ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

গোল গল্প

করোনা ও অরক্ষিত মুর্শিদাবাদ

নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ

প্রকাশিত : ২৩:২৬, ৮ এপ্রিল ২০২০

এক টুকরো কাপড়। পরিবর্তিত নাম মুখাবরণী। জীবন বাঁচানোর অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী। এ-গ্রহের সর্বাপেক্ষা শক্তিমান ও চতুর দ্বিপদ প্রাণিকূলের মুখগহ্বর ও নাসারন্ধ্রের অতন্দ্র প্রহরী। দ্বিপদ প্রাণিকূল যার নাম দিয়েছে মাস্ক। নামটি মোটেই পছন্দ হয়নি স্বয়ং মাস্ক মশাইয়ের। স্যানিটাইজার দা কে সে একান্তে বলেছিলও সেদিন। তার নাম মাস্ক হতে যাবে কেন? মাস্ক মানে তো মুখোশ। কালোবাজারী, মজুদদার, যারা পণ্যে ভেজাল মেশায় এসব দ্বিপদ প্রাণিদের মুখোশ না হয়ে বরং তাদের মুখোশ খুলে দেয়া যায় কিনা? সাবান আপাও তাকে সায় দিল। পবন মামার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেছে মাস্ক। পবন মাস্কের মামা হলো কোন সূত্রে ? দক্ষিণে যেখানে মাইলের পর মাইল কার্পাসের নিবিড় রাজত্ব আর মেঘবাহী পবনের একচ্ছত্র আধিপত্য সূত্রটি সেখান থেকে। 
কার্পাসের তন্বী ডালে মাস্কের মা যখন সূতো হবো হবো করছে। সেখানে পবনের সঙ্গে মাস্কের মায়ের বন্ধুত্ব। মামা বলতে খাসা। কুড়িয়ে পাওয়া নয়। মামার ভরসায় মাস্ক তক্কে তক্কে থাকে কখন সুযোগ হবে। দ্বিপদ প্রাণিটিও মুঠোয় রাখা চতুষ্কোণ যন্ত্রটির সাহায্যে বিরামহীন 'বকর', 'বকর' করতে থাকে। তখন পারা যায় না। তার বশংবদ বকর উল্লাও নির্দেশ মোতাবেক মরিচের গুড়ির সঙ্গে ইটের গুড়ি, হলুদের গুড়ির সঙ্গে কাঠের গুড়ি, চালের সঙ্গে কাঁকর ...। বাড়ছে গুদামের অন্ধকারে মজুদ আর বাহিরে হাহাকার। সন্ধ্যা যখন রাত্রির চৌকাঠে পা রাখছে তখনই রুদ্ধশ্বাস অভিযানটি শুরু করে। ঝিনুকের মত শাদা গাড়ি। চালকের পাশে দ্বিপদ প্রাণিটি সুখাবেশে উপবিষ্ট। বলা যায় সান্ধ্যকালীন ভ্রমণসুধা পানে মত্ত তখনই প্রহরা শিথিল করলো মাস্ক। পবন মামা মোষের মত বেগে। আর যায় কোথায়। দেহের অরক্ষিত মুর্শিদাবাদে শত্রুর হানা। প্রথমে গৃহবন্দি, তারপর হাসপাতালের ভিআইপি ক্যাবিনে সবশেষে পাসর্পোট ছাড়াই ঐ গন্তব্যে। প্রথমে গাণিতিক হারে প্রাণিটির স্ত্রী- সন্তান, তারপর জ্যামেতিক হারে পাড়া প্রতিবেশী ...। 

প্রাণহন্তারকের তান্ডবে কেঁপে কেঁপে উঠছে গ্রহটি। যেখানে সকাল-সন্ধ্যা শববহন ছাড়া কারো কোনো কাজ থাকে না। মাস্ক মশাই স্যানিটাইজারদা, সাবান আপা, পবনমামা কেউ প্রাণহরণের এমন মুদ্রা দেখে নি। তারা কি আদৌ দেখতে চেয়েছিল ? তাদের সংগ্রাম নিষ্ঠুর শোষণের বিরুদ্ধে। কারো জীবনের বিরুদ্ধে নয়। তারা এতদিন যে প্রতিরোধের কথা ভেবেছিল তা কারো প্রাণদআণ্ডেই নিহিত ছিল না। বস্তুত প্রাণদণ্ড কেবল প্রাণের অপচয় কোনো সমাধান নয়। হাতে হাত রেখে মাস্ক-স্যানিটাইজার -সাবান-পবন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের চুম্বনে তাদের যুথবদ্ধ হাত ভিজে যাচ্ছে। এবার শববাহকেরা অন্যপেশায় ফিরে যাবার কথাই ভাববে।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি