ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

আলো আমার আলো ওগো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৪, ২ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৫১, ৪ মার্চ ২০১৮

বারো বছরের কেভিন জন্মের পর থেকেই ছটফটে। কখনই চুপচাপ থাকতে পারে না। পাঁচ মিনিটও কোথাও বসে না! স্কুলে মাস্টাররা তাকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায়। বাড়িতে মা সেরীল প্রতি মুহূর্তেই আতঙ্কে থাকেন, কখন কোন অঘটন করে ও! বলেন, ও যে আমাকে জ্বালাতেই আসছে তা বুঝতাম পেটে যখন অনবরত হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করে আমাকে পেরেশান করতো। বাবা কনরাড একটি ফার্মের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি। সব সময় কোম্পানির গাড়িতে জার্মানি আর আশেপাশের দেশগুলি চষে বেড়ান। তাদের অনেক প্রডাক্টস। এসব জিনিসের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক। পঁচিশটি ইউরোপিয়ান কম্যুনিটি অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে একই মুদ্রার চলন। কোন সীমান্ত নেই। ব্যবসায় তাই কম্পিটিশান অনেক বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে শনি-রবিবারেও কনরাড বাড়িতে আসতে পারে না। মোট কথা একমাত্র সন্তান কেভিনকে একা সামলান সেরীল। গত বছর সেরীলের বাবা কিছুদিন রোগে ভুগে হঠাৎ মারা গেলেন। সেরীলের মা তাকে দশ বছরের রেখে মারা যাবার পর, বাবা আর বিয়ে করেন নি। মেয়েকে বড় করে, পড়াশুনা করিয়ে, তার বিয়ের পর মেয়ের সাথেই থাকতেন। বাড়িটাও তারই। সেরীলই একমাত্র সন্তান। ওরা গত পাঁচ পুরুষে এক সন্তানেরই পরিবার।

কনরাড বহুবার বলেও সেরীলকে আরেকটি সন্তান ধারণে রাজি করাতে পারে নি। তার কথা, আমাদের পরিবারের এতদিনের ঐতিহ্য আমি নষ্ট করবো না। তারপর দিন দিন কেভিন যেরকম দুরন্ত হয়ে উঠল, তার কোন ভাই বা বোন এলে সংকট আর ঝামেলা যে আরও বাড়বে তাতে এখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই একমত।

দাদুর মৃত্যুর পর কেভিনের চাঞ্চল্য একটু কমে গেল। দাদুর ঘরে প্রায়ই গিয়ে ওর বড় সোফাটিতে চুপ করে বসে থাকে। সেরীল বাবার ঘরটি আগের মত করেই রেখে দিয়েছে। বিছানার চাদর বালিশ নিয়মিত বদলায়। টেবিল, চেয়ার, র‌্যাক পরিষ্কার করে। দিনে জানালা দরজা খুলে দেয়। হাওয়া চলাচল করে। বাবার মৃত্যুকে সে এখনও মেনে নিতে পারে নি। বাড়ির পরিবেশে সে কোন পরিবর্তন আনে নি। সব কিছু দেখে মনে হয় ওর বাবা বাইরে গেছে, এখনি ফিরবে। কনরাড কিছু বলতে গেলে, সেরীল এমন করুণভাবে তাকায় যে ও প্রসঙ্গ বাদ দেয়। শ্বশুর মারা যাবার পর ও ভেবেছিল ওর ঘরটিতে সে তার কাজকর্ম করবে। এখনকার কাজের জায়গাটি খুব ছোট। দাদুর ঘরটিই বাড়ির মধ্যে সবচাইতে বড়। কিন্ত যেভাবে সেরীল বাপের ঘরের যত্ন আত্তি করে, প্রস্তাবটি করারই সাহস পায় নি।

বাইরে খেলতে খেলতে কেভিন হঠাৎ বসার ঘরে এসে দেয়ালে শিল্পির আঁকা দাদুর বড় লাইফ-পোট্রেটটির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে অনেক্ষণ। মা সেরীলের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। কি ব্যাপার! এটাতো ওর প্রকৃতির সাথে মোটেই মেলে না। কেভিন ১০/১২ মিনিট দাদুর ঘরে বসে আছে বা তার ছবির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে! তাকে যারা কাছে থেকে চিনত, চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চাইত না। স্কুলে কেভিনের টিচার মিসেস রাখেল টেলিফোনে সেরীলকে জানালেন, কয়েকমাস ধরে কেভিন ছুটির সময় আগের মত খেলাধুলা করে না। মাঝে মাঝেই একা একা মাঠের বড় বার্চ গাছটির নিচে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। ক্লাসেও আর আগের মত হৈ চৈ করে না। তিনি এটা ভালো মনে করছেন না। তাকে পরামর্শ দিলেন কোন শিশু-সাইকোলজিস্টের কাছে কেভিনকে নিয়ে যেতে। কনরাড শুনে বলল, কেভিন দুষ্টামি করলে তুমিই তো অনুযোগ করো, ও কেন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না। এখন তাই করে মাঝে মাঝে। কিন্ত এতেও তোমার চিন্তা! বয়স বাড়ছে ওর। এখন একটু শান্ত তো হবেই। সেরীল এ ব্যাখ্যায় খুশি হতে পারে না। তার মনে হয়, কেভিন একটু অচেনা হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করবে, বাসনপত্র ভাঙবে, চেঁচিয়ে কথা বলবে, খেতে বসে অল্প খেয়েই উঠে যেতে নানা রকম বাহানা করবে। এই কেভিনকেই সে জন্মের পর  থেকে চেনে। এখন খাওয়ার সময় শান্ত হয়ে সব খেয়ে তারপর উঠে। মার তো এতে খুশি হবারই কথা। খোশামদ ছাড়াই্ ছেলে পেটপুরে খাচ্ছে। কিন্ত সেরীলের মন মানে না। আগে কথার খই ফুটতো মুখে। এখন অনেক সময় কিছু জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর দেয় না। মাঝে মাঝে একদিকে চেয়ে থাকে, কোথায় তা ও নিজেই জানে না। চোখদুটি কেমন নিষ্প্রাণ মনে হয়। মনে হয় ও এখানে থেকেও এখানে নেই। মনের তরী বেয়ে কোথাও দূরে চলে গেছে। মা বলেন, কেভিন, কী দেখছিস? কেভিন বলে, না কিছু না। বলে উঠে যায়। আর কিছুই বলে না। মা শঙ্কিত হয়ে উঠেন। দিন দিনই ছেলেটা অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে।

এবারের জন্মদিনে বাবা একটা সাইকেল উপহার দিলেন। কিছুটা পরিবর্তন এল। স্কুলে যাতায়াত করে এখন সাইকেলে। মা তাকে গাড়িতে করে স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসত। কিন্তু কেভিন সাইকেল পাওয়ার পর আর গাড়িতে উঠতে চায় না। কনরাড বলল, সাইকেলেই যাক। এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার লক্ষণ। দায়িত্ববোধও বাড়বে। কিন্ত মা ভেতরে ভেতরে অশান্ত। এতটুকু বাচ্চা ছেলে এতটা পথ একা সাইকেলে! একটু নিশ্চিন্তও হন। দু বাড়ি পরেই কেভিনের চেয়ে একটু বড় একটি মেয়ে একই স্কুলে সাইকেলে যায়। মা চেলসীকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছেন, সাইকেল চালানোর সময় কেভিনকে সে যেন দেখে শুনে রাখে। দুজনে যেন পাশাপাশি সাইকেল চালায়। কেভিনের আবার চেলসির খবরদারী ভালো লাগে না। ও প্রায়ই দ্রুত আগে চলে যাবার চেষ্টা করে। স্কুল থেকে আসার পরও, নাকে মুখে কিছু গুঁজে দিয়েই সাইকেল নিয়ে শিশুপার্কে চলে যায়। ওখানে বাচ্চাদের সাইকেল চালানোর নানা ধরনের ট্র্যাক আছে। সেরীল কিন্ত ভয় পান। না জানি আবার ওখানে কবে কোন দুর্ঘটনা হয়। অঘটন একদিন সত্যিই ঘটল।

এক বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে সাইকেল নিয়ে শিশু পার্কে যাবার সময় পেছন থেকে একটা গাড়ি তাকে চাপা দিল। সাইকেলসহ ছিটকে রাস্তার পাশে খাঁড়িতে পড়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে এক পথচারীর টেলিফোনে কয়েক মিনিট পরেই এম্বুলেন্স এল। দেখা গেল তার হার্ট বন্ধ হয়ে আছে। এভাবেই কেভিনের ‘প্রায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতার সূচনা হল।

হাসপাতালে তাকে এমারজেন্সিতে নেবার পর ডাক্তাররা তার প্রাণযন্ত্র পুনরায় চালু করার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা নেন। হার্ট মেসেজ করার পরও যখন কোন পরিবর্তন হল না, সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে তাকে আদ্রেনালিন ইঞ্জেকশান দেয়া হল বিকল হৃদযন্ত্রে।

এবার একজন ডাক্তারের জবানিতেই শুনুন:

কেভনি জ্ঞান ফিরে পাবার পর সে ধীরে ধীরে কয়েকদিন ধরে আমাকে ‘প্রায় মৃত্যু অভিজ্ঞতার একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিয়েছে যা আমার দীর্ঘ তিরিশ বছরের চিকিৎসক-জীবনের ইতিহাসে একটি বিরল এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী অভিজ্ঞতা। কাহিনির বড় অংশটিই হাসপাতালে এমারজেন্সিতে তাকে পুনর্জীবিত করার জন্য আমরা ডাক্তার-নার্সরা যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি সে সংক্রান্ত। তাকে যখন এমারেজেন্সিতে আনা হল সে সময় প্রায় বিশ মিনিট ধরে তার হার্ট-বিট বন্ধ! ক্লিনিকালি ডেড! তার বর্ণনা খুবই সংহত এবং প্রগাঢ়। আমি পরে তার চিকিৎসার  সমস্ত রিপোর্ট, ও ‘প্রায় মৃত্যুর’ বিবরণ, ‘মৃত্যুর পরে জীবন’ এর গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ডা. রেমন্ড এ. মুডির কাছে পাঠাই।

ডা. রেমন্ড মুডি: আমি দুর্ঘটনায় প্রাণ ফিরে পাবার তিন বছর পর কেভিনের সাক্ষাৎকার নেই। এ সময় তার বয়স পনেরো। ওর সাথে আলাপের আগে আমি বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে নিশ্চিত হই যে কঠিন দুর্ঘটনায় তার ব্রেনের কোন ক্ষতি হয় নি। ওর সাথে কথা বলে আমি জেনেছি এবং পাঠকরাও বুঝতে পারবেন দুর্ঘটনায় রাস্তার পার্শ্বে সে চিৎ হয়ে পড়ে যায়। পিঠে প্রচণ্ড আঘাত পায়। কিন্তু মাথায় কোন আঘাত লাগেনি।

কেভিন: আমার বয়স যখন বারো, এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঐ বছর জন্মদিনে আমি একটি নতুন সাইকেল উপহার পেয়েছিলাম। একদিন বিকেলে ওটা চালানোর সময়ই পেছন থেকে একটা মটরগাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। আমি গাড়ি দেখতে পাই নি।

পড়ে যাবার পর আমার কি হল, আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। কিন্ত এক সময়ে আমি উপর থেকে নিচে আমাকে দেখতে পেলাম। আমার দেহটি আমি দেখতে পেলাম সাইকেলের নিচে পড়ে আছে। আমার ডান পা ভেঙে গেছে। ভীষণ রক্ত পড়ছে। আমার এখনও মনে আছে আমার চোখদুটি ছিল বন্ধ। কিন্তু আমি উপরে!

আমার শরীরের এক দেড় মিটার উপরে আমি ভেসে আছি। চারদিকে অনেক লোক ভীড় করে আছে। একজন আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে একটা এম্বুলেন্স এল। আমি বুঝতে পারলামনা সবাই এত উত্তেজিত কেন? আমি তো ভালই আছি! আমি দেখলাম কিভাবে আমার অচৈতন্য দেহকে হাসপাতালের গাড়িতে তোলা হল। আমি বলতে চাইলাম, আরে, আমাকে তুলছ কেন? আমার তো কিছুই হয়নি। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনছে না। কিন্তু আমি শুনছিলাম, ওরা কি বলছে। একজন বলল, ওকে ভালো করে ধরুন। মনে হয় ও মরে গেছে, তবুও হাসপাতালে নিয়ে আমরা চেষ্টা করব, আরেকজন বলল।

অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতবেগে রওনা হয়ে গেল। আমি চেষ্টা করলাম গাড়ির সাথে যেতে। উপরে আমি ভেসে ভেসে যাচ্ছি। এখন আমার মনে হল, আমি বোধহয় আসলেই মরে গেছি। কারণ এই সময় আমি একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে এসে গেছি। একদিকের মাথা উজ্জ্বল সাদা রঙে আলোকিত। মনে হল সুড়ঙ্গটি ক্রমাগতই বাইরের দিকে চলে গেছে। আমি আরেকমুখ দিয়ে আলোর কাছে ভেসে চলে এলাম।

দেখি আলোর মধ্যে বহু লোকের জমায়েত। কাউকে আমি চিনিনা। আমি তাদের আমার দুর্ঘটনার কথা বললাম। তারা বলল, তোমাকে ফিরে যেতে হবে। তাদের কথা, আমি এখনও মরার জন্য তৈরি নই। আমাকে বাবা-মার কাছে ফিরে যেতে হবে। আমি অনেকক্ষণ এ আলোর মধ্যে ছিলাম। অন্তত: আমার তাই মনে হল। সবাই এখানে হাসিখুশি। আমার মনে হয় এ আলোটি স্বয়ং ঈশ্বর। পানির ঝরনার মধ্যে স্নান করার মত আমি আলোয় আলোকিত হচ্ছিলাম। আমার কোন ধারনাই ছিল না, আমি এখানে কেন এবং আমি যাবই বা কোথায়? কিন্ত এ জায়গা ছেড়ে, এ আলোর বন্যা ছেড়ে কোথাও যেতেও ইচ্ছা করছিল না। আমার শরীর  নিয়েও আমার কোন চিন্তাই আর ছিল না।

এ সময় দাদু এলেন। তাকে দেখে আমি খুব খুশি। এখন আমরা একসাথে থাকবো। কিন্তু তিনি বললেন, কেভিন, তোমার মা খুব কষ্ট পাচ্ছে। চল আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। বলে উপরে হাত বাড়িয়ে আমাকে নিচে নামিয়ে এনে সাথে করে সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে এলেন। সারা রাস্তা দাদু আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। এক সময়ে বললেন, এবার তুমি ফিরে যাও। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আমি হাসপাতালে চলে এলাম। দাদু আর সাথে নেই। তিনি আবার আলোর রাজ্য ফিরে গেছেন। দুজন ডাক্তার আমার দেহের যত্ন নিচ্ছেন। তারা আমার নাম ধরে ডাকছেন, কেভিন, কেভিন! অপারেশান টেবিলে আমার শরীর। রং নীল। এখন আমি জানি আমাকে ফিরেই আসতে হবে। সুড়ঙ্গের লোকেরা সবাই তাই বলেছে। আমি ডাক্তারদের বলার চেষ্টা করলাম, আমি ভালো আছি। একজন আমার বুকে একটা রবারের থালা চেপে ধরলেন। হঠাৎ আমার দেহটি লাফিয়ে উপরে উঠে গেল। আমি জেগে উঠে ডাক্তারকে বললাম, আমি আপনাকে দেখেছি। যখন আপনি রবারের থালা বারবার আমার বুকে চেপে ধরছিলেন। মাকেও এটা আমি বলতে চেয়েছি। কিন্ত আমার কথা কেউ শুনতে চায় না।

ডা. মুডি: তুমি এসব ঘটনার কি কোন ব্যাখ্যা দিতে পারো? তিন বছর আগের কথা। তোমার কি মনে হয়না যে কোনভাবেই হোক বর্ণনায় কিছু পরিবর্তন এসে গেছে? তোমার কি মনে হয়? এসবের অর্থ কি?

কেভিন: আমি খুবই ভেবেছি এটা নিয়ে। আমার দৃঢ় ধারণা ঐ সময়ে আমি সত্যিই মারা গিয়েছিলাম। আমি ওখানেই গিয়েছিলাম যেখানে মৃত্যুর পর সবাইকে যেতে হবে। ওখানে গিয়েই আমি জানতে পেরেছি, জীবনের সব চাইতে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো ভালোবাসা। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকে।

গত বছর আমার ক্লাসের একটি ছেলে মারা গেল। তার রক্তকণিকায় ক্যান্সার হয়েছিল। কেউ এটা নিয়ে কথা বলত না। কিন্তু আমি বলেছি, ডন এখন যেখানে আছে, ভালই আছে। মৃত্যু কোনো মতেই ভয়াবহ কিছু নয়। আমি সবাইকে বলি এটা আসলে কি। আমি কোথায় গিয়েছিলাম যখন হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে আমি কুড়িমিনিট মরে ছিলাম। তারপরেই আমাদের শিক্ষয়িত্রী এ বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করলেন।

ডা. মুডি: কেভনি, সুড়ঙ্গে যাদের সাথে তেমার দেখা হয়েছিল, তাদের কিছু কি তুমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছ?

কেভিন: সুড়ঙ্গ আর আলো ছাড়া আমি তেমন বিশেষ কিছু দেখিনি। লোকজন তো আর ব্যতিক্রম কিছু নয়। সব সময়ই দেখি। শুধু দাদুর কিছু কথা আমায় আজও বিষ্ময় লাগে। তিনি আলোর রাজ্যে এত আনন্দে আছেন। বেঁচে থাকতে আমাকে কত আদর করতেন। কিন্তু আমাকে কেন ফিরিয়ে দিলেন? এত শুভ্র আলো এত উজ্জ্বল আলো আমার মনে হয় পৃথিবীতে কোথাও নেই। এত ধবধবে কিন্তু চোখে লাগে না। মনে হয় শান্তিই শান্তি। আলোয় ভুবন ভরা।

ডা. মুডি: একটু আগেই বললে, তুমি নিশ্চিত যে ঐ সময়ে মারা গিয়েছিলে। কেন তোমার এই দৃঢ় বিশ্বাস?

কেভিন: আমি তাহলে কিভাবে আমার মৃত শরীর রাস্তার পাশে, গাড়িতে এবং হাসপাতালে দেখতে পেলাম?

তারপর ঐ যে অবিশ্বাস্য বর্ণনাতীত শুভ্র সুন্দর আলো? সুড়ঙ্গ? কোনটাই তো এখন আর দেখতে পাইনা। কারণ আমি বেঁচে আছি। শুধু যারা দেহত্যাগ করে তারাই ঐ ঐশ্বরিক দিব্যজ্যোতি দেখতে পায়। তা সে স্থায়ীভাবেই হোক বা কয়েক মুহূর্তের জন্যই হোক। যে দেখে সে আত্মা এবং দেখতে হলে আত্মাকে একাকি হতে হয়। দেহের মধ্যে থেকে এটা সম্ভব নয়।

ডা. মুডি পনেরো বছরের কেভিনের এ ব্যাখ্যায় শুধু যে চমৎকৃতই হলেন না, তাকে বিশ্বাসও করলেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতা কেউ বানিয়ে বলতে পারে না। কেভিনের বয়স পনেরো কিন্তু সে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক বয়স্ক ব্যক্তির চাইতেও পরিপক্ক হয়ে গেছে। কারণ সে মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখেছে। তার বাবা-মাও বলেছে মৃত্যুর দুয়ার থেকে আরেক কেভিন ফিরে এসেছে। আগের মত আর ছটফটে নয়, শান্ত, চিন্তাশীল। 

এখন তার একমাত্র বাসনা, সবাইকে ভালোবেসে একদিন সে আবার সেই আলোর রাজ্যে চলে যাবে। আর তাকে ফিরে আসতে হবে না। কেউ তাকে ফিরে আসতেও বলবে না।

লেখক: জার্মান প্রবাসী (al-harun-abdullah@online.de)

টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি