ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

আবারও আশুলিয়ায় ৩০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকার আশুলিয়ায় গত কয়েক দিন ধরে টানা শ্রমিক অসন্তোষে বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কারখানা খুলে দেওয়া হয়। তবে রবিবার সকালে কাজে যোগ দেওয়ার পর শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যদিনের মতো রবিবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ বা ভাঙচুর করার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

এরআগে দুই সপ্তাহ আগে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি কেন্দ্র করে ঢাকার সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়।

এতে পোশাক শিল্পে বেশ অস্থিরতা দেখা দেয়। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে কারখানা বন্ধের সংখ্যা প্রায় ১শর কাছাকাছি চলে যায়। শিল্প পাড়ায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গত সোমবার যৌথ বাহিনীর অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যৌথ বাহিনীর তৎপরতা ও গ্রেপ্তার শুরু হলে গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত ৫দিনে শিল্প কারখানা বন্ধের সংখ্যা কমে এসে দাঁড়ায় ১৭টিতে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, দুই সপ্তাহ আগে যে সকল কারাখানার শ্রমিক আন্দোলনে নেমেছিলো তাদের মালিক পক্ষ দাবি মেনে নেওয়ায় তারা কর্মস্থলে ফিরেছে। দাবি আদায়ের বিষয়টি পার্শবর্তী অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে পর্যায়ক্রমে তারাও দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করে বিক্ষোভ করে। এই ধারাবাহিকতায় আজ (রবিবার) বন্ধ কারখানার সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। মালিকপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এখানে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজনও হবে না। তাই মালিক পক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে শিল্প পাড়ায় দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে।   
   
এদিকে বিজিএমইএ'র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলার পর বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করলে অন্তত ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

দাবির বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। এক পর্যায় তারা কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে, বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশিভাগ কারখানার পরিস্থিতি অনেকটা স্বভাবিক থাকলেও নিউএইজ, আল মুসলিমসহ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনকারী শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ডিইপিজেডসহ অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় দল বেঁধে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে তারা বাড়ি ফিরে যায়। বিষয়টি আশপাশের কারখানায় জানাজানি হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে সেগুলোতেও ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর বাইরেও আরো বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করে বসে আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৩০টি কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকার পার্ল গার্মেন্টস এর সামনে এবং আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানায়, সকালে আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা খুললেও ইয়াগি বাংলাদেশ, নিউএইজ, আল মুসলিম, জেনারেশন নেক্সটসহ অন্তত ২০টি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে তুলে কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। কারখানার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে লুসাকা, মাসকাট, বেক্সিমকো (২১ ইউনিট) নিট কম্পোজিটসহ ৭টি কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া বিক্ষোভের কারণে আজও বন্ধ ছিলো ৫-৬টি কারখানা। এসব কারখানার অধিকাংশই বিক্ষোভ শুরুর থেকেই বন্ধ আছে। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার পুকুরপাড় এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে শ্রমিকরা জিরাবো-বিশমাইল শাখা সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এসময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করা হয়। তবে তারা কেউ শ্রমিক নয় বলে জানা গেছে।

এদিকে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার নাসা গ্রুপের কারখানাগুলো খুলে দেওয়ায় শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, মালিক পক্ষ তাদের সব দাবি মেনে নেয়ায় তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। নাসা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার নাইম উল হক বলেন, ১০ দিন বন্ধ থাকার পর আমরা সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করতে পেরেছি। শ্রমিকেরাও শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন। উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে আমরা মালিক-শ্রমিক সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। 

অন্যদিকে শনিবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার মোতালেব হোসেন (২৫), জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার সেলিম রেজা (২১), ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার মো. রাসেল (২৩) এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার লিটন কুমার দাস (২৩)। আটকরা আশুলিয়ার নরসিংহপুর, ঘোষবাগ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকরা সকালে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিলেও সকাল ১০ টার পর থেকে বিভিন্ন কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি শুরু করেন। আল মুসলিম ও নিউএইজ গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে বসে থাকায় কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়া আশপাশের কারখানা ছুটির বিষয়টি জানার পর নিরাপত্তার স্বার্থে সব মিলিয়ে অন্তত ৩০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি দিলে শ্রমিকরা বাসায় ফিরে যান। তবে হামীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। এছাড়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব এবং শিল্প পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে শনিবার রাতে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রবিবারও আশুলিয়ার পুকুরপাড় এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে তাদেরকে এখনও থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।

কেআই// 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি