ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বল্টু_সমাচার_৯

প্রকাশিত : ১১:২৬, ১৩ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

কাজি সাহেবের অফিসের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে বল্টু এবং তার দুই বন্ধু।

বিকেল চারটায় আসার কথা জরিনার।

পাঁচটা প্রায় বেজে গেছে। কোন খবর নাই।

মোবাইলে কল হচ্ছে। ধরছে না।

এমন দিনেও ভেজাল করবে নাকি!

বল্টু ভীষণ অস্থিরতায় ভুগছে।

গতকাল বিস্তারিত আলোচনা করে সব ঠিক করা হয়েছে।

 

চারটায় এসে পাঁচটার মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ করে সোজা বাসায়। সাক্ষী লাগবে দুজন।

সেটাও ম্যানেজ করা হয়েছে। দুই বন্ধু স্বাক্ষী দেবে। দুজনেই চলে এসেছে।

এখন পাত্রীর খবর নাই।

কাজি সাহেব এরিমধ্যে তিনবার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দেরি করলে জরিমানা নিয়ে বিদায়। সর্বনাশের আর কি বাকি থাকবে!

কতো পটিয়ে পটিয়ে জরিনাকে বিয়ের জন্য রাজি করানো গেছে।

 

বন্ধু দুজনও দেরি দেখে রেগে যাচ্ছে।

একজন তো বলেই ফেললো,

: আর আসছে তোমার জরিনা!

বিয়ের কাজ মানে হলো আগুন নিয়ে খেলা।

এই খেলায় পেট্রোল ঢালতে হয়। তুমি তো কিছুই ঢালতে পারলা না। হবে কেমনে?

দ্বিতীয় বন্ধু বললো,

: পেট্রোল লাগবে না। কেরোসিন ঢেলে দিলেও হতো।

প্রথমজন বলে উঠলো,

: তোমাকে আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সাজতে হবে না! যেই মেয়ে ফোনটা পর্যন্ত রিসিভ করে না, সে কি আর আসবে?

 

ওদের এসব কথাবার্তা শুনে বল্টুর অবস্থা কাহিল। এরকম ফচকে একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। বল্টু ভাবছে,

: কখনো যদি ক্ষমতা পাই, নারী স্বাধীনতার বারোটা বাজিয়ে দেবো! পুরুষ শুধু অর্ডার করবে। আর মেয়েরা ওই অর্ডার পালন করবে। নো হাঙ্কিবাঙ্কি!

এমন সময় দেখা গেল, জরিনাকে নিয়ে একটা রিকশা এসে থামলো।

বল্টুর মুখে হাসি। বিজয়ের হাসি।

 

বিয়ের ঝামেলা শেষ। সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা জমালো। খাওয়া-দাওয়া শেষে বল্টু আর জরিনা একটা রিকশায় করে সোজা বাসায়। বুদ্ধি করে খাট ফাট আগেই গুছিয়ে গেছে বল্টু। আফটার অল বিয়েটা ফাইনাল। বাসর ঘরের মিনিমাম মর্যাদা তো রাখা চাই!

 

দুজনে প্রথমে ড্রইং রুমে সোফায় বসলো।

বল্টুর কেন যেন খুব লজ্জা লাগছে। মুখ ফুটে বাসর ঘরে যাবার কথা বলাটা মুশকিল হয়ে গেল।

এক্ষেত্রে জরিনার লজ্জা পাবার কথা।

কিন্তু ওকে খুব স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।

এতো দিন পরে জরিনাকে নিজের করে পেয়েছে। প্রথম থেকেই টাইট দিয়ে রাখতে হবে। বল্টু একটু গম্ভীর গলায় বললো,

: খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে!

কিচেনে সবই রাখা আছে। চট করে দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো! একসাথে বসে খাই। বিকেল থেকে যা ধকল গেল!

জরিনা খুবই স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

: ভাইয়া, আমি এসব কিচেন ফিচেনের কোন কাজে নেই। এমনিতেই আমার স্কিনটা একটু ডার্ক টোন মারে। মা খুব কড়াভাবে নিষেধ করেছে কিচেনে যেতে। স্কিন নাকি নষ্ট হয়ে যাবে! একটু আদুরে গলায় যোগ করলো, আপনিই কষ্ট করে চা টা বানিয়ে ফেলুন না প্লীজ! একসাথেই খাবো।

 

স্তব্ধ হয়ে গেল বল্টু।

এরকম বেয়াদবির কারণে বল্টুর রেগে যাবার কথা। তার বদলে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,

: এখনও তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকছো?

এটা কি মশকরা করার টাইম?

জরিনা খুবই স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

: কেন? বিয়ে করলে কি ভাইয়া ডাকা যায় না? ডাকলে ক্ষতি কি?

আমার ইচ্ছা! আমি ভাইয়া বলেই ডাকবো!

 

কি আশ্চর্য! কথাগুলো বলে আবার খিলখিল করে হাসছে!

বল্টু এবার ভয়ংকর রেগে গেল। রীতিমতো থাপড়াতে ইচ্ছে করছে জরিনাকে।

কাছে গেল প্রচণ্ড জোরে একটা চড় কষাবে বলে।

কিন্তু হাত কিছুতেই ওপরে তুলতে পারছে না।

হাত তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।

 

পরদিন অফিসে লাঞ্চ ব্রেকের সময় বল্টু জরিনাকে ফোন করলো। তার জানা আছে, মেয়েরা স্বপ্নের কথা শুনতে পছন্দ করে। তার উপর, স্বপ্নের লিডিং ক্যারেক্টার যদি নিজে হয়।

জরিনা রিসিভ করতেই বলে উঠলো,

: খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। শর্টকাট কথা। ধৈর্য ধরে শোন!

জরিনা বললো,

: শর্টকাট কথা শোনার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে কেন? যা বলার তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।

জরিনার জবাব দেবার ভঙ্গিতে তাড়াহুড়ো আছে।

গাঢ় স্বরে বল্টু বললো,

: জানো...গতরাতে তোমাকে নিয়ে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি জরিনা। আমার জীবনের সেরা স্বপ্ন।

দেখলাম কাজি অফিসে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর...

জরিনা একটু কঠিন গলায় বললো,

: বল্টু ভাইয়া, কি যে ঝামেলা করেন! এগুলো বলার আর টাইম পেলেন না! বাসায় মেহমান এসেছে। খুবই ব্যস্ত আছি। তাছাড়া এসব বিয়ে টিয়ের গল্প শুনতে আমার ভালো লাগে না। বলেই কোনরকম বিদায় না নিয়ে লাইনটা কেটে দিল।

বল্টু জাস্ট বোবা হয়ে গেল।

 

জরিনাদের অবজ্ঞায় এভাবেই বল্টুভাইদের কতো কথা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, কে জানে! আহা...!

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুধা বিল্ডার্স লি.।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি