গুলদহ: দরিদ্র জীবনের এক গভীর সংকটের গল্প
প্রকাশিত : ২১:১৮, ৩১ মার্চ ২০২১ | আপডেট: ২১:৫৮, ১ এপ্রিল ২০২১
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদ রহমানের উপন্যাস ‘গুলদহ’। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ৫০৩ একরের বিস্তৃত একটি জলমহলের নামে এ উপন্যাসের নামকরণ। গ্রামের এক সহজ সরল গৃহবধূর হত্যা রহস্যের অনুসন্ধান দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। বইটিতে, এক দরিদ্র গৃহবধূর নারী লোভী সমাজপতির লালসা থেকে অনেক পুরুষের নির্যাতনের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জাহিদ রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে দরিদ্র জীবনের এক গভীর সংকটের গল্প। উপন্যাসের বর্ণনা গ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা। প্রসঙ্গ নারী লোভ, দারিদ্র্যের পরাজয়, ডাকাতি, মাদক, জুয়া আর সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত কিছু মানুষের চারিত্রিক বিচিত্রতা রয়েছে। একটি খুনের বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে পুরো সমাজের বহিরাঙ্গন, বহিরাঙ্গনের সংকট, অন্তর্জগতের কথাপ্রকৃতি ও প্রকৃতিলগ্ন জীবনের রূপ-রূপান্তর, সমাজের অন্তর্দেশে বয়ে চলা সমস্যা, সর্বোপরি মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন। গুলদহ উপন্যাসের বিষয়বস্তু কল্পিত নয়। অতিসাধারণ মানুষই এ গল্পের বিষয়বস্তু। গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ জীবনযাপন, আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্নভঙ্গ ও যন্ত্রণার বিষয়ই খুব সহজ বর্ণনা করে গেছেন গুলদহ উপন্যাসে।
সহজ-সরল অথচ পরিশীলিত ভাষায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে লেখক তার পুরো উপন্যাসকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। গুলদহ উপন্যাসে লেখক গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার বাস্তবচিত্র, অসঙ্গতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। তিনি অনুসন্ধান করেছেন সমাজ ও মানুষের জীবন। অনুসন্ধান করেছেন বিত্তহীন ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জীবনযাপন। জাহিদ রহমানের উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য গ্রামীণ জীবন ও সমাজ। সব সাহিত্য হচ্ছে আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রজীবনের ইতিহাস। ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করাটাই হচ্ছে শিল্প। এ কারণেই বলা হয় সাহিত্যের মধ্যে থাকে লেখকের প্রকাশক্ষমতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কল্পনাশক্তি।
বইটির ফুট নোটে বলা হয়েছে- গুলদহ একটি বিলের নাম। অনেক বড় বিল। এপাশ থেকে ওপাশ দেখা যায় না। আগে অনেক পানি হতো গ্রামের লোকজন বিলে মাছ ধরতো আর বিলের পানিতে ধান চাষ করতো। এই বিলের কচুরিপানার ভেতর একটি লাশ পাওয়া গেল। লাশটা কার চেনা গেল না, তবে একটা মেয়েমানুষের লাশ তা বোঝা গেল। এই মেয়েমানুষটারও হয় তো প্রেম, ভালোবাসা, স্বামী-সংসার ছিল। এসব বর্ণনার মাঝে জীবনকেন্দ্রিক বোধ ও উপলব্ধির এক বিস্মৃত ও গভীর পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে উপন্যাসজুড়ে। তিনি তার উপন্যাসে তুলে এনেছেন বিত্তহীন এবং নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন। উপন্যাসের চরিত্রগুলো উঠে এসেছে বাস্তব সমাজ থেকেই। যেখানে কৃত্রিমতার লেশমাত্র ছোঁয়া নেই।
বইটি সম্পর্কে জাহিদ রহমান বলেন, একটি খুনের পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান রয়েছে বইটিতে। রয়েছে গ্রামীণ জীবন ও সমাজ। নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজপতিদের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ বইটিতে সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ জীবনের দর্পণ হিসেবে বইটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার মতো বলে আমি মনে করি।
এ বইটি প্রকাশ করেছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মো. সাদিতউজজামান। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার স্টল-৩৩১ এ পেন্সিল পাবলিকেশন্সে।
আরকে//