ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শুদ্ধাচারী হওয়ার বার্তা দেয় ‘শুদ্ধাচার’

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ২২:১১, ২৫ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১২:৩০, ২৭ মার্চ ২০২০

শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়। যার দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্য নিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্র নিষ্ঠা। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে।

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত শহীদ আল বোখারী মহাজাতক লিখিত শুদ্ধাচার গ্রন্থে ব্যক্তি জীবন থেকে জাতীয় জীবনে পালনীয় মূল্যবান অনেক পরামর্শ স্থান পেয়েছে। লেখক তার প্রায় পঞ্চাশ বছরের কর্মজীবনের গবেষণা, পর্যবেক্ষণ থেকে ভালো-মন্দ, নীতি নৈতিকতার শিষ্টাচার, শুদ্ধাচার সম্পর্কিত বিষয়গুলো গ্রন্থে তুলে এনেছেন।

যা কিছু ন্যায় ও মানবিক তা-ই শুদ্ধ। আর যা কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তা-ই অশুদ্ধ। ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। আর স্বাভাবিকভাবেই শুদ্ধাচারী জাতি নির্মাণে শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু হতে হবে পরিবার থেকে। কারণ ব্যক্তির শুদ্ধাচার চর্চার লালনভূমি তার পরিবার। পরিবারে শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে, সমাজে। তার প্রভাব পড়বে জাতীয় জীবনে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ শুদ্ধাচারী হলেই দুর্নীতি ও অনাচারমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। এসব দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্থান পেয়েছে গ্রন্থটিতে।

বইটির ফ্লাপে লেখা রয়েছে, ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। আপনার আচারই বলে দেবে আপনি ধার্মিক, না অধার্মিক। আসলে ধার্মিক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো ধার্মিক বলে গণ্য হতে পারে না। 

শুদ্ধাচারী হতে হলে প্রথম প্রয়োজন ব্যক্তির আচার-আচরণে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। বর্তমান সংকলনে এ ধারণাগুলোই দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে—সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষায়। আন্তরিকতার সাথে যিনিই এগুলো অনুসরণের চেষ্টা করবেন, নিঃসন্দেহে তিনি হয়ে উঠবেন পরিশীলিত ভালো মানুষ। তিনিই হয়ে উঠবেন শুদ্ধাচারী। পরিবার থেকে শুরু হোক শুদ্ধাচার চর্চা। ছড়িয়ে পড়ুক সমাজে।

বইটির লেখক শহীদ আল বোখারী মহাজাতক (তিনি মহাজাতক নামে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক মেডিটেশন চর্চার পথিকৃৎ। জীবনযাপনের বিজ্ঞান কোয়ান্টাম মেথডের উদ্ভাবক ও প্রশিক্ষক। ২৮ বছর ধরে এক নাগাড়ে দেশজুড়ে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। মেডিটেশন চর্চার ইতিহাসে উদ্ভাবক কর্তৃক এককভাবে ক্লাস নিয়ে ৪৬৯টি কোর্স সম্পন্ন করা বিশ্বে এই প্রথম। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলা ভাষায় সর্বাধিক পঠিত নন-ফিকশন গ্রন্থ কোয়ান্টাম মেথডসহ তার রচিত সবগুলো বই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। 

বইটিতে ১৮টি অধ্যায় রয়েছে। এসব অধ্যায়ে শুদ্ধাচার সংক্রান্ত করণীয় বর্জনীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যায়গুলো হলো-পরিবার, ঘরোয়া পরিবেশ, দৈনন্দিন জীবন, ফোনালাপ, সামাজিক পরিমণ্ডল, আপ্যায়নে-আতিথেয়তা, প্রসঙ্গ শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, সঙ্ঘাচার, আলোচনা অনুষ্ঠান, মোবাইল ফোন, টিভি ও কম্পিউটার, ইন্টারনেট,দৈনন্দিন কেনাকাটা, ভ্রমণে যানবাহন, ডাক্তার রোগী শুশ্রূষা, ইবাদাত ও পবিত্র ধর্ম বাণী।  

পরিবারে: শুরু করুন পরিবার থেকে। একজন মানুষের আসল রূপ প্রকাশ পায় পরিবারে, ঘরোয়া পরিবেশে। কিন্তু সাধারণভাবে ঘরেই শুদ্ধাচারের অনুশীলন হয় সবচেয়ে কম। ঘরে যত শুদ্ধাচারী হবেন, সদাচারী থাকবেন, পরিবারে প্রশান্তি তত বাড়বে; বাইরেও আপনি স্বত:স্ফূর্তভাবে সুন্দর আচরণ করতে পারবেন। এ অধ্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে ২৪৭টি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুরু করুন পরিবার থেকে কলামে রয়েছে ১৬টি, বাসায় ২৬টি, মা-বাবা, অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে ৫৩টি, দাম্পত্য জীবনে ৪১টি, সন্তান লালনে ৩৫টি, তারুণ্যে ৪১টি এবং বিয়ে নিয়ে ৩৫ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় বর্জনীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  

ঘরোয়া পরিবেশে: প্রতিবেশী, অধস্তন ও গৃহকর্মীর সাথে আচরণ একজন মানুষের জীবন বোধের পরিচায়ক। সেই সাথে সুখী সুন্দর নীড়ের অন্যতম শর্ত পরিচ্ছন্নতা ও রুচিশীলতা। এ অধ্যায়ে বিভিন্ন কলামে রয়েছে ১৪০টি পরামর্শ। এর মধ্যে প্রতিবেশীর সঙ্গে ১৭টি, গৃহকর্মী/অধীনস্থদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ৩৫টি, রান্নাঘরে ৯টি, বাথরুম ও টয়লেট ব্যবহারে ২৭টি, ভাড়াটিয়া হিসেবে ৮টি, বাড়িওয়ালা হিসেবে ৯টি, সিঁড়ি বা লিফটে ১৫টি এবং গ্যারেজে ব্যবহারে ১০টি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, সচেতনভাবে বিরত থাকুন শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে হয়েছে।

দৈনন্দিন জীবনে: সামাজিক মুখোশ নয়, অন্তর্গত শক্তিই হচ্ছে আপনার সত্যিকার ব্যক্তিত্ব। আর অন্তর্গত শক্তির উৎস হচ্ছে সঠিক জীবনদৃষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টির প্রকাশ ঘটে সুন্দর কথোপকথন, সদাচরণ আর রুচিসম্মত পোশাক ও প্রসাধনে। এ অধ্যায়ে সালাম ও কুশল বিনিময়ে ৭টি, পোশাক-প্রসাধনে ১৭টি, সমায়ানুবর্তিতায় ৮টি, নিয়ম অনুসরণে ৭টি, চলাফেরায় ১৮টি, সাধারণভাবে করণীয় ১৯টি, আমানত রক্ষায় ৮টি ও কথোপকথনে ২৫টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সচেতনভাবে বিরত থাকুন এবং মুদ্রাদোষের ব্যাপারে সচেতন হোন শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ফোনালাপ: ফোন এখন দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি প্রযুক্তি। ফোনে আপনার কথা বলার ধরণ অপরপ্রান্তের শ্রোতার মনে আপনার বিমূর্ত ছবি দাঁড় করিয়ে দেয়। আপনার সম্পর্কে এই ধারণা শ্রোতার মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতন হোন-কোথায় কখন কাকে কী বলছেন, কীভাবে বলছেন। এ অধ্যায়ে ফোনালাপে অনুসরণীয় ৭৪টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ফোনালাপে শুদ্ধাচার শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সামাজিক পরিমণ্ডলে: প্রথম পরিচয়ে আপনার আচরণই অপরপক্ষের মনে রেখাপাত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রথম ধারণাই স্থায়ী রূপ নেয়। তাই প্রথম পরিচয়ে সঠিক ও সুন্দর আচরণ অন্যের সাথে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। আর নতুন পরিবেশে, লোকসমাগম স্থলে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, মসজিদ বা উপাসনালয়ে আপনার আচরণ দেখেও অন্যেরা আপনার সম্পর্কে ধারণা করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের আন্তরিক অনুশীলন করে আপনিও পরিণত হতে পারেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে। এ অধ্যায়ে প্রথম পরিচয়ে ২৫টি, নতুন পরিবেশে ২৫টি, হোটেলে/রোস্তোরাঁয় ৫৫টি, উৎসবে-পার্বণে-বিশেষ দিবসে ১৩টি, খেলাধুলায় ১৩টি, সুনাগরিক হিসেবে ১৭টি, দেশপ্রেমিক হিসেবে ৯টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। 

আপ্যায়নে–আতিথেয়তায়: সামাজিকতার নামে ভ্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান ও লৌকিকতা মানুষের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি বাড়ায়। পক্ষান্তরে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সমমর্মিতা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে প্রশান্তি ও আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে। শাশ্বত সত্যের আলোকে সামাজিকতার ক্ষেত্রে সঠিক শুদ্ধাচার ও কল্যাণকর দৃষ্টিভঙ্গি লালন করলে আপনি অনেক বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি থেকে নিজেকে ও অন্যকে রক্ষা করতে পারবেন। এ অধ্যায়ে উপহার আদান-প্রদানে ১২টি, অতিথি বা মেহমান হয়ে ৩২টি, আতিথেয়তায় ২২টি, খাওয়ার সময় ৩০টি এবং প্যাকেট খাবার গ্রহণ ও বিতরণে ৭টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বর্জনীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।   

প্রসঙ্গ- শিক্ষা: ভালো রেজাল্ট, ভালো ছাত্র, ভালো মানুষ। একজন সফল শিক্ষার্থীর এটাই বিশেষত্ব। সে শুধু ক্লাসে ১ম নয়, জীবনেও হবে ১ম। জীবনে ১ম হওয়ার অন্যতম গুণ সদাচার-শুদ্ধাচার। শ্রেণিকক্ষে ১১টি, শিক্ষার্থী হিসেবে || শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪টি, শিক্ষার্থী হিসেবে || শিক্ষকের সাথে ৮টি, লাইব্রেরিতে ২৩টি, পরীক্ষা-সংক্রান্ত ১৪টি, হলে/হোস্টেলে/শিক্ষা আবাসিকে ৭টি, সহপাঠী/জুনিয়র-সিনিয়রদের সঙ্গে ২০টি, বন্ধুত্বে ১৪টি, শিক্ষক হিসেবে || শিক্ষার্থীদের সাথে ৩২টি, শিক্ষক হিসেবে || শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও সহকর্মীর সাথে ১৬টি এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে ২২টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। 

কর্মক্ষেত্রে: কর্মজীবীদের সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয় কর্মক্ষেত্রে। বস সহকর্মী সহযোগী প্রতিযোগী অধীনস্থ অভ্যাগত পরিচিত অপরিচিত-বহু মানুষের সাথে প্রতিদিন আলাপ-আলোচনা ও লেনদেন করতে হয়। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, সুন্দর আচরণ কুশলী ও হৃদ্যতাপূর্ণ সংযোগায়নের ওপরই নির্ভর করে আপনার কর্মজীবনের সাফল্য। এ অধ্যায়ে সাধারণভাবে অনুসরণীয় ৮৩টি, কর্মী হিসেবে ৪১টি, প্রতিষ্ঠান প্রধান/বস/ম্যানেজার হিসেবে ৩৬টি, ছুটির দিনে ৬টি, ইন্টারভিউয়ে পোশাক নির্বাচনে ৫টি এবং অবসর জীবনে ১৪টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, কর্মক্ষেত্রে বর্জনীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সঙ্ঘাচার: আত্মবিকাশের পাশাপাশি সার্বিকভাবে ভালো থাকার জন্যেই সঙ্ঘ। সচেতন মানুষ পড়াশোনা, পেশা ও গৃহ পরিচালনার পাশাপাশি নিবেদিত হন নানামুখী সংগঠন বা সঙ্ঘে। এভাবেই হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ, সৃষ্টির সেবা। আর সঙ্ঘের মানুষেরা যখন ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকে লীন করে দেন সামগ্রিক কল্যাণে, তখন সৃষ্টি হয় সঙ্ঘায়ন। সঙ্ঘায়ন ‘আমি’কে বদলে দেয় ‘আমরা’য়। ফলে সংশ্লিষ্ট সবার প্রাপ্তির পরিমাণ হয় বহুগুণ। আসলে একা হলে ব্যক্তি, সঙ্ঘে এলে শক্তি। সঙ্ঘের প্রাণ হচ্ছে সঙ্ঘাচার। সঙ্ঘের ভেতরে-বাইরে এর সদস্যদের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ সঙ্ঘের সিস্টেম, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, গতিশীল নেতৃত্ব ও কর্মপন্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ অধ্যায়ে দায়িত্ব পালনে ৮টি, সাংগঠনিক আলাপে ১৫টি, লিডার/সেবক হিসেবে ৪টি, কর্মী হিসেবে/ সহকর্মীদের সাথে ৭টি, বৈঠক পরিচালনাকারী হিসেবে ১০টি এবং বৈঠকে অংশগ্রহণকারী হিসেবে ১০টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। 

আলোচনা-অনুষ্ঠানে: আলোচনা হলো নিজের বিশ্বাসের কথা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুযোগ। সেইসাথে অন্যদের ভালো চিন্তা, জীবন, অভিজ্ঞতা, কর্মপরিকল্পনা জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ করার একটি অন্যতম ক্ষেত্র আলোচনা-অনুষ্ঠান। এ ধরণের অনুষ্ঠানকে ফলপ্রসূ করতে প্রয়োজন আলোচক, উদ্যোক্তা এবং শ্রোতার সমন্বিত প্রয়াস। আলোচ্য বিষয়ের ওপর আলোচকের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, সঠিক শব্দচয়ন আর নির্ভুল উচ্চারণের পাশাপাশি কিছু করণীয়-বর্জনীয় আলোচনা উপস্থাপনকে সুন্দর করে। অন্যদিকে নেপথ্যের উদ্যোক্তা এবং দর্শক-শ্রোতার দায়িত্ব-সচেতনতা পুরো অনুষ্ঠানকে করে তোলে উপভোগ্য ও আনন্দময়। এ অধ্যায়ে দর্শক-শ্রোতা হিসেবে ২৫টি, উদ্যোক্তা-আয়োজক হিসেবে ১৮টি এবং আলোচক-সঞ্চালক হিসেবে ৩৮টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, মঞ্চে থাকাকালে ও আলোচনার ক্ষেত্রে বর্জনীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

মোবাইল ফোন: ফিচার ফোন ব্যবহার করুন কিংবা স্মার্টফোন-এসব যন্ত্রের সুবিধা-অসুবিধা দুটিই রয়েছে। প্রযুক্তি-সংক্রান্ত শুদ্ধাচার প্রথম পর্ব আন্তরিকতার সাথে পড়ুন। মুক্তমন নিয়ে মোবাইল ফোনের ভালো-মন্দ জানুন, বুঝুন। তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিন এ যন্ত্রটি কখন কতটুকু সময় ব্যবহার করবেন। এ অধ্যায়ে সাধারণভাবে করণীয় ৪টি, প্রযুক্তি ব্যবহার করুন শুধু প্রয়োজনে, বেশি কথা মোবাইলে কান যাবে অকালে ৪টি, সচেতন হোন ৭টি, মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলা ৬টি, জানুন মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক ১১টি এবং রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে ১০টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছড়াও প্রযুক্তি ব্যবহার করুন শুধু প্রয়োজনে এবং মোবাইল: দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

টিভি ও কম্পিউটার: টিভি আমাদেরকে ঘরে বসেই দূরকে কাছে এনে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আর কম্পিউটার কাজে এনেছে গতি। যুগের সাথে ছন্দ মেলাতে আমরা ব্যবহার করছি কম্পিউটার-কখনো ডেস্কটপ, কখনো ল্যাপটপ, কখনো-বা নোটবুক। টিভিতেও এসেছে বিপ্লব। সাদা-কালোর পর রঙিন, সম্প্রতি এসেছে স্মার্ট টিভি। প্রযুক্তি এগোবে তার গতিতে, আমাদের সচেতনতাও যেন এগোয় সেই মাত্রায়। এজন্যে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত শুদ্ধাচার দ্বিতীয় পর্বে সন্নিবেশিত হয়েছে টিভি ও কম্পিউটারের ব্যবহারে কিছু বাস্তব ও কার্যকরী দিক-নির্দেশনা। এ অধ্যায়ে টিভি দেখায় ১১টি, শিশুদের জন্যে গাইডলাইন ৫টি, সন্তানের টিভি আসক্তি কমাতে ১৪টি, প্রযুক্তিপণ্য কখনোই আপনজনের বিকল্প নয় ৭টি, অফিসের কম্পিউটারে ৮টি এবং কম্পিউটার ব্যবহারে স্বাস্থ্য-সচেতনতায় ৭টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

ইন্টারনেট: কাজের প্রয়োজনে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু। এর ব্যবহার বহুবিধ। ইন্টারনেটে আমাদের গতিবিধি আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। নিজের অজান্তেই ব্যক্তি ইমেজ, নিরাপত্তা ও পারিবারিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এর ভুল বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। তাই নিজের কল্যাণে জেনে নিন ইন্টারনেট ব্যবহারের শুদ্ধাচার। এ অধ্যায়ে প্রয়োজন বুঝে ব্যবহার ৬টি, ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে ৩টি, পোস্ট/শেয়ার করার আগে ভাবুন ১০টি, ই-মেইলের ক্ষেত্রে ১২টি, নিরাপদ থাকুন ১৪টি এবং সচেতন হওয়ার সময় এখনই ৬টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

দৈনন্দিন কেনাকাটায়: কেনাকাটা এক চমৎকার শিল্প। শিল্পিত রুচি নিয়ে প্রয়োজনীয় ও পরিমিত কেনাকাটা আপনার জীবনকে করে তুলবে আনন্দঘন। আর কেনাকাটা যদি হয় বাতিক, তবে আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্ত। ক্রয়-আসক্তি নষ্ট করবে আপনার প্রশান্তি। আর খুচরা কেনাকাটার পর দোকানদার যদি বলে, আপনার মতো সমঝদার ক্রেতা আর হয় না! আপনি জিতে গেলেন। তাহলে নিশ্চিত থাকবেন- আপনি নির্ঘাত ঠকেছেন। আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে, ঋণ করে ও কিস্তিতে ভোগ্যপণ্য কিনলে আপনি পড়বেন সর্বনাশের চোরাবালিতে। তাই আয়ত্ত করুন কেনাকাটার ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয়গুলো। দৈনন্দিন কেনাকাটায় কিছু শুদ্ধাচার অনুসরণ আপনার ভোগান্তি কমাবে, সময়ও বাঁচাবে। পণ্যদাসত্ব বা ক্রয়-আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন। এ অধ্যায়ে ক্রেতা হিসেবে ৫টি, পণ্য দেখার ক্ষেত্রে ৭টি, দরদাম করায় ৭টি, একাধিক ক্রেতা থাকলে ৪টি, ক্রয়-আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্যে তিনটি প্রশ্ন, মূল্য পরিশোধে ৮টি, সচেতন হোন ১৬টি, বিক্রেতা হিসেবে ২০টি, অনলাইন শপিং ॥ আপনি যখন বিক্রেতা নিয়ে ৩টি এবং অনলাইন শপিং॥ আপনি যখন ক্রেতা ৫টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

ভ্রমণে-যানবাহনে: যানবাহন আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কখনো কাজের প্রয়োজনে আবার কখনো বিনোদন-ভ্রমণে আপনাকে সহায়তা নিতে হয় যানবাহনের। নিজস্ব বাহন হোক অথবা গণপরিবহন, তা ব্যবহারে কিছু শুদ্ধাচার অনুসরণ আপনার যাত্রাপথকে করবে স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ। আর দলবদ্ধ ভ্রমণে কিছু সহজ নীতিমালা ও আচরণ-অভ্যাস আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে অনাবিল আনন্দের। এ অধ্যায়ে যাত্রী হিসেবে ৫৯, চালক/ সহযোগী/ কন্ডাক্টর হিসেবে ২৯টি, পথচারী হিসেবে ৯টি, অ্যাপভিত্তিক যানবাহনে যাত্রী হিসেবে আপনার সচেতনতা ৪টি, চালক হিসেবে আপনার দায়িত্ব ৫টি, দূরপাল্লার যাত্রায় করণীয় ৮টি, বিমানযাত্রায় ২৩টি, নৌকা/ লঞ্চ/ স্টিমার/ জাহাজে ১২টি, নৌযান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ৯টি একং আনন্দ ভ্রমণে ৩৩টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

ডাক্তার রোগী শুশ্রূষা: অসুখ হচ্ছে সুখের অভাব। রোগমুক্তির জন্যে ওষুধ-পথ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রোগীর মানসিক প্রফুল্লতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর বিশ্বস ও রোগমুক্তির আকাঙক্ষা একদিকে নিরাময় প্রক্রিয়ার সূচনা করে অন্যদিকে চিকিৎসক ও পরিজনদের মমতা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কাউন্সেলিং যে কোনো শারীরিক-মানসিক রোগ নিরাময়ের প্রক্রিয়াকে বেগবান করে। এ অধ্যায়ে ডাক্তারের চেম্বারে/হাসপাতালে ১৯টি, রোগী হিসেবে, ডাক্তার হিসেবে ২০টি, চিকিৎসাসেবায় সহযোগী হিসেবে ৫টি, সেবা-শুশ্রূষায় ৪টি, রোগী দেখতে গিয়ে ৪টি, কাউন্সেলিং বা পরামর্শসেবায় ১৫টি, মৃতের প্রতি ৩টি, মৃতের সন্তান হিসেবে করণীয় ৯টি, যে কাজে মৃতের কোনো উপকার হয় না এমন ৯টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, ইসলাম ধর্মের আলোকে মৃতের জন্যে আরো কিছু করণীয় এবং মৃতের জন্য প্রার্থনা শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইবাদতে: নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের একটি। ওযু করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার নামাজের পূর্বশর্ত। শুদ্ধাচারের এ পর্বে ওযু, নামাজ ও মসজিদ বা ইবাদত গৃহের ব্যাপারে মুসলিমদের আদব-কায়দা নিয়েই আলোকপাত করা হয়েছে। সেইসাথে সন্নিবেশিত হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্যে প্রেরিত মহাগ্রন্থ আল কোরআন পাঠে কিছু করণীয়। এ অধ্যায়ে ওযু ১০টি, নামাজ ২৭টি, আল কোরআন পাঠে ২১টি, মসজিদে ১৪টি, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন ৬টি, রমজানে খাবার মেন্যু ॥ ইফতারে ১১টি, রমজানে খাবার মেন্যু ॥ সেহরিতে ৫টি, ইফতারের আগে পালনীয় ৩টি, সেহরির পরে করণীয় ৪টি, বর্জন করুন ইফতার ও সেহরি পার্টি ৪টি, রোজার শারীরিক উপকারিতা ৮টি, ইবাদতের মৌসুম রমজান ৬টি, আত্মশুদ্ধির পথে ধাপে ধাপে ৭টি, এতেকাফের চেয়েও সওয়াবের ৪টি, হজ ৭টি, পবিত্র ঈদুল ফিতরে ৭টি এবং পবিত্র ঈদুল আজহায় ১১টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, মসজিদ বা উপাসনালয়ে বর্জনীয়, রমজানের ধর্মীয় তাৎপর্য, মাহে রমজানে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, রমজানে বর্জনীয় এবং আল্লাহ-সচেতনতা (তাকওয়া) ॥ রোজার মূল লক্ষ্য শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।   

পবিত্র ধর্মবাণীতে: সকল ধর্মের মূল শিক্ষাই এক। সকল ধর্ম একই উৎস থেকে উৎসারিত। ধর্মের মূল শিক্ষা হচ্ছে- এক স্রষ্টার উপাসনা করো। সবার সাথে সদাচরণ করো। আর সৃষ্টির সেবা করো। তাহলেই তুমি পরিত্রাণ পাবে। প্রতিটি ধর্ম বলে-তুমি এসেছ স্রষ্টার কাছ থেকে। কিছুকাল পৃথিবীতে থাকবে। আবার তার কাছেই ফিরে যাবে। পৃথিবী হচ্ছে কর্মস্থল। যেমন কাজা করবে, তার ফল তুমি পাবে। শুদ্ধাচারের এ পর্বে সুন্দর আচরণ ও সুবচনের গুরুত্ব নিয়ে পবিত্র ধর্মবাণীর কিছু নির্দেশনা বিন্যাস্ত করা হয়েছে সময়কাল অনুসারে। এ অধ্যায়ে বেদ ৪টি, শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ৫টি, ধম্মপদ ৫টি, বাইবেল ৮টি, আল কোরআন ২২টি এবং আল হাদীস নিয়ে ১৩টি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

বইটির প্রচ্ছদ মূল্য ৪০০ টাকা যা ২৫ শতাংশ কর্তনে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সকল শাখা সেলসহ রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রসিদ্ধ বুক হউসসমূহে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও রকমারিডটকমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে অর্ডার করেও বইটি সংগ্রহ করা যাবে। বইটির প্রকাশক কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পক্ষে মায়িশা তাবাসসুম। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে, ‘মানবজাতিকে শুদ্ধাচার শিখিয়েছেন যে মহামানবেরা তাঁদের স্মরণ।’

প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, অধিদফতরাধীন বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে ‘শুদ্ধাচার’ বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৫ মার্চ) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারি পরিচালক (সা. প্রশা.) রূপক রায় স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

এমএস/এসি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি