অনুশোচনা
প্রকাশিত : ১৯:৪২, ৮ এপ্রিল ২০১৮
কলিম উল্লাহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। মুখে লম্বা চাপ দাঁড়ি এবং সব সময় মাথায় টুপি পড়ের। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সবাইকে নামাজ পড়ার জন্য আহŸান জানান। তবে এই মূহুর্তে তিনি টুপি খুলে রেখেছেন। কলিম উল্লাহ যখন রেগে যান, তখন মাথায় টুপি রাখেন না। তিনি রেগে আছেন। রাগের কারণ হলো, তাঁর সাড়ে চার বছরের ছেলে জজ উল্লাহ বায়না ধরেছে পূজা দেখতে যাবে। ছেলের আবদার শুনে কলিম উল্লাহ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন। হুজুরের ছেলে কি না পূজা দেখতে যাবে? বয়স অল্প না হলে এতক্ষণে চর থাপ্পর লাগিয়ে দিতেন ছেলের গালে.............
কলিম উল্লাহর স্ত্রী রাফিয়া বিবি সাধারণত স্বামীর কথার উপর কথা বলেন না। কিন্তু ছেলের কান্নাও তিনি সহ্য করতে পারছেন না। শেষমেষ ভয়ে ভয়ে স্বামীর কাছে যেয়ে ছেলের কথাটা বললেন, পূজা দেখাতে নিয়ে গেলে ক্ষতি কি? “বাচ্চা ছেলে, ও ধর্মের কি বোঝে.....পূজার মেলা দেখে একটু আনন্দ পাবে।”
কলিম উল্লাহ অবাক হয়ে স্ত্রী রাফিয়া বিবির দিকে তাকালেন। বললেন তোমার মাথা ঠিক আছে তো ?”
ছেলেটা অনেক কাঁদছে একটু ভেবে দেখো......
কাঁদুক। এসব নাজায়েজ শখ পূরণ করা যাবে না। এছাড়া মানুষ
কী বলবে? হুজুর পূজায় গেছে....... ছি! ছি! ছি!।
শুধুতো দেখতে যাবে। পূজা’ত করতে যাবে না .....।
মুখে মুখে কথা বল কেন? বলছি যাওয়া যাবে না।
কিন্তু ছেলেটার কি দোষ? ও তো পূজাও বোঝে না, নামাজও বোঝে না, প্রার্থনাও বোঝে না।
ওর উপর ধর্ম চাপায় দিচ্ছেন কেন? শিশুদের তো ধর্ম নাই। বড় হলে সে
ঠিকই বোঝে নেবে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক।
কলিম উল্লাহ কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। মনে মনে ভাবলেন “কোন আক্কেলে যে শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করেছিলাম......শুধু তর্ক করে।”
কলিম উল্লাহ উঠে গিয়ে পাশের ঘরে ছেলেকে শাসাতে গেলেন। এখন থেকে শাসন না করলে ছেলে মাথায় উঠে যাবে.......পোলাপানকে শাসনের উপর রাখতে হবে। না হলে বেয়াদব হয়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে নিজের শশুড় শাশুড়ীর কথা ভাবলেন।
কিন্তু ঘরে ঢুকেই তিনি থমকে দাঁড়ালেন। ছোট ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ ফোলা গাল দু’টো এখনো ভিজা। কলিম উল্লাহর ভিতরটা একটু দোলে উঠলো। পিতৃত্বের জায়গাটা বোধ হয় অনেক উপরে সাম্প্রদায়িকতা সেখানে পৌঁছতে পারে না.....। দশ মিনিটের মধ্যে ছেলেকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।
সাড়ে চার বছর বয়সী ছেলে মূর্তি পূজা ঠিক বেঠিক বোঝে না। সে বোঝে রঙ বেরঙের আলো, হৈ চৈ, বেলুন, সন্দেশ, বাতাসা.....।
কলিম উল্লাহ বিস্ময়ের সাথে ছেলের আনন্দ দেখছেন। নিজের ছেলেকে এতটা আনন্দিত তিনি কখনও দেখেননি। পরক্ষণেই ভাবলেন, শুধুই কি তার ছেলে আনন্দিত? তিনি নিজে কি আনন্দিত নন? বুঝতে পারলেন একজন পিতার সবচেয়ে বড় আনন্দ তার সন্তানকে খুশি করা এবং এটা আসলে সহজ একটা কাজ। দুঃখের বিষয়, মানুষ সহজ কাজের মূল্য বুঝতে চায় না।
একটু পরে কলিম উল্লাহর মোবাইলে একটা কল এলো,
কলিম ভাই, আসসালামু আলাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আপনে কই ?
এই তো ভাই, ছেলেকে নিয়ে একটু উৎসবে আসছি।
দূর্গা পূজা উৎসব। কন কী? পূজা?
আরে ভাই, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
লেখক: অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার ‘অডিট ভবন’, ঢাকা