ঢাকা, শুক্রবার   ১১ অক্টোবর ২০২৪

ডেটলাইন লন্ডন ৯ জানুয়ারি, ১৯৭২: ব্রিটিশ পুলিশ ও বঙ্গবন্ধু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৩

পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে অনির্ধারিত আগমন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে অবাক করলেও তারা তাকে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসাবে আনুষ্ঠানিক সম্মান দিয়েছিল। তবে, হিথ্রো বিমানবন্দরে একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারের ‘অনানুুষ্ঠানিক’ মনোভাবের মধ্যে দিয়ে তাঁর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের শ্রদ্ধা ও উদ্বেগের বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছিল।

পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার একদিন পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছেন। স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে তাঁর অন্যতম শীর্ষ সহযোগী ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। 

এ নিয়ে ড. হোসেন বলেন, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা তাদের হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা প্রবেশদ্বারে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হঠাৎ স্মার্ট ইউনিফর্ম পরা অফিসারটি স্বাভাবিক প্রটোকল ভেঙে বঙ্গবন্ধুর দিকে এগিয়ে আসেন।

“হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে জলভরা চোখে তিনি বললেন, ‘স্যার... আমরা আপনার জন্য প্রার্থনা করেছি’ ‘আমি তার কথা ভুলতে পারি না,’’ বলেন ড. হোসেন।

পাকিস্তানি এয়ার মার্শাল 
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ৫১তম বার্ষিকীর এ সময়ে জাতি যখন স্মৃতির অলিন্দে ফিরে দেখছে তখন পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা অত্যন্ত জীবন্তভাবে কীভাবে বাংলাদেশের স্থপতি নয় মাস বন্দিত্বের পরে সেদেশ থেকে বেরিয়ে আসেন তা চিত্রিত করেছেন।

পাকিস্তান বিমান বাহিনির সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল জাফর এ চৌধুরী, যিনি সে সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) চেয়ারম্যান ছিলেন, তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি স্মরণ করেন যে সবেমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণকারী জুলফিকার আলী ভুট্টো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানিয়েছিলেন। চৌধুরী বলেন, দূর থেকে বাংলাদেশের স্থপতির পাকিস্তানি নেতার সাথে তার শেষ কথা বিনিময় করতে দেখার উত্তেজনা এখনও যেন তার ভেতরে বিরাজ করছে।

তার মতে, পিআইএ ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পরেও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আরও কয়েক ঘণ্টা অব্যাহত ছিল। বিমানটি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকায় একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি দৃশ্যত বঙ্গবন্ধুকে আঁকড়ে ধরেছিল।

চৌধুরী বর্ণনা করেছেন যে ডিনার পরিবেশনের পরে পরিস্থিতি দৃশ্যত সহজ হয়ে যায়। যখন তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে তাঁর পরিচয় দেন এবং এরপর তিনি নিজেই কথা বলতে থাকেন, আবেগের সাথে তাঁর প্রতি বাঙালিদের ভালবাসার বর্ণনা দেন।

তৎকালীন পিআইএ প্রধান স্মরণ করেন যে সকালের নাশতাটি খুব ভোরে পরিবেশন করা হয় এবং পরে একজন স্টুয়ার্ড পিআইএর পক্ষ থেকে ‘সম্মানিত অতিথি’র জন্য উপহার হিসেবে দুটি পাইপ ও একটি জায়নামাজ নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তখন দাঁড়িয়ে উপহার গ্রহণ করেন এবং তাঁর সাথে করমর্দন করেন। 

চৌধুরী স্মরণ করেন যে বঙ্গবন্ধু তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতি চাইতে বলেন এবং সে অনুরোধের সাথে সঙ্গতি রেখে তিনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি বার্তাও পাঠান।

চৌধুরী লিখেছেন, ‘সকাল ৬ টার দিকে আমরা লন্ডনে অবতরণ করি এবং বিমানটিকে মূল টার্মিনাল থেকে কিছুটা দূরে রাখি। কেননা বিমানে কিছু কর্মকর্তা উঠেছিলেন।’ চৌধুরী ডিসেম্বর, ২০১৯-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এয়ার মার্শাল স্মরণ করলেন, ‘আমি শেখ মুজিবকে বললাম, এরা ভিআইপিদের প্রটোকল কর্মকর্তা এবং তারা আপনাকে ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে যাবেন। সেখানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।’ 

তিনি বলেন যে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি লন্ডনে তার কয়েকজন বন্ধুকে ফোন করার জন্য তার কাছে সাহায্য চাইতে পারেন কি-না। এঁদের বেশিরভাগই ছিলেন বাঙালি রেস্তোরাঁর মালিক। কিন্তু, সেই সকাল বেলায় আউটলেটগুলো তখনও বন্ধ ছিল। ফলে, কেউ ফোন ধরেননি।

তবে তিনি স্মরণ করেন যে অবশেষে বঙ্গবন্ধুর এক পারিবারিক বন্ধু মাহমুদ হারুন ফোন রিসিভ করলে ‘আমি নীরবে সরে যাই, তাই আমি তাদের কথোপকথন শুনতে পাইনি।

চৌধুরী লিখেছেন ‘শেখ মুজিব (তখন) আমাকে বলেন, এয়ার মার্শাল, আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এখন আমি আমার লোকদের সাথে দেখা করব যারা বাংলাদেশ মিশন থেকে এসেছেন কারণ আমি তাদের নেতা - জনগণের মানুষ।’ 

পাক হাইকমিশনার
কামাল হোসেন বলেন, ব্রিটেনে পাকিস্তানের তৎকালীন হাইকমিশনার নাসিম আহমেদ বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন, তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে তিনি এখানে এসেছেন।- বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি