শরিফুল ইসলাম আকন্দের কবিতা ‘আমাদের বাংলাদেশ’
প্রকাশিত : ১৯:২৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
দক্ষিণ এশিয়ার চমক, অপূর্ব এক দেশ
বিশ্বমানচিত্রে দখলে তার ছোট্ট স্পেস
লাল সবুজের পতাকা খচিত সোনার দেশ
বলতে শুনতে মধুর বেশ বাংলাদেশ।
সমুদ্রে হঠাৎ জেগে ওঠা নয় কোন দ্বীপরাষ্ট্র
নয় আবিষ্কৃত কিংবা কুড়িয়ে পাওয়া ভূখণ্ড
তবে বাংলাদেশ ডেলটা বা বঙ্গীয় বদ্বীপে সৃষ্ট্র।
বিচিত্র এই দেশটির সৃষ্টি ইতিহাসে পুষ্ট।
অস্ট্রিক জাতির প্রভাবধীন বাংলার আদি নাম বঙ্গ বা গঙ্গারিডাই
ঐতরেয় আরণ্যক, বেদ কিংবা আইন-ই-আকবরীতে ইতিহাস ঠাঁই
বর্তমানে পৌঁছাতে বাংলা, পেরিয়েছে তার বহু চড়াই উৎরাই।
মৌর্য, গুপ্ত, স্বাধীন পাল সেনদের আমলেই প্রাচীনকাল
সুলতান, মোগল আর নবাবদের মধ্যযুগের সোনালীকাল।
ভারতীয় উপমহাদেশে ছিলাম স্বাধীন
অবাধ ছিল চলাফেরা সুখেই কাটতো দিন।
যদিও ছিল নিজেদের কিছু দ্বন্দ্ব, তবু ছিলনা মন্দ
নিজেদের শাসনে ছিল আলাদা একটা আনন্দ।
দাউদ খান, ঈশা খাঁ, শামস্ উদ্দিন ইলিয়াস শাহ, ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ
স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে তাঁরা স্বাধীন নেতা শাহান শাহ।
পর্তুগীজ, দিনেমার, ডেনিশ, ফরাসি ও ইংরেজ
বাণিজ্যের ছলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল বেশ।
ব্রিটিশ তো ব্রিটিশ সকলকে করে ফিনিস করেছে কুপোকাত
ব্রিটিশ কলোনী গড়ে ফাঁদ পেতে আমাদেরও মূলে হেনেছে আঘাত।
মীরজাফরেরা ভিনদেশীদের আঁতাতে দেশীদের করেছে পরাধীন
ক্ষমার লোভে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে বানালো অন্যের অধীন।
নবাবের অভাবে স্বাধীন সূর্য হারিয়ে অস্ত ক্রমে দীপ্তিহীন
জাতি নিঃশেষ, নিস্তেজ, নিজস্ব স্বাধীনতা হলো বিলীন।
ক্ষমতা ও অর্থের লোভে আপন ছেড়ে অমানুষ করে বড়াই
পুতুলের বৃথা অহমিকা তার, আপন শক্তির চেয়ে বড় শক্তি নাই।
আইনের যাঁতাকলে প্রায় ২০০ বছরের শাসনে দেশিদের হয়েছে নাভিশ্বাস।
হঠাও ব্রিটিশ আনো নিজেদের শাসনমুক্ত করো দেশ, তবেই পাব প্রশ্বাস
মজনু শাহ, তীতুমীর, শরিয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহী বড় নেতা
ক্ষুদিরাম, প্রফুল্লচাকি, সূর্যসেন ও প্রীতিলতা আন্দোলনে দিল নতুনমাত্রা।
কংগ্রেস, মুসলীম লীগ, ছোট-বড় বহু দল দেশের স্বার্থে সৃষ্টি
বঙ্গভঙ্গ পরে তা রদসহ নানা অভিযোগে বহু পাল্টাপাল্টি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোন্দল, বিশ্বে জুড়ে আলোড়ন, ব্রিটিশ হলো দুর্বল,
হয়েছে অনেক গণ্ডগোল, বহু উপনিবেশ হলো ব্রিটিশদের বেদখল।
চৌদ্দই আগস্ট ১৯৪৭ সৃষ্টি হল পাকিস্তান, পরের দিন হিন্দুস্তান।
স্বাধীন হল আমাদের উপমহাদেশ, ব্রিটিশ শাসনের অবসান।
পাকিস্তানের দু’অংশে সুদূর ব্যবধান দুটি ভিন্ন দরবার।
উভয়ই মুসলমান তবে আলাদা ভাষা, কৃষ্টি-কালচার।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নাজিমুদ্দিন ও নূরুল আমীন সরকার
উর্দুতেই অনড়, রাষ্ট্রভাষা উর্দু ছাড়া অন্য ভাষা হবে না আর।
শহীদুল্লাহ, শামসুল হক, শেরে বাংলা, শেখ মুজিবসহ অনেক রুই কাতলা
বাংলার আপামর জনগণ, ছাত্র পরিষদ সকলেই পদে পদে দিল বাঁধা।
রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিক আরো অনেকের গেল তাজা প্রাণ
আন্দোলন হলো বেগবান জনদাবির মুখে বাধ্য হলো পাকিস্তান
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দিল ছাপান্ন এর সংবিধান ।
আটান্নয় আইয়ুব সরকার চালাল সামরিক অপশাসন
বাষট্টিতে শিক্ষার নামে ছিল জুলুম-নির্যাতন।
ছেষট্টির ছয় দফা বাংলার মেঘনাকার্টা, আটষট্টিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
গণঅভুত্থানে শহীদ আসাদ, জহুরুল, শামসুজ্জোহা, অনেক মেহনতি জনতা।
সত্তরে নিবাচর্নে বিজয়ী দলকে ইয়াহিয়া করেনি ক্ষমতা হস্তান্তর
আলোচনার নামে গোপনে করে মানুষ মারার ষড়যন্ত্রর।
পঁচিশে মার্চের ভয়াল রাতে সামরিক জান্তার সার্চলাইট নামক অপারেশন
তবে সাতই মার্চের ভাষণে নেতার ছিল অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধের ডিরেকশন।
দুর্বার আঘাতে শত্রু নিপাতে ঘরে আসে বিজয়
বীর বাঙালি মরবে, হারবে না, জানবে নিশ্চয়
বাংলাদেশ ত্রিশলাখ শহিদের রক্তের বিনিময়।
বাংলার অতীত রাজধানী পুণ্ড্র নগর কিংবা পানাম সিটি
ঘাত প্রতিঘাতে ঢাকা এখন বাংলাদেশের রাজধানী।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র
ভারত, মায়ানমার বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি রাষ্ট্র আছে যোগসূত্র।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, বন্ধুত্বে বিশ্বাসী
বাংলাদেশী প্রবাসী সারাবিশ্বে উজ্জ্বল ভার্বমূতি।
প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরপুর উন্নয়নের রোল মডেল
গার্মেন্টস, কৃষি, নানা প্রযুক্তিতে মেরেছে ঢেল।
বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল না কখনই এখনও নয়
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নতদেশ নিকট সম্ভাবনাময়
বাংলাদেশ এশিয়ান অর্থনৈতিক টাইগার বিশ্বের বিস্ময়।