জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাংবাদিক জীবন
প্রকাশিত : ১৫:৩৩, ২৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৫৪, ২৭ মে ২০১৯
কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় জাগরণ,মানবতা, সাম্য-মৈত্রী, প্রেম ও দ্রোহের-অগ্রসেনানী কবি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতি সত্ত্বার বংশীবাদক । যাঁর কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে নির্যাতিত নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানবতার জয়গান । বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠকবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। সে বিদ্রোহ হচ্ছে সকল অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে। তবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ প্রকট রূপ ধারণ করেছিল। নজরুল ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম। নজরুলের ডাক নাম ছিল ’দুখু মিয়া ’ ১৯০৮ সালে পিতার মৃত্যু হলে নজরুল পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য হাজী পালোয়ানের মাযারের সেবক এবং মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তিনি গ্রামের মকতব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। শৈশবের এ শিক্ষা ও শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে নজরুল অল্পবয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান, যেমন পবিত্র কুরআন পাঠ, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। পরবর্তী জীবনে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে ইসলামি ঐতিহ্যের রূপায়ণে ওই অভিজ্ঞতা সহায়ক হয়েছিল
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ’ বিদ্রোহী কবি’এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ’বুলবুল’ নামে খ্যাত। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণমুক্ত কবিতা রচনায় তাঁর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী কবিতার জন্যই ‘ ত্রিশোত্তর আধুনিক কবিতার সৃষ্টি সহজতর হয়েছিল বলে মনে করা হয়। নজরুল সাহিত্যকর্ম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলায় পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ এবং দেশি-বিদেশি শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। এ কারণে ইংরেজ সরকার তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ ও পত্রিকা নিষিদ্ধ করে এবং তাঁকে কারাদন্ডে দন্ডিত করে। নজরুলও আদালতে লিখিত রাজবন্দীর জবানবন্দী দিয়ে এবং প্রায় চল্লিশ দিন একটানা অনশন করে ইংরেজ সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং এর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গ্রন্থ উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা জানান।
নজরুল তাঁর কবিতায় ব্যতিক্রমী এমন সব বিষয় ও শব্দ ব্যবহার করেন, যা আগে কখনও ব্যবহূত হয়নি। কবিতায় তিনি সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণাকে ধারণ করায় অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে মানবসভ্যতার কয়েকটি মৌলিক সমস্যাও ছিল তাঁর কবিতার উপজীব্য।
নজরুল তাঁর সৃষ্টিকর্মে হিন্দু-মুসলিম মিশ্র ঐতিহ্যের পরিচর্যা করেন। কবিতা ও গানে তিনি এ মিশ্র ঐতিহ্য চেতনাবশত প্রচলিত বাংলা ছন্দোরীতি ছাড়াও অনেক সংস্কৃত ও আরবি ছন্দ ব্যবহার করেন। নজরুলের ইতিহাস-চেতনায় ছিল সমকালীন এবং দূর ও নিকট অতীতের ইতিহাস, সমভাবে স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব ।
আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল। বাংলা সাহিকত্যাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। কাজী নজরুল ইসলাম মূলত কবি। হলেও সাংবাদিক হিসেবে তিনি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় ব্যয় করেছিলেন। তা নিয়ে আমাদের ভেতরেও তেমন আলোচনাও হয় না। সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চা একটি অন্যটির পরিপূরক। কেননা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক যেদিকেই নজরুল কাজ করেছেন। সেদিকেই অনিন্দ্য সুন্দর ফুল ফুটেছে। সে কাননে সবুজ ডাল-পালা চারদিকে পল্লবিত হয়েছে। এমনকি সাংবাদিকতায়ও নজরুল একটি বিশিষ্ট আসন অধিকার করে আছেন। বিভিন্ন সাময়িকপত্র তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষেত্রেও তিনি অনন্য ও অসাধারণ পান্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। করাচি সেনানিবাসে হাবিলদার পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তাঁর সাহিত্য জীবন শুরু হয়। করাচি সেনানিবাস থেকে প্রেরিত তাঁর কয়েকটি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ কলকাতার ‘ সওগাত`, ‘ প্রবাসী` এবং ‘ বঙ্গীয় সাহিত্য পত্রিকা` প্রভৃতিতে প্রকাশিত হয়।
প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালের মার্চ মাসে নজরুল দেশে ফিরে কলকাতায় সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। কলকাতায় তাঁর প্রথম আশ্রয় ছিল ৩২নং কলেজ স্ট্রীটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি-র অফিসে সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে।
নজরুল এবং মুজফফর আহমদ সমকালীন অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের চিন্তা-ভাবনা করেন। সে সময়ের অন্যতম খেলাফত নেতা ও হাইকোর্ট আইনজীবী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এ ব্যাপারে তাঁদের উৎসাহ দেন এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে সম্মত হন। ১৯২০ সালে ২ জুলাই দৈনিক ’নবযুগ` নামে একটি সান্ধ্য দৈনিক প্রকাশিত হয়। সম্পাদক হিসেবে একে ফজলুল হকের নাম মুদ্রিত হলেও মূলত নজরুল এবং মুজফফর আহমদই ছিলেন এ পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক। সাংবাদিকতায় এ দু`জনের কারোরই কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পত্রিকাটি পাঠক সমাজে বিশেষ সাড়া জাগায় এবং পাঠক প্রিয়তা লাভে সক্ষম হয়। নির্ভীকতা হচ্ছে সাংবাদিকতার প্রধান ধর্ম, সেই নিরর্ভীকতা ছিল নজরুলের আজন্ম শপথ। সে কারণেই পত্রিকাটি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং নজর কাড়তে সক্ষম হয়। আর অন্যদিকে বিশেষত এ কারণেই তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের শ্যেন দৃষ্টি পড়ে পত্রিকাটির উপর। পত্রিকায় প্রকাশিত ‘মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে` শীর্ষক প্রবন্ধের জন্য পত্রিকাটির জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। কমরেড মুজফফর আহমদের স্মৃতি কথায় জানা যায় প্রবন্ধ প্রকাশের আগে নজরুলের গরম লেখার জন্য পর পর দু`বার কিংবা তিনবার সরকার ‘নবযুগ` পত্রিকাটিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন`। ‘দৈনিক নবযুগ` পত্রিকার সম্পাদকীয় স্তম্ভে নজরুলের জ্বালাময়ী ও আবেগপূর্ণ প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতো।
নজরুলের সাংবাদিক প্রতিভা সম্পর্কে মুজফফর আহমদ নিজেই বলেন, ‘নজরুল ইসলাম বড় বড় সংবাদগুলো খুব সংক্ষিপ্ত করে নিজের ভাষায় লিখে ফেলতে লাগলো। তা না হলে কাগজে সংবাদের স্থান হয় না। নজরুলের বড় বড় সংবাদের সংক্ষেপণ করতে দেখে আমরা আশ্চর্য হয়ে যেতাম। ঝানু সাংবাদিকরাও এ কৌশল আয়ত্ত করতে হিমশিম খেয়ে যান।`
‘দৈনিক নবযুগ` পত্রিকার জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ ছিল নজরুলের দেয়া সংবাদ হেডিং। প্রত্যেকটি সংবাদের হেডিং ছিল পান্ডিত্যে ও বৈদগ্ধ্যে সমৃদ্ধ। হেডিং পাঠ করলেই বুঝা যায় যে, এগুলো তাঁর হাতের সৃষ্টি। হেডিংয়ে বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্য তিনি লোক সাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলী, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনারও দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পংক্তি ভেঙে নতুন হেড়িং রচনা করেছেন।
যেমন-
১. আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার পরাণ সখা ফৈসুল, হে আমার।
২. কালাতে ধলাতে লেগেছে এবার মন্দ মধুর হাওয়া দেখি নাই। কভু দেখি নাই ওগো, এমনি ডিনার` খাওয়া, নবযুগ` প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯২২ সালের মে মাসে নজরুল দৈনিক সেবক` পত্রিকায় যোগদান করেন। এ পত্রিকার মালিক ছিলেন মাওলানা আকরম খাঁ। দুর্ভাগ্যক্রমে নজরুল এই পত্রিকার সঙ্গে বেশিদিন যুক্ত থাকতে পারেননি। ১৯২২ সালের ২৫ জুন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পরলোক গমনের পর নজরুল এক বিরাট সম্পাদকীয় প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রবন্ধটিতে নজরুলের অনেক আবেগ ও উচ্ছবাস ছিল। লেখাটি কর্তৃপক্ষের মনঃপুত হয়নি। ১৯২২ সালের ১১ আগস্ট নজরুলের সম্পাদনায় অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু` প্রকাশিত হয়। ‘নবযুগ` পত্রিকায় নজরুলের বিশেষ ভূমিকার পর ‘ধূমকেতু` প্রত্রিকার প্রকাশ ছিল একান্তই যেন অবধারিত। পত্রিকার অভিনন্দন জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ প্রমুখ অনেকেই আশীর্বাণী প্রেরণ করেন।
রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী ছিল-
আয় চলে আয়, যে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গ শিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলক্ষণের তিলক রেখা
রাতের ভালো হোক না লেখা
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে,
আছে যারা অর্ধচেতন।
পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় ‘ধূমকেতু` পত্রিকার আদর্শ ও উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয় :-
‘আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। আমি প্রথমে আমার যাত্রা-শুরুর আগে আমার সত্যকে সালাম জানাচ্ছি- নমস্কার করছি আমার সত্যকে। দেশের যারা শত্রু। দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভন্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু` হবে আগুনের সম্মার্জনী। ‘ধূমকেতু` কোন সাম্প্রদায়িক কাগজ নয়। মানুষ্য ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্যে।`
নজরুল ইসলাম ধূমকেতু` পত্রিকাই প্রথম ভারতের পূর্ণস্বাধীনতার কথা তেজস্বী ভাষায় ব্যক্ত করেন। সম্পাদকীয়তে নজরুল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন : ‘সর্বপ্রথম ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা এ কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন।
ভারত বর্ষের এক পরমাণু অংশ ও বিদেশীর অধীন থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা-রক্ষা, শাসন ভার, সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। তাতে কোন বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকাটুকু পর্যন্ত থাকবে না।`
‘ধূমকেতু` দ্বাদশ সংখ্যায় প্রকাশিত নজরুলের ‘আনন্দময়ীর আগমনে` শীর্ষক কবিতার জন্য তিনি কারারুদ্ধ হন। ‘নবযুগ` পত্রিকার ন্যায় ‘ধূমকেতু` পত্রিকায়ও নজরুল বিশেষ কুশলাদি প্রদর্শন করেন। যেমন-লাঠি যার মাটি তার` (৭ম সংখ্যা)
‘মহরম নিয়ে দহরম মহরম` (৮ম সংখ্যা)।
সুকৌশলে তিনি স্বরচিত কবিতা ও সংযোজন করেছেন-
শুরুতেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর সদ্যোরচিত বাঁধন-হারা উপন্যাস এবং বোধন,শাত-ইল-আরব,বাদল প্রাতের শরাব ,আগমনী, খেয়াপারের তরণী, কোরবানী, মোহরর্ম, ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম, প্রভৃতি কবিতা প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাংলা সাহিত্যের এ নবীন প্রতিভার প্রতি সাহিত্যানুরাগীদের দৃষ্টি পড়ে। কবি-সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় প্রকাশিত এক পত্রের মাধ্যমে নজরুলের ‘খেয়া পারের তরণী’এবং বাদল প্রাতের শরাব’ কবিতা দুটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং বাংলার সাস্বত সমাজে তাঁকে স্বাগত জানান। নজরুল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজালুল হক, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ সমকালীন মুসলমান সাহিত্যিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন।
অপরদিকে কলকাতার তৎকালীন জমজমাট দুটি সাহিত্যিক আসর ’গজেনদার আড্ডা’ ও ভারতীয় আড্ডায় অতুলপ্রসাদ সেন, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়,ওস্তাদ করমতুল্লাখাঁ, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, শিশিরকুমার ভাদুডী, হেমেন্দ্রকুমার রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু লাহিডী, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার সমকালীন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নাট্যজগতের দিকপালদের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ পান। নজরুল ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; তখন থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত দু দশক বাংলার দু প্রধান কবির মধ্যে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ ছিল।
নবযুগ পত্রিকার সাংবাদিকরূপে নজরুল যেমন একদিকে স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক জগতের রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থা নিয়ে লিখছিলেন, তেমনি মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে উপস্থিত থেকে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হচ্ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ঘরোয়া আসর ও অনুষ্ঠানে যোগদান এবং সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তরুণ কবির সংস্কৃতিচর্চাও অগ্রসর হচ্ছিল।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের র্মযাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি,সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল র্সবদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতফিলতি হয়েছে। অগ্নীবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ।
শোষণ-বঞ্চণার বিরুদ্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কলম ছিলো প্রতিবাদী। স্ব-ধর্মে স্থিত থেকে সব ধর্মকে শ্রদ্ধা আর মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী ও বনাঢ়্য কর্মময় জীবন আজো মুক্তির পথ দেখায় এবং
অন্যায়,অবিচার ,সাম্য, মানবতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় অনুপ্রেরণা যোগায়।
- আনোয়ারুল কাইয়ুম কাজল