ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

বল্টু_সমাচার ৭

প্রকাশিত : ১১:৪৪, ২৩ মে ২০১৯

একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে অপেক্ষা করছে বল্টু। সংসদ ভবনের রাস্তাটার দুই পাশেই সারি সারি কৃষ্ণচূড়া। বসন্তের এই সময়টায় ফুলের কারনে গাছগুলো লাল হয়ে আছে। চমৎকার একটা রোমান্টিক পরিবেশ।

ইচ্ছে করেই আজকে এখানে আসতে বলেছে জরিনাকে। ভাইয়া ভাইয়া ডাকের বদলে বল্টু বল্টু করার একটা চেষ্টা। কেবলমাত্র ভাই মনে করলে নিশ্চয়ই এখানে আসতে রাজি হতো না জরিনা। এটা হলো প্রেমিক প্রেমিকাদের স্বর্গরাজ্য। ভাই বোন এখানে অ্যালাউড না। রাজি হওয়া মাত্রই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বল্টু। সে জানে, `ওয়েল বিগান ইজ হাফ ডান`।

একটা রিকশায় করে এসে নামছে জরিনা।

হালকা গোলাপি রঙের একটা ফতুয়া আর কালো টাইটস পড়েছে। ছিপছিপে গড়নের কারনে বেশ মানিয়েছে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বল্টু। ভাড়া দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বিদায় দিলো জরিনা। গম্ভীর মুখে এসে বল্টুর পাশে বসে পড়লো। বিষন্ন দৃষ্টি সামনের লেকের দিকে।

কিন্তু এটাতো গম্ভীর থাকার জায়গা না। বল্টু সাবধানে জিজ্ঞেস করলো,

: কি হয়েছে? বাসায় কোন সমস্যা? চাইলে আমাকে বলতে পারো!

জরিনা ধীরে ধীরে মাথাটা তুললো। বল্টুর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে বললো,

: চাইবো না কেন? আপনাকেই তো বলবো।

নাকি আরও কেউ আছে এখানে?

বল্টু ভয়ানক বিব্রত হয়ে গেল। বললো,

: না না। বলো, প্লীজ...!

জরিনা বলতে শুরু করলো,

: আমার ছোট বোন রুবিনা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় ফেইল করেছে। লেখাপড়ায় এমনিতে খুবই ভালো!

ইন্টারে রেজাল্টও বেশ ভালো। ইংলিশ এ পড়বে বলে আশা ছিলো। এখনতো সবই গুবলেট হয়ে গেল।

বল্টু খানিকটা অভিমানহত কন্ঠে বললো,

: এগুলো আমাকে আগে বলতে পারো না?

ভর্তির ব্যাপার স্যাপার আগেই বলতে হয়।

সময়মতো দুএকটা জায়গায় গুঁতো দিলেই কেস ফিট!

: বল্টু ভাই, এটা কি ধরনের কথাবার্তা!

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে গুঁতোগুতি করলেই ভর্তি হওয়া যায়? জরিনার কন্ঠস্বরে চরম বিরক্তি।

বল্টু আবারও বিব্রত হয়ে গেল। বিড়বিড় করে বললো,

: তা না। তবে আগে বললে একটা ব্যবস্থা করা যেতো। আমার এক কলিগের মামা একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। দরকার হলে ওনাকে বলতাম!

জরিনা একটু আশাবাদী হয়ে বললো,

: এখন বলুন! কে নিষেধ করছে!

: ঠিক আছে। আমি দায়িত্ব নিলাম। এখন থেকে আমাকে এসব সমস্যা আগে থেকেই বলবে! এবার একটু স্বাভাবিক হও!

কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকাও! দেখো, কি সুন্দর লাল হয়ে সেজে আছে!

জরিনা গাছগুলোর দিকে একটু তাকালো।

আসলেই সুন্দর! কিন্তু এখন এসব ভাবতে ইচ্ছে করছে না। বললো,

: চলুন, বাসার দিকে যাওয়া যাক! রুবিনার ভর্তির ব্যাপারে বাসায় কথা বলি।

সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।

ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও বল্টু্ উঠে দাঁড়ালো।

দুজনে একটা রিকশার দিকে এগিয়ে গেল।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রধানের রুমে তার বিশাল টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বল্টু।

থেকে থেকে হাত কচলাচ্ছে।

উনি একটা টিস্যু পেপার দিয়ে চশমা মুছছেন। দীর্ঘ মোছামুছি।

বল্টুর মনে সন্দেহ দেখা দিলো,

: উনি কি আমার কথা ভুলেই গেলেন!

এরকম তো হবার কথা নয়। মন্ত্রী সাহেবের স্বাক্ষর দেয়া চিঠিটা ওনার সামনেই রাখা আছে।

স্যার হঠাৎ করেই কথা বলতে শুরু করলেন।

: আপনার মন্ত্রী মশাইয়ের চিঠি পড়বো।

তাই ভালো করে চশমাটা মুছে নিলাম।

একটু টিটকারীর আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওনার কন্ঠে।

বলে মাথা নিচু করে চিঠিটা পড়তে শুরু করলেন। পড়ার পর মাথাটা একটু ওপরে তুলে বললেন,

: বয়স কতো আপনার? এই বয়সেই মন্ত্রী চিনে গেছেন! আপনার মন্ত্রীকে গিয়ে বলুন যে আমি খুবই বেয়াদব একজন টিচার। মন্ত্রীর তদবির শুনি না। পারলে আমার চাকরিটা খেয়ে ফেলতে বলুন!

বলতে বলতে উনি দরখাস্তটা বল্টুর মুখের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। কাগজটা পাতলা বলে মুখ পর্যন্ত পৌঁছালো না। বাতাসে ভাসতে ভাসতে মাটিতে পড়ে গেল।

বল্টুর অবস্থা কাহিল। নিজের হাইট নিয়ে সারাজীবনের আফসোস। এখন ভাবছে,

: হাইট আরও কম হলে ভালো হতো।

টেবিলের ওপর দিয়ে ওই রক্তচক্ষু দেখতে হতো না। তাছাড়া, এখন বাইরে অপেক্ষায় থাকা জরিনা ও রুবিনাকে ফেস করবে কিভাবে! বড় বড় কথা বলে নিয়ে এসেছে।

একটাই আশা ছিলো, ভর্তির কাজটা হয়ে গেলে কৃতজ্ঞতায় জরিনা চলে আসবে হাতের মুঠোয়। এবার আর ছাড়াছাড়ি নাই!

কোন কথা ছাড়াই প্রায় দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো বল্টু। দরজার ঠিক বাইরেই ছিলো ওরা। কিছু বলার আগেই জরিনা বলে উঠলো,

: থাক! আর ব্যাখ্যা দিতে হবে না! সবই শুনেছি। কি দরকার ছিলো এতো বাহাদুরি ফলানোর? আপনি পারেনও! রুবিনা চল!

বলে রুবিনার হাত ধরে হনহন করে হাঁটা দিলো।

কিছুই বলা হলো না। চেষ্টার তো কোন কমতি ছিলো না। জরিনা এটাও বুঝলো না! বরং তার হঠকারিতায় লজ্জায় অপমানে বোবার মতো তাকিয়ে রইলো বল্টু।

জরিনাদের হঠকারিতায় এভাবেই বল্টুভাইদের কতো কষ্ট কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, কে জানে! আহা...!

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুধা বিল্ডার্স লি.।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি