দুই বাংলার কবিদের নিয়ে দশম জীবনানন্দ কবিতা মেলা
প্রকাশিত : ২৩:১২, ২১ অক্টোবর ২০২২
‘তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল, সূর্য মানে আলো’শিরোনামে রাজশাহীতে দুদিনব্যাপী জীবনানন্দ কবিতা মেলার দশম আসর বসেছে। এপার বাংলা ওপার বাংলার কবিদের নিয়ে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) শুরু হয়েছে কবিতা মেলার দশম আসর।
রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম কলেজ প্রাঙ্গণে এ মেলার আয়োজন করেছে রাজশাহী ভিত্তিক কবি ও লেখকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন রাজশাহী ‘কবিকুঞ্জ’। এতে দুই বাংলার প্রায় আড়াইশ’ কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার ও সংস্কৃতিকর্মী অংশ নিয়েছেন।
সকালে এ কবিতা মেলার উদ্বোধন করা হয়। শুরুতেই অনুষ্ঠান মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট রাজশাহীর শিল্পীরা। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কবি জুলফিকার মতিন। একইসঙ্গে কবিকুঞ্জের পতাকা তোলেন সংগঠনের সভাপতি কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক।
পরে জুলফিকার মতিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এবারের কবিতা মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় মঞ্চের সামনেই রাখা হয়েছিল উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্য হাসান আজিজুল হকের প্রতিকৃতি। সেখান শ্রদ্ধা জানানো হয় পুষ্পমাল্য দিয়ে। এছাড়া একমুঠো ফুলের পাপড়ি দিয়ে হাসান আজিজুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
এছাড়া কবিকুঞ্জের স্মারকপত্রটি উৎসর্গ করা হয় কবিকুঞ্জের অন্যতম উপদেষ্টা রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ নিতাই লাল বাছাড়কে।
এরপর অতিথিরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করে প্রখ্যাত এ কথাসাহিত্যিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, কবি জুলফিকার মতিন, কবি আসাদ মান্নান, ওপার বাংলার কবি সৈয়দ হাসমত জালাল, প্রাণজি বসাক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নারী নেত্রী কল্পনা রায়।
সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা একে একে বক্তব্য দেন।
কবি আলমগীর মালেক ও শাহনাওয়াজ প্রামাণিক সুমন পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
দুদিনব্যাপী কবিতামেলার উদ্বোধক কবি জুলফিকার মতিন বলেন, মানুষ পৃথিবীতে এসেছে মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্বকে প্রকাশ করার জন্য। জীবনের দুটো দিক রয়েছে। একটি হলো তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম-জীবন সংগ্রাম। আরেকটি তার মানুষ হয়ে ওঠার সাধনা। সৃজনশীলতার অগ্রবর্তী পথিক হিসেবে কাজ করেন কবিরা। কবিদের এ মিলনমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুপুরে কবিতামেলার প্রথম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকেলে। দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম পর্বে আবৃত্তি ও কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ হয়। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনায় অংশ নেন ভারতের কবি মোস্তাক আহমেদ, কবি গৌতম মিত্র ও অধ্যাপক গোলাম কবির। এ পর্বেও আবৃত্তি ও কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ হয়। তৃতীয় পর্বে ছিল গল্পপাঠের আসর।
কবিতা মেলার দ্বিতীয় দিন আগামী শনিবার (২২ অক্টোবর) দেওয়া হবে কবিকুঞ্জ পদক। রাজশাহীতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এরইমধ্যে সমগ্র দেশ ও পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে পরিচিত লাভ করেছে কবিদের সংগঠন ‘কবিকুঞ্জ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি প্রতিবছর জীবনানন্দ কবিতা মেলা আয়োজন করে থাকে। এ বছর কবিকুঞ্জ পদক পাচ্ছেন কবি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ছোট কাগজের সম্মাননা পাচ্ছেন ‘চিহ্ন’র সম্পাদক শহিদ ইকবাল। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্র গবেষক বঙ্গবন্ধু প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা।
দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার বিভিন্ন পর্বে থাকবে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, ছোট গল্পপাঠ, একক ও দলীয় আবৃতি এবং আলোচনা সভা।
কেআই//