ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

তাঁতির গান তাঁতের গান

প্রকাশিত : ১৫:০৯, ৪ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৫:২৬, ৪ এপ্রিল ২০১৮

ঐতিহাসিক কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বাঙালি তন্তুবায় দেশি তাঁতে যে কারিকরী দেখাইয়াছে, তাঁতের ঝাঁপে এখনও যেরূপ ফুল তুলিয়া আসিতেছে, তাহা জগতের অন্য জাতির অনুকরণযোগ্য। গড়া হইতে আরম্ভ করিয়া সবনাম বা আবরোঁয়া পর্যন্ত ক্রমোচ্চ স্তরে বঙ্গীয় সভ্যতার ক্রমবিকাশও লক্ষ্য করিবার যোগ্য। সেকালে দেশের সর্বত্র সরুমোটা দেশি কাপড় বুনিয়া, তাঁতঘরে ভদ্রলোকের বৈঠক বসাইয়া, আস্তে সুস্থে দৈনিক কার্য্য সমাধা করিয়া, বাঙালি তন্তুবায় নিরীহ লোকের অগ্রণী হইয়াছে। ভাল মানুষ বলিয়াই ঐ জাতিতে বুদ্ধির অভাব কল্পিত হইয়াছে; শিল্পকলার এই অদ্ভুত বুদ্ধি গণনায় আসে নাই।’

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, বাংলার লৌকিক শিল্পকলার সবচেয়ে প্রাণময় রূপটি কি? অনেকেরই মতামত হবে সঙ্গীত। লোকসঙ্গীত। ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, জারি-সারি, বাউল, ভাবসঙ্গীত ইত্যাদি সৃষ্টি হয়েছে জনসমাজের জীবনেরই কথা দিয়ে। কখনও কখনও সেসব গীত বেদনার উপাখ্যান হয়ে দেখা দিয়েছে। মাঝি-মালা, গাড়োয়ান, চাষী তার পেশাগত কাজের ফাঁকেই গীত রচনা করেছেন। ফলে বাংলার লোকসঙ্গীতের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর কথা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান পেশাভিত্তিক কারুশিল্পী দল তাঁতিদের সঙ্গীত কিন্তু আলাদা করে আমাদের লোকসঙ্গীতে জায়গা করে নিতে পারেনি। অথচ তাঁতিদের জীবনে নানা বঞ্চনা, দুঃখ, দুর্দশা, ক্ষুধা-মন্দা ও ঠকে বেঁচে থাকার হাহাকার ভরা গান, কথা প্রবচন ছিল, আছে। কিন্তু তা গণমানুষের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারেনি। হতে পারে তাঁত ঘরে নিভৃতে জন্ম নেয়া, সুতা কাটুনির চরকায় সুতা কাটতে কাটতে গাওয়া গানগুলো বাইরের পৃথিবীর সংস্পর্শে আসতে পারেনি। ফলে তাঁতখানার ভেতরেই রয়ে গেছে বিশেষায়িত সে সব কথারা। সামাজিক বঞ্চনা, বৈষম্য, অবজ্ঞাপূর্ণ পেশা ধরে রাখার সাথে সাথে তাদের সেসব গীত গানের কথারাও টিকে আছে বংশপরম্পরায়। লোকসঙ্গীতের নানা বিভাগের মধ্যে একটি হলো কর্মসঙ্গীত। সুতরাং তাঁত কাজে মগ্ন বয়নশিল্পীর একঘেয়ে খাটুনির মধ্যে রচিত গান কর্মসঙ্গীতের পর্যায়ভুক্ত বলে চিহ্নিত করা যায়।

কর্মের সময় শারীরিক শ্রম লাঘবের উদ্দেশ্যে যে গান গীত হয় তাই কর্মসঙ্গীত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ কতগুলো গান নির্দিষ্ট থাকে- যা সর্বদা সেসব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়, অন্যত্র নয়। বাংলাদেশে ধান ভানার গান প্রচলিত আছে। আগেকার দিনের প্রথা অনুযায়ী মেয়েরা সাধারণত সারারাত জেগে ধান ভানত। তখন নিজেদের জাগিয়ে রাখবার জন্য দীর্ঘ আখ্যানমূলক গান গাইত। নৌকা চালনা, গরুর গাড়ি চালিয়ে যাওয়া, ধান বোনা কিংবা অট্টালিকার ছাদ পেটানোর সময় বিশেষ সঙ্গীত প্রচলিত ছিল। যেমন ছিল বা আছে তাঁত বোনার সময় তাঁতিদের দ্বারা গীত অনুরূপ একশ্রেণীর কর্মসঙ্গীত। যা প্রচলিত আজও। দীর্ঘ একটানা কাজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য এসব গান খুব ফলপ্রসূ বলেই যেমন ধরে নেয়া যায়, তেমনি ব্যথাতুর মনে কিংবা নেহাৎ আনন্দে তাঁতি জীবনের ব্যথাচিত্রাবলী এই গানের কথারূপকে ব্যক্ত হয়েছে। যেমনÑ

তাঁতঘরে আমার গ্যালি যে য্যবন

ওরে তুরা মন দিয়া শোন

তাঁতঘরে আমার গ্যালি যে য্যবন

চেকন নলী মোটা ক্যরি

যুগ্যালীরা আইজ ন্যলি ভরে

মাকুতে ঢোকে না নলী

কারিগরের হয় সময় হরণ

ওরে তোরা মন দিয়া শোন

তাঁতঘরে আমার গ্যালি যে য্যবন

হপ্তা গেলি হাটবারে

কারিগররা মজুরি চ্যালি

মহাজন কয় মজুরি থাকপি বাকির খাতায়

খোঁজ লিয়া দেহ বেচা কিনার বাজার যা-তা

ওরে তুরা মন দিয়া শোন

তাঁতঘরে আমার গ্যালি যে য্যবন

আমার বয়স ছিল দশ বছরে

একদিন কাজ হল্যি তাঁতের ঘরে

এহন বয়স চলিশ হইলে ধরছে আমায় যক্ষ্মা রোগে

এইবার কবে য্যেন আমার হয় মরণ

ওরে তুরা মন দিয়া শোন

তাঁতঘরে আমার গ্যালি যে য্যবন

(নিজস্ব সংগ্রহ, পাবনা এলাকায় তাঁতিদের মধ্যে প্রচলিত গান)

সামাজিক নানা অনিয়ম, উৎপীড়ন, নির্যাতন তথা শ্রেণী শোষণের স্বরূপ ও নিপুণ বাস্তবতায় উঠে আসে লোককবির গানে। শ্রেণী, বর্ণ বৈষম্যের কুপ্রভাবে যাদের জীবনযাত্রা তাদের মধ্যে তাঁতিও আছে.... তাদের উদ্দেশ্যে গানে গানে উচ্চারিত হয়Ñ

‘....কেউবা থাকে সুখের নিদ্রায়

কেউবা হাটে রাত্রিদিন।

ওভাই কামার-কুমার, তাঁতি-জোলা চাষাভুষা নিঃসম্বল

আরও আছে যারা যারা

সবাই তানরা একই দল’।১

কাপড় বোনা নিয়ে কুবির গোসাই এর গান বাঁধলেনÑ

অতি সাবধানে ঘুরাই প্রেমের নাটা

ভসকে যখন যাবে সুতা

লবো তুলে কলেবলে ভয় কি তার অত

কতশত ঘুচাই জড়পটা।

নাটিয়ে করব পাতা দেখবনা তা বাধবে না কোন নেটা।।

যখন সুতো করবো নাতি

লাগবো তায় পাতায় পাতায় খই ভিজে মাতি।

দু’এক ঘড়ি ছাড়া জটা

শেষে কাড়িয়ে তানা গাঁথা সানা।

সানপেতে শাড়ির ঘটা।।

হয় যদি তার কানা ঘরে গুটিয়ে লব

শেষে দিব আলগা খেই পুরে

এক নজরে দেখাব সেটা।

শেষে রোয়া গেঁথে নাচলিতে

জুড়ে ফেলব তানাটা।২

সুতা ছিঁড়লে তার সমাধান, মাড় দেয়া, সানা গাঁথা, আলগা খেই এর মত নানা কারিগরি কথা উঠে এসেছে গানের কথায়।

যুগীর ব্যবসা ভাতছানা।

এই সুতোর গায়ে মাখিয়ে তাই কাড়াই তানা।।

আমার দুইদিকে খাটুনি।

আমি একবার কাড়াই একবার করি তাসুনী।।

আমি গেঁথে সানা মেড়ো তানা

করি নরাজ গুটানী।

দুই রোয়া জুড়ে গেঁড়েয় পড়ে,

ঝাপে ঝোপে তাঁত বুনি।।

ভারি সুতোয় বাজার আক্কারা

হয়েছে যুগী তাঁতি পুলিশ-সৈন্য শিখছে কেয়াজ করা।

এখন কাপড় বোনায় লভ্য নাইক

উল্টো দেনায় হয় সারা।।

কাপাস তুলো নেইক দেশে

কেশের ফুলকোয় মাঠ ভরা

তাতে হয়না সুতো অনাহত ভাবছে যত চাষীরা।।

এখন দায়ে পড়ে পৈতে ছিঁড়ে দস্তী হবে দ্বিজরা

এখন মাকু বেছে কাঁকু চুসে বেড়ায় যত জোলারা

কলার পেটোর কপ্নি পরবে যত বাইল নেড়ারা।।৩

সুতার উচ্চমূল্য, কাপড় বোনায় স্বল্প লাভ, তুলার চাষ নেই ইত্যাদি সমস্যার ফলে তাঁতি, জোলা সম্প্রদায়ের দুরবস্থার কথা ফুটে উঠেছে তাদের গানে।

অতি সাবধানে ঘুরাই প্রেমের নাটা।

যখন খেঁই যাবে ছিঁড়ে লব জুড়ে

ফেলব না তার এক ফোঁটা।

সদা ইষ্ট প্রতি নিষ্ঠে রতি

আছে আমার মন আটা।।

ভসকে যখন যাবে সুতো লব তুলে কলে বলে

ভয় তি তায় এতো

কতশত ঘুচাই জড়পটা।

নাটিয়ে করব পাতা দেখব তা বাধবে না

কোন নেটা।।

যখন সুতা করব মাতি।

লাগাব তায় পাতায় পাতায় খৈ-ভিজে মাতি

দুই এক ঘড়ি ছাড়াব জটা।

শেষে কাড়িয়ে তানা গাঁথা

সানপেতে শাড়ির ঘটা।

হয় যদি তায় কানা ঘরে গুটিয়ে লব শেষে

দিব আলগা খেই পুরে

এক নজরে দেখাব সেটা।

শেষে রোয়া গেঁথে নাচলিতে জুড়ে

ফেলব তানাটা।

প্রথমে বিশকরম বলে চালিয়ে মাকু

আঁকু বাঁকু করব না ভুলে তায়

ঝাপ তুলে ঘা দিব নাটা।

তবে ঝাপ ঝোপে বুনব কাপড় দিয়ে ও

সাবির কাটা।।

কলে বলে নলি চালাব।

ছিঁড়বে না খেঁই খাব সে দেই

সাঁদ মেরে যাব

খুব দেখাব আমার গুণ যেটা।

কাপড় বুনব কিসে নরাজ ঘিসে

রাখব না দশি কাটা।।

ভাল কাপড় বুনতে জানি।

চিরুন কোটা শালের বোটা ঢাকাই

জামদানি তার ঢের কানি তা বুঝে

দেয় কেটা।।

কুবির চরণ ভেবে বলে

এবার এ দফাতে নাই ঘোটা।। ৪

নানা রূপকের আশ্রয়ে সাধারণ তাঁত শিল্পীদের দুরবস্থার জন্য ফড়িয়া, মহাজন, পাইকার, দালালদের বিষয়বুদ্ধির প্রতি তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয় গানে গানেÑ

নামটি আমার খালেক সরকার

করি আমি সুনাম প্রচার

দক্ষিণে সমুদ্র আর উত্তরে পাহাড়

পশ্চিমেতে যমুনা বলি পুবেতে কাছাড়

ফইড়া মহাজন নাম ফুটাইছে বড় লোকি আচার।।

ভাইরে করি তার সুনাম প্রচার-

সোনায় চিনে সোনারু

লোহায় চিনে কামার

লুইচ্চায় চিনে গোপন পিরিত গাধায় চিনে সোয়ার

কাপড় চিনে তাঁতিরা সব নাপিত চিনে কাঁচির ধার

ফইড়া মহাজনরা চিনে রক্ত চুষতে জোলার।।

তারা হইলেন দালাল ফইড়া

ভাইরে করি তাগো সুনাম প্রচার।।

(নিজস্ব সংগ্রহ, নরসিংদী)

বংশপরম্পরায় শেখা কৌশল ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারে অভ্যস্ত কারুশিল্পীরা খুব সহজে নতুন যন্ত্রপাতির কৌশলকে গ্রহণ করতে পারেনি। তাদের কাজের অভ্যস্ততাই হয়তো প্রাথমিকভাবে সেসবে অনাগ্রহী করে থাকবে। তেমনি বয়ন কারিগর তথা তাঁতিদের ব্যবহার্য প্রাচীন ঘরানার তাঁত এর জায়গায় একসময় চিত্তরঞ্জন তাঁত আমদানি হলে মহাজনরা অল্প সময়ে আরও বেশি বস্ত্র উৎপাদনের লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত সহজ আধুনিক সুবিধা সংবলিত তাঁত আমদানি করলে তৎকালীন তাঁত কারিগরদের মধ্যে প্রথমদিকে অনীহা দেখা গিয়েছিল হয়তো। যার প্রমাণ নিচে উল্লেখিত গানটিÑ

আইলো চিত্তরঞ্জন মেশিন বাইরে তাঁতের দফা করতে সারা

এই মেশিনে বুইনচে যারা বাহার মাইরচে তারা

শা, মুচি কামার কুমার আবাল বামুন যারা

আইচ চ্যাংরা প্যাংরায় বরচে ববিন

তাঁতির তাতে রইলো না চিন।।

ব্যানব্যালা উইট্যারে বাই রওনা দেয় তাঁতি

কেউ ন্যায় বাতের হানকি কেউ জুতা ছাতি

গায়ে কারো প্যান শাট কেউ স্যুট কোট পইর্যা যায়

বুক পকেটে কলম ন্যায় কেউ আমরা তাঁতি শরোমে মরি।।

তাঁতির গরের মা-বউ-জিরা সকাল হন্দ্যা হারাদিন

চরকা তুলে, হুতা হুকায় আর দ্যায় পারি

তারা পেন্দে আইচ চিত্তরঞ্জন মেশিনের শাড়ি

হারাদিন তাঁত চালায়্যা তাঁতি যহুন আইসে বাড়ি

গরের বউরে ডাক দিয়া কয় বিচন্যাডো দে জলদি পারি।

কি কমু আর দুক্কুর কতা

আইচ চ্যাংরা প্যাংরায় বরচে ববিন

তাঁতির তাতে রইলো না চিন।।

(নিজস্ব সংগ্রহ- শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ)

বয়নশিল্পীদের এসব কথা, গান তাদের মেহনত কালের ‘কর্মসঙ্গীত’ কেবল নয়, তা হয়ে উঠেছে তাদের প্রাত্যহিক জীবনের টানাপড়েন ও জীবনজীবিকার অনুষঙ্গ। যাতে বিধৃত হয় তাদের কষ্টকর জীবনের গ্লানিময় উপসর্গ। কথা হয়ে আসে পেশা, আচার, কৃষ্টি, মহাজন, ফড়িয়া, পাইকারের দৌরাত্ম্য। সর্বোপরি তাদের জীবনের নানা অপ্রাপ্তির কথারা ভিড় করে। শোকে সংলাপে সে সব কথারা হয়ে ওঠে তাঁতি জীবনেরই জাজ্বল্যমান প্রতিচ্ছবি।

বস্ত্রের উপর নকশার সুক্ষ্ম কারুকার্য সবসময়ই দর্শনীয় ও আদরণীয় হয়েছে। আবার বস্ত্রশিল্পীরা নকশার সাথে নানা  গীত, ছড়া, কবিতা, কথা ও জুড়ে দিয়ে বুনা নকশায় বস্ত্রকে করেছেন বিশেষায়িত। শুধু তাই নয় তৎকালীন সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক ঘটনাও তাতে বিবৃত হতো। তেমনি বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সময় শান্তিপুরের তন্তুবায়গণ কাপড়ের পাড়ে বিধবাবিবাহ সম্বন্ধীয় অনেক গানের কথা বয়ন করিয়া দিয়াছিল।৫ তার মধ্যে চন্দননগর-খলসিনীর ‘ধীরাজ’ (বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়) কর্তৃক রচিত গীতটি এইরূপÑ

বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হ’য়ে

সদরে ক’রেছ রিপোর্ট বিধবা রমণীর বিয়ে।।

কবে হ’বে হেন দিন, প্রকাশ হ’বে এ আইন,

জেলায় জেলায় থানায় থানায় বেরুবে হুকুম.

বিধবা রমণীর বিয়ের লেগে যাবে ধুম।

মনের সুখে থাকবো মোরা মনোমত পতি ল’য়ে।

এমন দিন কবে হ’বে, বৈধব্য যন্ত্রণা যাবে,

আবরণ পরিব সবে, লোকে দেখবে তাই,

আলোচাল কাঁচকলা মালসার মুখে দিয়া ছাই,

ত্রয়ো হ’য়ে যাব সবে বরণডালা মাথায় ল’য়ে।

কবিবর হেসে কয়, ঘুচিল নারীর ভয়,

সকলের হাতে খাডু হইল অক্ষয়।

সবে বল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জয়।। ৬

তাঁত কর্মসঙ্গীত বৃহত্তর সমাজে তেমন জনপ্রিয় তো নয়ই এমনকি তত পরিচিতও নয়। তাঁত কাজের বেশির ভাগ অংশই সম্পাদিত হয় বাস্তুভিটায় বা গৃহাভ্যন্তরে। ফলে এ কাজে চাষ এর কাজ, মাঝি মাল্লা, বা গাড়োয়ান এর কাজের মতো উচ্চকণ্ঠে গাওয়া গীতল সুরের দেখা পাওয়া যায় না। বরং এ কাজ গৃহাভ্যন্তরের বলে গানের প্রচলিত কথা ও তার সুর স্বভাবতই নিচুস্বরের। কিন্তু স্বর যত নিচুই হোক, কথার বিচারে, ভাব অনুভবের বিচারে, সামাজিক উৎপীড়ন, উৎপ্রেক্ষা, শোষণ, অবহেলার শিকার এই শিল্পী সমাজও কিন্তু বৃহত্তর সমাজেরই অংশ। পেশা বিচারে আপাত বিচ্ছিন্ন মনে হলেও তারাও এই গ্রাম সমবায়ের উত্তরাধিকার। তাই শেষ বিচারে তাদের ‘কথা-গান’ সমাজে মানব উদ্বোধনের প্রয়াসী সে কথা বলাই শ্রেয়। হ

রোম, ইটালি

তথ্যসূত্র : ১. লোক সংস্কৃতি বিবেচনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, আবুল আহসান চৌধুরী, পৃ. ১৮, ২. ৩. ৪. জামদানি, মোহাম্মদ সাইদুর, পৃ. ৪৫, ৪৬, ৫. দেশ, ১৩৪৬

৬. শান্তিপুর পরিচয়, কালীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, পৃ. ১৫১

এই রচনায় প্রখ্যাত মাইম শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদার (প্যারিস, ফ্রান্স) ও সংবাদপত্রসেবী হানযালা হান (ঢাকা) এর ব্যক্তিগত তথ্য সহযোগিতা প্রণিধানযোগ্য।

লেখক :

ইতালি প্রবাসী লেখক ও চিত্রশিল্পী


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি