে সূর্যের উদয় অস্তের মিতালির মোহাচ্ছন্ন দৃশ্য, প্রাচীন কুয়া, কাঁকড়া দ্বীপ, ফাতরার বন, শুটকি পল্লী, বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন পল্লী, প্রাচীন কাঠের নৌকা সহ দর্শনীয় স্থানসমূহ ঝকঝকে আলোকচিত্রসহ তথ্যবহুল উপস্থাপন পটুয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিংয়ে পর্যটন শিল্পে খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

পর্যটকদের সহজ বিচরণের জন্য বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন হোটেল মোটেল এর সার্বিক তথ্য ও সেবাকার্যক্রম। চিরায়ত সৌন্দর্যে নতুন পালক যোগ হয়েছে পায়রাবন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, অর্থনৈতিক অবকাঠামো যা বিশ্ব অর্থনৈতিক মানচিত্রে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। উঠে এসেছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু।
বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে পায়রার রূপালী ইলিশের লোভনীয় ছবি। পিপাশা কাতর মানুষদের মনকাড়া রঙের তরমুজের স্বাদ পেতে ঝকঝকে ছবি সন্নিবেশ করা হয়েছে।

চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর তথ্যবহুল উপস্থাপন, সোনালি ধানের অপরূপ দৃশ্যের ছবি, বাউফলের মৃৎশিল্পের বৈদেশিক বাজার চাহিদার তথ্য ও স্থির চিত্র পটুয়াখালীর ব্র্যান্ডিং প্রসারতাকে করবে আরও সমৃদ্ধ। ইতিহাস, ঐতিহ্যে ব্র্যান্ড বুক এ আলোকিত স্থান অধিকার করে নিয়েছেন বাংলার বাঘখ্যাত শের-ই-বাংলার পূর্ব পুরুষের ভিটা। রয়েছে এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিশ্বাস আর নির্ভরতার প্রতীক ইয়ারউদ্দিন খলীফার মাজার গড়ে উঠার ইতিহাস। আছে কালীবাড়ি মন্দির ও মিয়াবড়ী মসজিদের বর্ণনা।

তরুণ প্রজন্মের রেমাঞ্চকর বিশেষ আকর্ষনের একটি স্থান ‘সিঙ্গারা পয়েন্ট’ যেখানে বোম্বাই মরিচের ঝালে সিঙ্গারার স্বাদ নেওয়া ও চায়ের কাপে ঝড় তোলা বিচিত্র মানুষের কথা উঠে এসেছে। জেলা শহরের রাজনীতি, সমাজ-সংসার, প্রেম-কাহিনী ইত্যাদি যেন আলোচনার পিক পয়েন্ট। অনেকের কাছে সিঙ্গারা বিক্রেতা অমলদার মায়াবী হাসি যেন নষ্টালজিয়া। বাদ পড়েনি দক্ষিণবঙ্গের প্রথম ও একমাত্র সাপের খামারটির কথা।

শিক্ষা বিস্তারে এ জনপদটি সুপ্রাচীন থেকেই অগ্রগণ্য। পটুয়াখালীর মেধাবী সন্তানরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কর্মরত আছেন। তাঁদের তৈরী করতে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাঁদের পরিচিতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ব্র্যান্ড বুকে।

জাতির পিতার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলাপ্রশাসনের নান্দনিক ও আইকনিক স্থাপনা ‘বঙ্গবন্ধু তোরণ’ এ টেরাকোটায় তোলা হয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের ঘটনা প্রবাহ। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে জেলা প্রশাসনের মহৎ উদ্যোগে ‘বজ্রকন্ঠ’ নামক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সংকলন, বঙ্গবন্ধুর তোরণ নির্মাণ, দশ লাখ বৃক্ষের চারা রোপণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের তথ্য ও ছবিসহ মনকাড়া উপস্খাপন ব্র্যান্ড বুকটিকে করেছে জতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি সুন্দরতম প্রচেষ্টা যা পটুয়াখালীবাসীকে চিরকৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।

ফটোগ্যালারিতে জাতীয় অনুষ্ঠানসমূহের জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচিতে সব শ্রেণি, পেশার মানুষের আন্তরিক অংশগ্রহণের মেলাবন্ধ ফুটে উঠেছে।

তবে অলক্ষ্যে উপেক্ষিত হয়েছে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি পরিমন্ডলের কিংবদন্তী সমতুল্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের সেসব বোদ্ধাদের পরিমন্ডল নিয়ে আলোকপাত।

পরিশেষে ধন্যবাদ জনাচ্ছি এটুআই প্রোগ্রাম ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে যাদের দিকনির্দেশনায় প্রকাশিত হলো পটুয়াখালী জেলা ব্র্যান্ডবুক এর দ্বিতীয় সংস্করণ। ধন্যবাদ জানাই পটুয়াখালীর সুখ-দুঃখের সারথি ও জেলার নিষ্ঠাবান অবিভাবক জেলা প্রশাসক মহোদয় জনাব মোঃ মতিউল ইসলাম চৌথুরী সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে। সম্পাদক ও সম্পাদনা পর্ষদের আন্তরিকতা ও সুনিপুণতা বইটির মানদণ্ড শিখরে অবস্থান করছে। আলোকচিত্রকারের দক্ষতায় বইটিকে করেছে দ্যুতিময়। মুদ্রণে গ্রাফিক্স অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার ছাপ সুস্পষ্ট সমস্ত অবয়ব জুড়ে।

পরিশেষে পটুয়াখালীর প্রতিটি ধূলিকণা আলো বাতাসের সঙ্গে আছে আমার আত্মার সম্পর্ক। কোন কিছুকে ভালো বাসতে হলে তাকে সম্যক ভাবে জানতে হবে। অনুভুতি দিয়ে উপলব্দি করতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন আকর্ষনীয় ও তথ্যবহুল এ জেলা ব্য্যান্ড বইটি বিশ্ব দরবারে পটুয়াখালীকে করবে আরও সুপরিচিত।

লেখক: পরিচালক-এফবিসিসিআই।

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি