মানবিক বিশ্বের ধীমান সায়মন ড্রিং
প্রকাশিত : ১৫:২১, ২৫ জুলাই ২০২১
মানবিক বিশ্বের কোন সীমানা নেই। এই বিশ্ব অখণ্ড। যে মানুষগুলো এই অখণ্ড বিশ্বের কুশিলব তারা কখনো বিশ্বের কোন সীমানাকে স্বীকার করেননি। তবে তার মানে এই নয় যে, তারা কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন। তারা অস্বীকার করেছেন, প্লেটোর সেই ‘শীপ অফ স্টেট’কে। যে নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান দাবি করেও অজ্ঞতা এবং গোয়েবলি থিয়োরিতে ডুবে থাকে। এই যে অখণ্ড বিশ্বকে একবুকে ধারণ করা এবং একে অনুভব করা, এই শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত দুর্লভ। তবে এঁরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের ধী-শক্তি এবং তাঁদের চিন্তা ও কর্মযজ্ঞ আজকের মঙ্গল পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে, রাখছে এবং রাখবে।
আমার আজকের লেখার প্রসঙ্গ এঁদেরই একজন, বিশ্ব বরেণ্য সাংবাদিক এবং মানবিক বিশ্বের চিন্তক সায়মন ড্রিং। তিনি ৭৬ বছর বয়সে গত ১৬ জুলাই ২০২১-এ মৃত্যুবরণ করেছেন রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে। কর্ম জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন ছিলেন। তারপরও তিনি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে আমরা আরও কিছু পেতে পারতাম। তাঁর চলে যাওয়ায় এই শূন্যতা আমাদের জীবনে স্থায়ী হয়েই রইলো। তবে তাঁর যে কর্ম, যে মানবিক দর্শন এবং সাহসিকতা, তা থেকে আমাদের নেয়ার আছে। তাঁর সে জায়গাটি ঘরায় তোলা জল নয়, তা মহাসমুদ্র, সেখানে ইচ্ছে মতো সাঁতার কাটা যায়। সাংবাদিক হিসেবে তিনি বিশ্বের প্রায় বাইশটি যুদ্ধের সংবাদ প্রচারে সরাসরি কাজ করেছেন। এতে করে বলা যায় তিনি দেহ ত্যাগ করেছেন, কিন্তু তাঁর যে কর্ম তা আমাদের জন্য চিরকালের হয়ে রইলো। অতএব, তিনি আরও বেশি করে বেঁচে রইলেন আমাদের মাঝে। সে অর্থে তিনি আমাদের মহাকালের মহাপুরুষ।
আমরা কে? তৃতীয় বিশ্বের একটি হত দরিদ্র দেশের বাসিন্দা। একাত্তর সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ওই সেই ‘শীপ অফ স্টেট’ এর বাসিন্দা। তাদের বাঁচাতে এবং স্বাধীন একটি ভূখণ্ড উপহার দিতে একজন শেখ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। জেল-জুলুম, নির্বাচনী কারচুপি, প্রতারণা এমন অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সময়। তারপরও থেমে থাকে না হায়ানারা। ইয়াহিয়া খান নামলো হত্যাযজ্ঞে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নির্বিচারে ঢাকাসহ আশেপাশে হামলা চালিয়ে পনের হাজারের বেশি অসহায় মানুষ হত্যা করে। হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, পুরাণ ঢাকার সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
এই হত্যাযজ্ঞের খবর বিশ্বকে জানালেন কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক। তাদেরই অন্যতম একজন তখন ব্রিটেনের দৈনিক পত্রিকা দি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। তারা যেনো সংবাদ প্রচার করতে না পারে সেজন্য পাকিস্তানী বাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) আটকে রেখেছিলো প্রায় দুইশ’ বিদেশি সাংবাদিককে। সেখান থেকে গোপনে সরে গিয়ে জীবনবাজী রেখে ঢাকার ধ্বংসস্তূপ ঘুরে, প্রত্যক্ষ অবলোকন থেকে ২৮ মার্চ (১৯৭১) তৈরি করেন প্রতিবেদন, ‘আর্মি টেক ওভার আফটার নাইট অব শেলিং’। এই প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে লিখে পাঠানোর পর পরই আরও পঁয়ত্রিশজন সাংবাদিকের সাথে সায়মন ড্রিংকেও বহিষ্কার করে পাকিস্তানী জান্তা।
তিনি এরপর অবস্থান নেন ব্যাংককে। সেখান থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭১ সালে টেলিগ্রাফে লেখেন প্রতিবেদন, ‘ট্যাংক ক্রাস রিভোল্ট ইন পাকিস্তান ৭,০০০ স্লটারড: হোমস বার্ণড’। এই প্রতিবেদন তিনি পরিবেশন করেন ব্যাংকক থেকে। এতে বুঝাই যায় পাকিস্তানি হানাদাররা এতোটাই বর্বর ছিলো যে, কোন বিদেশি সাংবাদিককে তারা ঢাকায় থাকতে দেয়নি। কিন্তু তাতে কি সাংবাদিকের কলম থামানো সম্ভব হয়েছিলো? হয়নি। সায়মন ড্রিং-এর এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুরো বিশ্বে পৌঁছে গিয়েছিলো গণহত্যার খবর। তৈরি হতে শুরু করলো বিশ্ব জনমত।
আমাদের পিতা-প্রপিতামহ যারা বিভিন্ন দেশে প্রবাস জীবনে ছিলেন তারাও বিশ্ব জনমত প্রতিষ্ঠায় এই প্রতিবেদনকে দলিল হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলো। ফলে খোদ আমেরিকা আমাদের বিরোধীতা করলেও থামাতে পারেনি ১৯৭১ সালের ১ অগাস্টে নিউ ইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। এর আয়োজক জর্জ হ্যারিসন এবং রবি শংকর সেই বিরলদের প্রতিনিধি। যারা মানবিক বিশ্বের বাসিন্দা। তাঁদের সাথে ওই কনসার্টে যুক্ত হয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্লাপটন, বিলি প্রেস্টন এবং লিয়ন রাসেল। কনসার্টে উপস্থিত ছিলো প্রায় চল্লিশ হাজার দর্শক-স্রোতা। অর্থ সংগ্রহ হয়েছিলো প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার।
একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতে যারা পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের ঘটনা বিভিন্ন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছিলেন তাদের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের এক অবহেলিত জনপদের মানুষের জন্য জেগে উঠেছিলো মানবিক বিশ্বের মানুষ। তাদেরই অন্যতম সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। তিনি ছাড়াও সে সময় বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে সংবাদ প্রচার করেছিলেন ডেভিড লোসাক, কেনেথ ক্লার্ক, মার্ক টালি, গ্রেস লেসটেনস্টেইন, সিডনি এইচ চেনবার্গসহ আরও অনেক বিদেশি সাংবাদিক।
সায়মন ড্রিং একজন অসাম্প্রদায়িক এবং নিষ্ঠ সংবাদিক ছিলেন। ৩০ মার্চ তার প্রতিবেদনের শুরুতেই তিনি পাকিস্তানী প্রতিক্রিয়াশীল ও চরমপন্থী মনোভাবের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রতিবেদন শুরু করেন এভাবে ‘আল্লাহ এবং অখণ্ড পাকিস্তানের নামে শুরু করা লড়াইয়ে ঢাকা এখন ধ্বংস এবং ভীতির নগরী’। যে ধর্মীয় চালে ভাগ হয়েছিলো ভারতবর্ষ, সেই চালে পশ্চিম পাকিস্তান গণহত্যার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখতে। তাদেরই ইন্ধনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলো চৌধুরী মঈনুদ্দিন, গোলাম আযম, কামরুজ্জামানসহ যুদ্ধাপরাধীরা।
তো যে কথা বলছিলাম, সায়মন ড্রিং-এর এই প্রতিবেদন শুরুতেই বিশ্বের অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছিলো পঁচিশে মার্চ রাতে হানাদারদের চালানো বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের আনুপুঙ্খ চিত্র। চব্বিশ ঘণ্টার সেনা অভিযানে বিভিন্ন এলাকায় নিহতদের খবর উঠে এসেছে তাতে। উঠে এসেছে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য দলিল হয়ে রইলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে দূর্মুখরা নানান কাসুন্দি ঘেটে থাকে। এইসব দূর্মুখদের প্রশ্নের জবাবও আছে এই প্রতিবেদনে। এখানে সে প্রতিবেদনের একটি অংশ উদৃত করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি।
‘এসব হামলা চলাকালে সেনাবাহিনীর অন্য ইউনিটগুলো শেখ মুজিবের বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাত ১টার সামান্য আগে যোগাযোগ করা হলে মুজিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো হামলা হতে যাচ্ছে। সে কারণেই আমি নিজের কাজের লোক ও একজন দেহরক্ষী ছাড়া অন্যদেরকে নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। তার একজন পড়শী বলেন, রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া যান এবং ট্রাকভর্তি সৈন্যরা রাস্তা থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে শেখ সাহেবের বাড়ির দিকে এগুতে থাকে। সৈন্যদের এ বহর বাড়িটির বাইরে এসে থামলে একজন সেনা কর্মকর্তা ইংরেজিতে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, “শেখ তোমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
এসময় শেখ মুজিব নিজ বাড়ির দোতলার ব্যালকনিতে বেরিয়ে এসে জবাব দেন, “হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত। তোমাদের গুলি ছোঁড়ার কোন দরকার নেই।”
“তোমাদের দরকারের কথাটা টেলিফোন করে বললেই হতো। আমি করতাম। এ সময় ঐ সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবের বাড়ির বাগান পার হয়ে ভেতরে ঢুকে বলে, “শেখ, তোমাকে গ্রেপ্তার করা হলো।”
সায়মন ড্রিং সে সময়ের সঠিক চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিলেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন করার কোন সুযোগ নেই। এর মিমাংসা সায়মন ড্রিং তাঁর প্রতিবেদনে দিয়ে গেছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সায়মন ড্রিং-এর অবদান সর্বজনস্বীকৃত তাতে কোন দ্বিমত নেই কারো। তাঁকে বাংলাদেশ থেকে বর্তমান সরকার মূল্যায়ন করেছে। ২০১২ সালে সোনার গাঁ হোটেলে আয়োজিত ‘স্মৃতি ৭১’ অনুষ্ঠানে তিনি সেইসব দিনের স্মৃতিও বিবৃত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দফতর থেকে শোক বার্তা দিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছে। লন্ডন থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন শোক বার্তা আমাদের পাঠিয়েছেন। তবে লন্ডন হাই কমিশনের কোন শোক বার্তা চোখে পড়েনি। এটা কতটুকু উচিত অনুচিত সে প্রশ্ন করছি না। আমরা তো ভুলে যাইনি, একাত্তরে ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যম দি টেলিগ্রাফে সায়মন ড্রিং দায়িত্বরত ছিলেন। সে হিসেবে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন পারতো একটি শোক বার্তা এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সায়মন ড্রিং-এর কি আবদান ছিলো তা নতুন প্রজন্মকে জানানো।
প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেক অনুষ্ঠানইতো আয়োজন করে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন, সায়মন ড্রিং-এর প্রয়াণে একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করি। লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন হয়তো বলবে যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শোক বার্তা দেয়া হয়েছে, সেখানে হাই কমিশন থেকে আলাদা কোন বার্তা দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিংবা এ বিষয়ে সরকারের কোন একটি বিধি নিষেধের অজুহাত হয়তো তুলবে। তবে ভুললে চলবে না সায়মন ড্রিং ব্রিটিশ সাংবাদিক। একাত্তরে তার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো তা ব্রিটেন থেকেই হয়েছিলো। সায়মনের প্রয়াণে ব্রিটেনের প্রায় সব গণমাধ্যম এবং প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়েছে। আলোকপাত করেছে তাঁর কর্মময় জীবন বিষয়ে। আমরা লন্ডনে কিছুটা করলে মন্দ হতো না।
সায়মন ড্রিং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন তা কখনো ছিন্ন করেননি। কাজের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের সেতুতে চলাচল অবিচল ছিলো। ১৯৯৭ সালে তিনি বাংলাদেশকে নতুন একটি জগত দেখালেন। দেশের প্রথম টেরিস্টরিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠায় সহযোগির ভূমিকা রেখে টেলিভিশন মিডিয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন তিনি। আমি তখন দৈনিক রূপালীতে কাজ করি। সাথে টুকটাক কাজ করি রেডিও মেট্টো ওয়েভের সাথে। জানতে পারি এই রেডিওর প্রতিষ্ঠাতা এ এস মাহমুদের প্রতিষ্ঠান থেকেই আসছে নতুন টিভি চ্যানেল ‘একুশে টিভি’। রেডিওতে কাজ জমা দিতে গেলে গুলশানের কামাল আতাতুর্ক এভিন্যুর একুশে টিভির সুচনা কার্যালয়ে একবার ঢুঁ মারি। অনেকেই বললেন, সিভি জমা দিতে। আমি দিলাম না। আমার অজ্ঞতা কিনা জানি না, সে সময় টেলিভিশন সাংবাদিকতাকে আমার যথার্থ সাংবাদিকতা বলে মনে হয়নি। তাই সেদিকে আর আগ্রহ দেখালাম না। এর অন্য একটি কারণ ছিলো বিটিভি। সেখানে তখন আমার পরিচিত কয়েকজন সংবাদ বিভাগে কাজ করতো। তাদের কাজের ধরণ দেখে এই অনিহা আমার মনে জন্মেছিলো।
ইতোমধ্যে অনেকেই যোগ দিয়েছেন একুশে টিভিতে। সাভারে কর্মশালা চলছে। প্রশিক্ষক এসেছেন বিবিসি, সিএনএন-এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রস্তুতি পর্ব শেষে একুশে টিভি সম্প্রচার শুরু করার অল্প সময়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলো, টেলিভিশনের নতুন দিগন্তের সূচনা হলো বাংলাদেশে। দেখা দিলো সংবাদ প্রচারের নতুন ধরণ। বিটিভি দেখতে অভ্যস্ত মানুষেরা উপভোগ করতে থাকলো ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান। নাটকেও আসলো নতুনত্ব। বাংলার পথে-প্রান্তরে তখন একুশের টিভির নাম। একুশের টিভির সরব উপস্থিতির কথা বলে এই নয় যে আমি বিটিভি’র ভূমিকাকে খাটো করছি, তা একেবারেই নয়। বিটিভি ছিলো আমাদের একমাত্র টেলিভিশন। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় এই টেলিভিশন তখন মানুষের একমাত্র বিনোদনের উপলক্ষ ছিলো।
এই সীমাবদ্ধতা থেকে একুশে টেলিভিশন জানিয়ে দিয়েছিলো নতুন সম্ভাবনার কথা। আর এই সম্ভাবনার কর্মকার ছিলেন সায়মন ড্রিং। তিনি বাংলাদেশকে টেলিভিশন মিডিয়ার নতুন আকাশ দর্শন করালেন। তিনি অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন একুশে টিভিকে। তৎকালীন সরকারের রোষাণলের কারণে একুশে টিভি সাময়িক সম্প্রচার বন্ধ ছিলো। তাতেও তিনি বাংলাদেশের সাথেই ছিলেন। মৃত্যুর আগেও তিনি যমুনা টিভির সাথে কাজ করেছেন। তাঁর এই কর্ম তৎপরতা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসার অন্ত ছিলো না।
টেলিভিশন মিডিয়ার নবদিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে তিনি যে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সে পথেই চলছে আমাদের দেশের টেলিভিশনগুলো। একথা মনে রেখে আমাদের সব টিভি মিডিয়ার উচিত তাঁর স্মরণে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ কোন একটি স্মারক প্রতিষ্ঠা করা। কারণ ইতিহাসকে সব সময় সম্মুখে রাখতে হয়, তা চোখের আড়াল হলেই সূচনা হয় ভুল পথের। এই সংকটে যাতে আমরা পতিত না হই, অন্তত সেজন্য সায়মন ড্রিং-এর স্মৃতি আমাদের স্মরণের ব্যবস্থা থাকাটা বাঞ্চনীয়।
লেখক: কবি, কথা সাহিত্যিক, গবেষক ও সাংবাদিক
Email: milton.rahman07@gmail.com