করোনাকালে লেখা ৪ কবিতা
প্রকাশিত : ১৪:২৮, ১৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৫:১৯, ১৮ জুন ২০২০
দেখো
এই সময় নিজেকে চিনে নাও
নিজের ভেতর ডুব দিয়ে দেখো
দেখো শুকনো পাতা কিভাবে ওড়ে
আনন্দ-আহ্লাদে
দেখো কিভাবে ভেজা গাছের নিচে
স্তব্ধ প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ
এই সময়ে সে
রাতের গভীরে যত সরে যেতে থাকে তারাদের উস্কানি
ততই সে নিকটে আসে ধীরে ধীরে,
খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ,
কথা বলে না কোনো।
বেলী ফুলের গন্ধ ওড়ে চৌদিকে।
চোখ খুলে রাখতে ইচ্ছে করে না।
সঙ্গোপনে শ্বাস টেনে নিতে ভাল লাগে খুব।
সে মৃদু হাসির ঢেউয়ে
চোখের পলক ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,
দেখতে থাকে চারিপাশের মুক্ত প্রতিবেশ,
কাছাকাছি মানুষের ঘ্রাণ থেকে
আমি দেখি তাকে রাতের গভীরে
তারাদের উস্কানিতে।
সূর্যের রক্তমাখা দেহের বাঁক
এখন আর কোনো আড়াল নেই।
দূরের তারায় মিশে গেছে আমাদের মধুরিমা।
অব্যক্ত ক্ষত মুখের দাগে
বন্ধনের চিহ্নগুলি মুছতে পারেনি কেউ।
রোদের ভাষ্য থেকে পাওয়া
সে ভুলে গেছে হৃদ্যতার যাবতীয় কৃৎকৌশল।
অন্ধকারে
জলের খুব গভীরে
কোনো শব্দ হলে ঢেউয়ের টোলে
এখনও ভেসে ওঠে তার মুখ।
ওটাই সূর্যের রক্তমাখা দেহের বাঁক।
ঘরবন্দি
আজ প্রকৃতির বিস্তর আহ্লাদে অনেক মানুষের প্রেম
আনন্দ-বিহারে ছুটে যেতে চায়।
ভ্রমণের নেশা জেগে ওঠে কারো কারো প্রাণে।
দীর্ঘ রাত দিন
ঘরবন্দি থাকতে থাকতে জনরুচি
ভার্সুয়ালে দিকবিগ্বিক ঘুরছে লাটিমের মতো।
অশান্ত বর্ষার ঘ্রাণ থেকে যেন চুয়ে চুয়ে
নামছে আর উঠছে।
শান্ত মুখের দেয়ালগুলি কোথাও কোথাও ভেঙ্গে পড়ছে।
কোনো কারণ ছাড়াই
মানুষের থেকে দূরে দূরে থেকে থেকে
এখন মধ্যবিত্ত নিজেরা নিজেরা ভিডিও ক্লিপে
জ্ঞান ছড়াচ্ছে
এবং মনে করছে এতে কেঁপে উঠছে রাষ্ট্র ও সরকার।
যেন ঝমঝম বৃষ্টির শব্দের ভিতর ডুবন্ত
নাগরিক সম্ভ্রান্ত মনের তোড়াগুলি ভেসে ভেসে
থেমে আছে হাসপাতালের পাশে।
ফুটপাথে কৌতুহলী না খাওয়া মানুষের জটলাও
আকাশের দিকে চেয়ে আছে
যদি মরণতাড়নার ভার কিছু কমে!
এইসব দৃশ্য নগরে বৃষ্টির ভিতর ছুটাছুটি করছে।
উঠে আসছে এসব অনলাইন পোর্টালে।
আমরা দেখছি উপলব্ধি করছি ঘরের কোণে।
কেউ কেউ নিজের সঙ্গে নিজেই
ঘাপটি মেরে বসে বহু দূরের গ্রামে গ্রামে
ছড়ানো ছিটানো বর্ষার ক্রন্দনে
ভিড়ে গিয়ে নিজেদের মনে মনে কাদায় পানিতে
লুটিয়ে পড়ছি আর
চুপিসারে নতুন কেউ আসবে যেন
অবলুপ্ত নদীর গল্প নিয়ে
সেই আশাতে নিজের ভিতর
মেঘের রঙে সেজেগুজে বসেও আছে কেউ কেউ
ঘরবন্দি জানালার ফাঁদে।