করোনাকালীন সহায়তা পাবেন আরও দুই হাজার সাংবাদিক
প্রকাশিত : ২১:৪৬, ২৫ এপ্রিল ২০২১
আরও দুই হাজার সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. হাছান মাহমুদ আজ দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জরুরি সভাশেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। করোনা আক্রান্তের পর চিকিৎসাধীন তথ্যসচিব ও ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খাজা মিয়া অনলাইনে সভায় যোগ দেন।
মহামারির মধ্যে কর্মরত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ এবং মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকদের আত্মার শান্তি, অসুস্থদের সুস্থতা এবং পৃথিবীর করোনামুক্তি কামনা করে মন্ত্রী বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন লকডাউন চলছে, সরকারি ছুটিতে মন্ত্রণালয়গুলো বন্ধ, এর মধ্যেই আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কিভাবে সাংবাদিকদের সহায়তা করতে পারি, সেজন্যই আজকে এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় আপাতত ২ হাজার সাংবাদিককে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে এককালীন সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া এই অর্থবছরে কল্যাণ ট্রাস্টের নিয়মিত সহায়তার আওতায় আরো প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিককে সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ড. হাছান বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে সাংবাদিকদের ভূমিকা এবং অস্বচ্ছল, নানা কারণে চাকরিচ্যুত বা চাকরি থাকা সত্ত্বেও বেতন না পাওয়া সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথম দফায় সারাদেশে দলমত নির্বিশেষে ৩ হাজার ৩৫০ জন সাংবাদিককে সহায়তা দেয়া হয়েছে। যেসব সাংবাদিক বন্ধু প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন, তাদের মধ্যে অস্বচ্ছলরাও যেন এই সহায়তা থেকে বাদ না যায়, আমার সেই অনুরোধ সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ রেখেছিলেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।’
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে সাংবাদিকদের যে এককালীন সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ ধরণের কোনো সহায়তা ভারত-পাকিস্তান-নেপাল-ভুটান-শ্রীলংকা কোথাও দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে ড. হাছান জানান, করোনায় কেউ যদি মারা যায় শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে ভারতে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনাকালে অস্বচ্ছল বা চাকরিচ্যুত হয়েছে এমন কাউকে সেখানে সহায়তা দেয়া হচ্ছে না।
করোনাকালে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির বিষয় প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘এসময় এটি অত্যন্ত দু:খজনক, অনভিপ্রেত ও আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য। আমি জানি, সংবাদ মাধ্যমগুলো করোনাকালে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই নানা সমস্যার সম্মুখীন। কিন্তু বিষয়টাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ আমি শুরু থেকেই করেছিলাম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটি অনুসরণ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দু:খজনক। সম্প্রতি যেখানে চাকরিচ্যুতি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে এবং সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো চেষ্টা করছে। আশা করবো, যাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদেরকে পুণর্বহাল করার দিকেই কর্তৃপক্ষ যাবে, এই আমার প্রত্যাশা।
ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধের জন্য বিএনপি মহাসচিবের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘ভারতের সাথে কার্যত: সীমান্ত স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে চালু থাকে সেভাবে চালু নাই। বাংলাদেশের কোনো মানুষ সেখানে যেতে পারছেনা। সেখান থেকে বাংলাদেশেও কেউ আসতে পারছে না। কিন্তু পণ্য পরিবহণ চালু আছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিতে বলেছেন, যাতে বাংলাদেশে পণ্যের সংকট হয়। উনি তো বুদ্ধিমান মানুষ, খুব বুদ্ধি করেই বলেছেন, যাতে দেশে একটি সংকট তৈরি হয়। কার্যত: সীমান্ত চালু নাই, শুধু পণ্য পরিবহন চালু আছে।’
লকডাউন শিথিল করা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘সরকার লকডাউন দেয়ার পর লকডাউন না দেয়ার জন্য, দোকান খোলার জন্য বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মানুষের জীবন এবং জীবিকা উভয়ই রক্ষাকল্পে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ দু’য়ের সমন্বয় করে অত্যন্ত সফলতার সাথে কাজ করার কারণে বাংলাদেশ প্রথম দফা করোনা মহামারির ঢেউ যেমন সফলভাবে মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে একইসাথে অর্থনীতিকে রক্ষা করতেও সক্ষম হয়েছে। মাত্র ২০টি দেশে পজেটিভ জিডিপি গ্রোথ হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তিন নম্বরে।’
খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট হচ্ছে এবং দেশে কয়েক কোটি মানুষ দোকানের ওপর নির্ভরশীল, সামনে ঈদ, এগুলো সরকারকে বিবেচনা রাখতে হয়। সেকারণে সরকার সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করে, তাহলে আমাদের পক্ষে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ ফিজনূর রহমান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা, ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মাহফুজুল হক, বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু , দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এসি