ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ইকতিজা আহসান-এর ৩টি কবিতা

ইকতিজা আহসান

প্রকাশিত : ২৩:১৬, ২০ জুন ২০২০

ইকতিজা আহসান

ইকতিজা আহসান

Ekushey Television Ltd.

মাসিক পর্যালোচনার পত্রিকা "বিবিধ"র সম্পাদক ইকতিজা আহসান-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ৬টি। তার রচিত তিনটি কবিতা-

  • বাড়ি ফেরা

প্রশান্তির দিকে যাচ্ছি
থানকুনি পাতার মতো সে থরেবিথরে ফুঁটে আছে!
মায়ের স্নেহের মতো ভাঁটফুল
অথবা ভাঁটফুলের মতো মায়ের স্নেহ দিয়ে গোসল সেড়ে 
ভুলে যাব পথের ধকলসমুহ
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের আদর সাজিয়ে  সোনালু ফুলের মতো বোন চঞ্চল
বহুদিন পর ভাইকে কাছে পেয়েছে সে
সমুদ্রের ঢেউয়ের অগ্রে থেকে থেকে 
ভাইয়ের কাছে আবদার খুলে বসবে  এখন
কখনও ভাইয়ের খুনসুটিতে ঠোঁট ফুলিয়ে উড়ে
অন্য ডালে বসবে অভিমানী প্রজাপতি!
উড়ুক  উড়ুক 
আমি তার ডানার দিকে মুচকি হেসে চেয়ে থাকবো...
দেবদারুর ছায়ার মতো অগ্রজ উঁকি দিয়ে বলবে
গোঁফদাড়ির জংগল বানিয়েছিস পুনরায় 
তখন নিম্নমুখী আমি
আমার হতাশার দিকে তাকিয়ে থাকবো
গলায় ঝুলে থাকা ডিপ্রেশনের মালাটি ক্রুর হেসে আমাকে চিমটি কাটবে
আমি আমার শৈশবের পুকুরপাড়, জামতলার হাতছানী দেখতে পাব
সেসব ছাপিয়ে ঘরভরতি আমার আব্বার কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠবে
আমি ছাড়া কেউ আর সে কণ্ঠস্বর শুনতে পাবে না
আমি জানি কোথাও তাঁকে আর খুঁজে পাব না!
মায়ের আঁচলের আড়ালে আশ্রয় খুঁজবো
আমার চোখের জলে সে আঁচল ভিজে উঠে
সেখান থেকে থানকুনি পাতার ঘ্রাণ এসে আমার নাসারন্ধ্র ভরিয়ে দিবে
আর ছড়িয়ে পরতে থাকবে থোক থোক প্রশান্তি...

  • তোমার পাতার সবুজ কখন স্বপ্ন দ্যাখে? 

ঘন হয়ে আসে পাতার প্রলেপ 
ঘাসের অক্ষরগুলো সবুজ ও নীল
নীলাদ্রি পাহাড়ের দিকে মুঠো মুঠো ধাঁধা 
বহুদূরের স্টেশনে ঘুমিয়ে গেছে গতিপথ 
জরিপ চলে  উন্মুক্ত প্রশ্ন সমাহারে 
ভেতরে ও বাহিরে আমার চন্দ্রগ্রহণ!

মায়ার আফিমবীজ ফলেছিল বাম্পার
আজ প্রহর কুয়াশালীন..... 
গণবিলুপ্তির  তরঙ্গশাসিত তীরে
নদীর চিহ্ন জেগে থাকে....

তোমার পাতার সবুজ কখন স্বপ্ন দ্যাখে?
কখন মুষড়ে পড়ে?

আজ এই বিলম্বিত জটিল প্রসারণ 
কেন্দ্র থেকে ছুটে আসা ইচ্ছেসমূহ
বহুদূরের স্টেশনে বসে দেখছে 
ছেড়ে যাওয়া নির্দিষ্ট বাস....

 

  • ন-প্রহেলিকা

কতগুলি বৃক্ষের কথা বলা দেখি 
রোদ ঘন হয়ে বসে পড়ে  
পাতা আর কাণ্ডে চলে গূঢ় শিহরণ 
গূঢ়চারী বেলা পাখির মতো বসে আছে বৃক্ষের মগডালে
বাতাস উঠলে মনে হয় মগডাল দূর থেকে উড়ে আসা পাখি
দুদণ্ড বিশ্রাম নেয় সে গাছে বসে পৃথিবীর বাতাস থেমে গেলে!
রোদের সাথে কথা হয় তার
যেন অন্তহীন ডায়লগ চলে 
রোদ যেন এক বার্তাবাহক 
নিয়ে এসেছে পৃথিবীর দূর রহস্যের গণ্ডি পেরোনো কোনো মহীয়ান বাক্যের চিরকুট! 

তখন একটি মজা পুকুরে কিছু বুড়বুড়ির জন্ম হয়
কোনো প্রাচীন মৎস্য  ঘুম ভেঙে জাগে
প্রত্ন কোনো কাহিনী-মটকি আছে সেই পুকুরে 
যে চেইন দিয়ে টেনে নেয় রোদের শাবক

উড়ে আসে আরও  কিছু  প্রত্নরোদ
দূর থেকে মনে হয়  রোদের মতো তারা
রোদের শরীর ধরে হয়তো নেমে আসে রোদের বিভ্রম! 

জলের কাছে নেমে আসে রোদের মতো অশরীরী কেউ
জলের উপরে আলতো বিছিয়ে রাখে বিস্তারিত শরীর 
তারা তখন হাঁটে 
জল বলে, মানুষের পৃথিবীটাকে শীতল করতে এসে
দিনে দিনে মানুষের অবিমৃষ্যকারিতায় গরম হয়ে
কোণঠাসা হয়ে আছি আমি!
রোদ তার মহীয়ান বাক্যের চিরকুট তাকে পড়তে দেয় 
জল নিজের ভেতরে ঘনীভূত হয় ফের!
জল নিজের ভেতরে নিজের মওতের ডাক পায়!

পৃথিবীর পর্বান্তরকালে
বৃক্ষ, গুল্মলতা,  জলের সাথে রোদের 
এই ন-প্রহেলিকা চলে...

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি