আমাদের মামুন...
প্রকাশিত : ১৭:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:১৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
আমি মামুনকে নায়ক বলে ডাকতাম। শুধু আমি নই টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রায় সবাই নায়ক মামুন নামেই ডাকতো। বিষয়টি হাসতে হাসতে উপভোগ করতো মামুন। গত ফেব্রুয়ারিতে খোকনের (প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন) ছেলের জন্মদিন অনুষ্ঠানে টেলিভিশন তারকা নওশীনকে আমার সামনে নিয়ে এসে মামুন বলছিল রাশেদ ভাই ওকে নিয়ে একটা ছবি করবো। নওশীনও এক বাক্যে রাজি। মামুন ছবি করলে আমি বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করবো। তবে নায়ক হতে হবে মামুনকে, আমি নায়িকার চরিত্রে। এভাবে হাসি তামাশা চলেছে অনেক্ষণ। বলছিলাম একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মামুনুর রশীদের কথা। আমার স্নেহাস্পদ সাংবাদিক।
সবাই সব সময় আলোচনায় থাকতে পারে না। কোন আসর বা অনুষ্ঠানে সবাইকে নিয়ে আলোচনা হয় না। সেই যোগ্যতাও সবার থাকে না। মামুনের সেই যোগ্যতা ছিল পুরোটাই। মামুনের উপস্থিতিতে আমরা ওকে নিয়ে যেমন আলোচনা করতাম। আবার অনুপস্থিতিতেও করতাম।
কোন আড্ডায় মামুন উপস্থিত হওয়া মানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ওর দিকে ঘুরে যাওয়া। যতো কথাই বলা হতো ও হাসিমুখে গ্রহণ করতো। রিপোর্টিং এর সময় যখন ঢাকার বাইরে যেতাম, মামুন বারবার ফোন করতো-বস আমরা এখানে আপনি কতদূর? আমি রিপোর্টি ছেড়ে দিয়েছি ৪ বছর হলো। তাই প্রধানমন্ত্রীর বিটের রিপোর্টারদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কমে গেছে। মামুনের সঙ্গেও কম দেখা হতো। রাস্তাঘাটে হটাৎ দেখা হলে দৌড়ে আসতো মামুন। জিজ্ঞেস করতাম কি বিয়ে-শাদি করবে কবে? হাসি দিয়ে উত্তর-বস যাইতে দেন না সময়।
ওর মৃত্যুর কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো শোকের কষ্টে। কোন অসুখ না বিসুখ না হঠাৎই মৃত্যু? গত রাতে হার্ট এ্যাটাক। এ কেমন কথা! সামনে না দেখা অনেক কিছু রেখে এভাবে চলে যেতে হবে? এই তরুণ বয়সে?
ওর সহকর্মী, সহযাত্রীরা শোকের সাগরে নিমজ্জিত। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কতো রকম শোক বার্তা। পড়ি আর কষ্ট পাই। অনেকে ছবিও পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনিয়র সাংবাদিকরা লিখেছেন-
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন- লাইফ ইজ রিয়েলি কালারলেস
মোস্তফা ফিরোজ লিখেছেন- মামুন তোরে অনেক ভালোবাসিরে।
রাহুল রাহা লিখেছেন- এভাবে না গেলে পারতে।
আশরাফুল আলম খোকন লিখেছেন- আমার ভাই, আমাদের ভাই মামুন, এভাবে না বলে চলে গেলিরে।
নূরে এলাহী মিনা লিখেছেন- এমন সতেজ প্রাণ। এমন তরতাজা যুবক নেই, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
তৌহিদুর রহমান- তোর আবদান পূরণ করতে হবে না বাঁচিয়ে দিলি!
অনিমেষ কর লিখেছেন- মেনে নিতে পারছি না
দিপু সারওয়ার লিখেছেন- ওপারে ভালো থেকো ভাই
প্রভাষ আমিন লিখেছেন- আপনি বলে ডাকতাম, আজ বড্ড তুই ডাকতে ইচ্ছে করছে, ভালো থাকিস নায়ক।
আদিত্ত শাহীন লিখেছেন- আহা হাসতে হাসতেই আমাদের যাবার সময় হয়ে যায়।
মাসুদুল হাসান রনি লিখেছেন- তোমার এভাবে যাওয়াটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
নাজমুল হোসেন লিখেছেন- বন্ধু তুই আমার জন্মদিনে মরে গেলি।
নাদিয়া শারমীন লিখেছেন- বিশ্বাস করতে পারছি না
আরও অনেকে অনেকে লিখেছেন
আমি কিছুই লিখিনি ফেসবুকে। শোক মনের ভেতরেই রেখেছি।
...
লেখক: সাংবাদিক।
মাছরাঙা টেলিভিশন।
এসএইচ/