ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

অতি লোভে যা হয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৩

সাফল্যের পথে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো শর্টকাট খোঁজা। অর্থাৎ সে চায় অল্প আয়াসে কীভাবে পাওয়া যায়, পরিশ্রম না করে ফোকটে কীভাবে কামানো যায়। ফলে এরা প্রতারক-চালবাজদের কথা দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়, যারা মিষ্টিকথার জাল বুনে মানুষের এই লোভাতুর স্বভাবের সুযোগ নেয়। 

এদের পরিণতি হয় গল্পের সেই রাখালের মতো।

এক পাহাড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে এক প্রতারক ঢুকল। সে ছোটখাটো প্রতারণা করছে সফলভাবে। কিন্তু ঐ যে চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন। একদিন প্রতারকের প্রতারণা ফাঁস হয়ে গেল। গ্রামবাসীরা ধরে ফেলল তাকে। কিন্তু সকাল বেলা কাজে যাওয়ার সময় হওয়ায় তারা ঠিক করল আপাতত জঙ্গলে গাছের সাথে তাকে বেঁধে রাখা হোক। 

সন্ধ্যার সময় এসে পাহাড় থেকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হবে, যাতে এই আপদ থেকে সবসময়ের জন্যে মুক্ত থাকা যায়। গ্রামবাসীরা প্রতারককে বেঁধে রেখে চলে গেল।

এর মধ্যে এক রাখাল মেষ চরাতে চরাতে ওখানে চলে এল। রাখাল ছিল সহজ-সরল এক যুবক। সে প্রতারককে ঐ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, তোমার এ অবস্থা কেন? প্রতারক তার কথা শুনেই বুঝল যে, এ লোক এই গ্রামের নয়। সে সাথে সাথে ফন্দি বের করে ফেলল।

সে বলল যে, দেখো, আমার দুঃখের কথা তুমি শুনে কী করবে? আমার অনেক দুঃখ! রাখাল বলল- কী দুঃখ? প্রতারক বলে যে, দেখ, আমি একজন সাধক মানুষ, সাধনা করতে চাই। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছু আমি পেতে চাই না। আমি ঘর সংসার করতে চাই না। কিন্তু এই গ্রামের লোকজন আমাকেই ধরেছে যে, সর্দারের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। কারণ, এই গ্রামে সর্দারের মেয়েকে বিয়ে করার মতো আর কোনো পুরুষ নাই আর তাকে আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই বিয়ে দিতে হবে। নইলে মেয়েটি বাঁচবে না। এখন আমাকে সবাই ধরেছে যে, মেয়েটিকে বিয়ে করতে হবে। সেই সাথে সর্দারের যে সম্পত্তি, তার অর্ধেক আমাকেই নিতে হবে।

এখন বল, আমি একজন সন্ন্যাসী গৃহত্যাগী মানুষ, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছু বুঝি না আমি। আমাকে এই কাজ করতে হবে! আমার ওপর এই জুলুম! শুনতে শুনতে রাখাল ছেলেটি লোভাতুর হয়ে উঠল। জিজ্ঞেস করল, আমার সাথে কি বিয়ে দেবে? প্রতারক বলল, ছেলে পেলেই বিয়ে দেবে। কারণ এ গ্রামে আর কোনো ছেলে নেই।

রাখাল তখন বলল যে, তোমার ওপর এই জুলুম দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছে। তুমি তো সন্ন্যাসী, তোমার বিয়ের দরকার নেই। কিন্তু আমার তো বিয়ের দরকার আছে। এক কাজ করি। তোমাকে আমি খুলে দিচ্ছি। তুমি আমার এ ভেড়াগুলো নিয়ে চলে যাও। আর আমাকে এখানে বেঁধে রাখো যাতে সন্ধ্যার সময় তারা এখানে এসে আমাকে পায়।

প্রতারক বুঝল যে, শিকারি টোপ গিলে ফেলেছে। তবুও মুখ শুকনো করে বলল, তোমাকে আবার এই বিপদের মধ্যে ফেলব! সর্দারের মেয়ে দেখতে কেমন জানি না, মেজাজি কিনা তা-ও জানি না। কিন্তু যুবক তো তখন ভীষণ উত্তেজিত। বলে যে, আমি পুরুষ মানুষ, রাগী হয়েছে তাতে কী? রাগ আমি ঠিক করে ফেলব। বলে সে প্রতারকের বাঁধন খুলে দিল।

প্রতারক তখন রাখালকে আচ্ছামতো বেঁধে ভেড়াগুলো নিয়ে সরে পড়ল। সন্ধ্যার সময় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে এসেছে, পাহাড় থেকে প্রতারককে ফেলে দেবে বলে। রাখাল নানানভাবে প্রতিবাদ করতে চাইলেও কেউ তার কথা শুনল না। তারা ভাবল প্রতারক তো কত কথাই বলে!

কিন্তু পরদিন সকালবেলা গ্রামবাসী তো অবাক! প্রতারক ভেড়ার বিশাল পাল নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামবাসী বলল, এই তোমাকে না ফেলে দিয়েছিলাম সমুদ্রে! তুমি এখানে এলে কীভাবে?

প্রতারক তখন বলল, আর বলো না! তোমরা আমাকে ফেলেছিলে ঠিকই। কিন্তু এ সমুদ্রে আছে এক জ্বীনের বাদশার রাজত্ব। সে খুব দয়ালু। আমাকে ওখানে ফেলে দেয়ার সাথে সাথে সে আমাকে তুলে নিল। বলল যে, আমাদের এ রাজ্যে কারো মরার নিয়ম নেই। কেউ মরবে না। তুমি যেহেতু এসেই পড়েছ, এ রাজ্যের নিয়ম অনুসারে তোমাকে এই ১০০ ভেড়া দিয়ে দেয়া হলো। আমি ভেড়া নিয়ে চলে এলাম।

এখন গ্রামবাসী জিজ্ঞেস করল- যে পড়বে তাকেই দেবে? বলে যে, হাঁ। ঐ রাজ্যের নিয়মই তাই। ব্যস, গ্রামের পুরুষরা সব বাড়ি-ঘর ক্ষেত-খামার গবাদি পশু ফেলে পাহাড় থেকে লাফিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে লাগল। আর ঐ প্রতারক গ্রামের জায়গা-জমি-সম্পত্তি সবকিছুর মালিক বনে গেল।

সুতরাং ফোকটে বা শর্টকাট পাওয়ার প্রত্যাশা করবেন না। ফোকটে যা পাওয়া যায় তা কখনো নির্ভেজাল হয় না। এমনকি ঘটনাচক্রে আপনি যদি পেয়েও যান আপনি তা ধরে রাখতে পারবেন না।

বিবিসি একবার মিলিয়ন ডলার লটারি জিতেছে এমন বেশ কয়েকজনকে নিয়ে একটা জরিপ করেছিল টাকা পাওয়ার পর তাদের কার অবস্থান কেমন সেটা যাচাইয়ের জন্যে। তারা দেখল, লটারি বিজয়ী অধিকাংশ জনই আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। পুরস্কারের এত বিপুল অর্থও তাদেরকে সাময়িক কিছু বিলাস-ব্যসনের যোগান ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নি।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি