ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪

ব্লেন্ডেড শিক্ষার উত্তম চর্চাগুলোকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার সুপারিশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৩, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, গুণগত শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন বিবেচনায় ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি সময়োপযোগী এবং বাস্তবায়নযোগ্য ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নে শিক্ষা খাতে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের গবেষণা ও উন্নয়ন উপ-কমিটির আয়োজনে এবং এটুআই ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) এর সহযোগিতায় মঙ্গলবার বাংলাদেশের ব্লেন্ডেড শিক্ষায় এডুকেশন টেকনোলজি (এডটেক) প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। 

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে, এম, রুহুল আমীন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, এনসিটিবি’র প্রতিনিধি এবং এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজর  আনীর চৌধুরী। মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক এবং ব্লেন্ডেড শিক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো: নিজামুল করিম। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের ৫০টির অধিক এডুকেশন টেকনোলজি (এডটেক) প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত হয়ে তাদের মূল্যবান মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। 
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এডটেক প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতায় বাংলাদেশে ব্লেন্ডেড শিক্ষা কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক এডটেক উদ্যোক্তারাও কাজ করছেন। আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা এডটেক উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে চাই, প্রয়োজন হলে সরকার এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ বেশি। শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান, যথেষ্ট রিসোর্সেরও অভাব রয়েছে।” এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট ব্লেন্ডেড শিক্ষার বিভিন্ন উত্তম চর্চাগুলোকে স্থায়ী রূপদান ও আরো যুগোপোযোগী করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি। তিনি জানান শিক্ষায় উদ্ভাবনকে (এডুকেশনাল ইনোভেশন) ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রেগুলেটরিভিত্তিক না হয়ে বরং সহযোগিতামূলক হবে। সরকার এডটেক প্রতিষ্ঠানসমূহের মানসম্মত উদ্ভাবনগুলোকে উপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদানের আশ্বাস এবং প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ডিভাইস, কান্টেটিভিটি, কন্টেন্ট, এলএমএস এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ জানান ব্লেন্ডেড শিক্ষার উপকরণ ও পদ্ধতি শিশুদের জন্য উপযোগী ও আনন্দদায়ক হতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ ব্যাহত হবে। প্রাথমিক শিক্ষায়ও অতিদ্রুত ব্লেন্ডেড এডুকেশন শুরু করতে হবে। কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাধারা সাথে কীভাবে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়েছে তা তুলে ধরে ব্লেন্ডেড শিক্ষায় ধারণা ও পদ্ধতিতে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার ধরণ ও বিষয়সমূহকেও সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচনার আহ্বান জানান মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব কে, এম, রুহুল আমীন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, “আমাদের দেশে ব্লেন্ডেড এডুকেশনের জন্য কন্টেন্ট তৈরির প্রচুর সুযোগ রয়েছে, সেদিকে মনযোগ দেয়ার পাশাপাশি শিখন-শেখানো কার্যক্রম, শিক্ষকদের সক্ষমতা উন্নয়ন, মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা এবং এলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উদ্ভাবনের জন্য এডটেক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জোর দিতে হবে।” তিনি বলেন, “পার্টনারশিপের ভিত্তিতে কন্টেন্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদপ্তরগুলো একসাথে কাজ করতে পারে। ইন্টারনেট প্রটোকলের মত এডটেক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য একটা গাইডলাইন তৈরি করা যেতে পারে এবং ব্লেন্ডেড শিক্ষায় ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল (অবকাঠামোগত) ঘাটতি নিরূপণে ‘অনলাইন স্ট্রিমিং’ এর মাধ্যমে ডিভাইস এবং কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে পারলে অবকাঠামো সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ অনেকাংশে দূরীভূত করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় পলিসি সাপোর্ট, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট এবং ফান্ডিং সাপোর্ট নিশ্চিত করতে পারলে ব্লেন্ডেড এডুকেশন নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।” 

সভাপতির বক্তব্যে ব্লেন্ডেড শিক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো: নিজামুল করিম জানান ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকারের সাথে ব্লেন্ডেড শিক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন উপ-কমিটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ব্লেন্ডেড পদ্ধতি অনুসরণ করে আগামী মাসেই শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে নায়েমের অধীন একটি প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

উল্লেখ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি সময়োপযোগী এবং বাস্তবায়যোগ্য ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি ‘ব্লেন্ডেড এডুকেশন মাস্টারপ্লান’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্স এবং এর অধীন উপ-কমিটিসমূহ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিখন-শেখানো কার্যক্রম, শিখনসামগ্রী, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষকদের সক্ষমতা উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অবকাঠামো এই পাঁচটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মহাপরিকল্পনার খসড়া রূপরেখা প্রণয়নের জন্য এরই মধ্যে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স ও তার অধীন ৭টি উপ-কমিটি (১. প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, ২. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, ৩. কারিগরি শিক্ষা, ৪. মাদ্রাসা শিক্ষা, ৫. উচ্চ শিক্ষা, ৬. স্বাস্থ্য শিক্ষা ৭. গবেষণা ও উন্নয়ন) গঠন এবং তাদের কর্ম-পরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী এবং নায়েম এর পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. একিউএম শফিউল আজম যৌথভাবে মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন। এছাড়া সভার শুরুতে ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা কার্যক্রম এবং এ বিষয়ক উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই-এর পলিসি স্পেশালিস্ট (এডুকেশনাল ইনোভেশন) আফজাল হোসেন সারওয়ার। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি