ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

স্বপ্নভঙ্গ

আহসান হাবিব

প্রকাশিত : ২৩:৩০, ২ নভেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

পৃথিবীর আলো বাতাসেই বেড়ে ওঠে মানুষ। আবার পৃথিবী থেকে চিরবিদায়। এ যেনো কঠিন বাস্তবতা। পৃথিবীতে আসার পূর্বে সে কখনো ভাবতে পারে না পৃথিবীটা কত সুন্দর! সে হয়ত ভাবে মায়ের গর্ভটাই তার নিজস্ব জগৎ।

গ্রামের নাম তালানী। সবুজে ঘেরা গ্রামটিতে বাস করে সৈয়দ আলী। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তার পরিবার। দুই ছেলের বিয়ে-শাদী শেষ। বাকী শুধু ছোট মেয়ে আরজুমান।

আরজুমানের বয়স ১৫ বছর। সে দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় হরহামেশায় বিয়ের প্রস্তাব আসে বর পক্ষ থেকে। তবে সৈয়দ সাহেব মেয়ের বিয়ের বিষয়ে নিশ্চুপ। লোকমুখে নানা কথা শুনলেও সে পুরোপুরি অবচেতন মনে দিন পার করে। তবে, মনে চেতনা ফিরতে বেশি সময় লাগলো না। ঘটকবাবুর ফাঁদে পরে সৈয়দ সাহেব পাল্টে গেলো। সে মেয়েকে বিয়ে দিবে। ঘটকের কথামতো ছেলে বাছাই করলো সৈয়দ সাহেব। মিলেও গেলো।

ছেলের নাম আবু তালহা। শহরে থাকে। ভালো বেতনের চাকরি করে। দেখতেও সুন্দর। 

ঘটকের তথ্য অনুযায়ী, ‘ছেলে অনেকের মধ্যে একজন ।’ তার এমন কথা শুনে সৈয়দ সাহেব তাড়াহুড়ো শুরু করলো। এমনকি কাছের আত্বীয়-স্বজনকেও বিষয়টা জানালো না। যত দ্রুত পারা যায় দিনক্ষণ ঠিক করার কাজে সে ব্যস্ত। যদি এমন ছেলে হাতছাড়া হয়! তাই যথাসময়ে বিয়ের কার্যক্রমও শেষ হলো। শুভ দিনটিতে ভরা মজলিশে ছেলের বড়মামা সৈয়দ সাহেবকে আশ্বস্ত করে বলেছিলো, ‘বেয়াইসাব, আমাদের বাড়িতে আপনার মেয়েকে রান্না করে খেতে হবে না।’

কিছুদিন যেতে না যেতেই মেয়ের পড়াশুনা বাবার বাড়ি থেকে শেষ করার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলো। ছেলের পরিবারের চিন্তা ছেলের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। সৈয়দ সাহেবও অধিকার খাটাতে নারাজ। দোয়া কালাম দু-চার লাইন পড়ে মেয়েকে তুলে দিলো জামাইবাবুর হাতে।

সময় গড়িয়ে যেতে থাকলো। আরজুমান তার স্বামী বেচারাকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করছে। যাচ্ছেও বেশ। আরজুমান মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। তাকে পেয়ে শশুর বাড়ির সদস্যরাও বেশ খুশি। স্বামী বেচারারও আরজুমানের বিষয়ে মন্তব্য মনে ধরার মতো। তার উক্তি হলো, ‘কতজনের কপালে এমন বউ জোটে।’ 

অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে গেলো চিত্র। কারণ,আরজুমান মা হতে চলেছে। শাশুরির সাথে আলোচনা না করে কেন বাচ্চা নিতে গেলো মেয়েটি? এমন অভিযোগে শ্বশুর পক্ষ একজোট হলো বাচ্চাটা নষ্ট করার জন্য ।স্বামী প্রথমের দিকে বাচ্চা নেয়ার পক্ষে থাকলেও পরবর্তীতে এক অজানা চাপে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়াল। 

সৈয়দ আলী বেয়াই-বেয়াইনকে অনুরোধ করলো বাচ্চাটা নেয়ার জন্য। কিন্তু নানা অযুহাতে তারা বাচ্চা না নেওয়ার পক্ষে। সৈয়দ আলী জীব হত্যা মহাপাপ বলে কোন ভাবেই বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলো না। অবশেষে জামাইকে বুঝানোর দায়িত্ব নিলো। তাতে কোন কাজ হলো না। সে বললো- ‘আমাদের ভবিষ্যত বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।বাচ্চা নেয়ার অনেক সময় আছে।’ অনেক কিছু বুঝানোর পরে সৈয়দ আলীর মনে হলো অন্যমত জামাই আজ  অন্যায়তম জামাইয়ে পরিণত হয়েছে।

অবশেষে দিন ঠিক হলো ডাক্তার দেখানোর। যেভাবেই হোক গর্ভের সন্তান নষ্ট করতেই হবে। কিন্তু সৈয়দ পক্ষের বাড়তি চাপ থাকায় সুকৌশলে তারিখ পরিবর্তন করা হলো। ওদিকে জামাইবাবুও শশুরকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘বাচ্চা নষ্ট করবো না।সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে উপহার দিতে যাচ্ছেন তা নষ্ট করার অধিকার আমাদের নেই।’

সিদ্ধান্তটা ভেস্তে যাওয়ার কারণে সৈয়দ পক্ষের একজন নিরবে মহান স্রষ্টাকে সিজদা করেছিলো। উভয় পরিবারের প্রথম আগমনী প্রদীপ আসবে বলে আনন্দের কমতি ছিলো না। আহা! কী আনন্দ! কী তৃপ্তি!

বাবার বাড়িতেই কিছুদিন থেকে গেলো আরজুমান। হঠাৎ জামাই শশুরকে ফোন দিয়ে বললো, ‘বাবা আরজুমানকে পাঠিয়ে দিন।ওকে ছাড়া ভালো লাগছে না।’ ওদিকে আরজুমান এমন কথা শুনে প্রস্তুত হয়ে স্বামীর বাড়িতে চলে গেলো।

দুদিন পরে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলো আরজুমানকে। ডাক্তার পরামর্শ দিলো বাচ্চা নেয়ার জন্য। কিন্তু তারা ডাক্তারের কথাও শুনলো না। হত্যা করলো গর্ভের সন্তান। খবরটা শুনে খুব কেঁদেছিলো সৈয়দ আলী। বিলাপ করতে করতে সৈয়দ সাহেবের স্ত্রী বলেছিলো- ‘ওরে, একটা সন্তান আর কতটুকুই খেতো। কত দামের কাপড় পড়তো। তোরা খাওয়ানোর ভয়ে ওকে কেন হত্যা করলি? তোরা আমার কাছে ওকে রেখে দিতি! ওকে আমিই বড় করতাম।’

লেখক ও সাংবাদিক


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি