ঢাকা, বুধবার   ০৯ অক্টোবর ২০২৪

‘আর কেউ যেন বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার না হয়’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা হত্যার পর দেশে যে ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ চালু হয়েছিল তা যেন আবার ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আবারো যেন দায়মুক্তির সংস্কৃতি আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাঁর মত আর কেউ যেন মা-বাবা, ভাইদের হারিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার না হয়।’

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই, আমাদের মত কেউ যেন আর বিচারহীনতার (ইনডেমনিটি) কষ্ট না পায়, বাবা-মা-ভাই মারা গেল তার বিচার চাইতে পারবো না আবার তাদেরকেই গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক বলা হয় এটা সত্যিই দেশের জন্য, জাতির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এরকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোন দিন না পড়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সারাটা জীবন এদেশের মানুষের জন্য এত ত্যাগ শিকার করলেন তাঁকে হত্যা করে প্রকৃত পক্ষে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শকেই হত্যা করা হয়েছিল। আর এই হত্যাকারিদের বিচার যাতে না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। আর এর মাধ্যমে খুনিদের বিচারের হাত থেকে শুধু যে মুক্তি দিয়েছিল তাই নয়, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনীদের পুরস্কৃতও করে। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচারহীনতার এক কালচার।

অথচ জাতির পিতা সব সময় চেয়েছেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু, কি দুর্ভাগ্য আমাদের তাঁর হত্যাকারিদের বিচার যেন না হয় দেশে সে ধরণের আইনও প্রণয়ন করা হয়েছিল, বলেন তিনি।

একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এই ইনডেমনিটি আইন বাতিলের উদ্যোগ নেয় এবং এর মাধ্যমে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ অবারিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সুপ্রীম কোর্টকে, কারণ, এই অর্ডিন্যান্স যাতে বাতিল না হয় সেজন্য আমাদের বিরোধী পক্ষ সবসময় সক্রিয় ছিল। কাজেই কোর্টে যখন এটা আসে সুপ্রীম কোর্ট তাদের রায়ে এটা বাতিল করার নির্দেশ দেয় এবং পার্লামেন্টে আমরা তা বাতিল করি।’

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রশিক ভাই শাহ এবং বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ‘ন্যায় বিচারের অনির্বাণ সুবর্ণ যাত্রা’ শীর্ষক একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ টাকার স্মারক নোট এবং স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। তিনি ৫০ বছরের পথ চলায় সুপ্রিম কোর্ট এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ইংরেজি কপির মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে এই প্রথমবারের মত প্রবর্তিত প্রধান বিচারপতি পদক (পুরষ্কার) তুলে দেন।

পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়া হয়েছে। আর দলগতভাবে এ পদক পেয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

ব্যক্তিগতভাবে পদক প্রাপ্ত ৫ ক্যাটাগরির বিচারক হলেন- জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ ক্যাটাগরিতে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ক্যাটাগরিতে নওগাঁর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহকারি জজ ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ মোসা. রেশমা খাতুন এবং সহকারি জজ ক্যাটাগরিতে রংপুরের সহকারি জজ মো. হাসিনুর রহমান মিলন।

আর দলগতভাবে পদক প্রাপ্ত জেলা হল-ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ। এ জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক গ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগতভাবে পদক প্রাপ্ত প্রত্যেককে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং দুই লাখ টাকার চেক এবং ময়মনসিংহ জেলাকে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি