দেশের মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ২৩:৩২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ০০:২০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা যুবশক্তিকে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করে এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আমাদের তরুণ সমাজ অনেক উদ্যোগী সেটাই আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন।
তিনি দেশবাসীর ওপর আস্থা রেখে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারবেন বলে পুনরায় দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর সরকার দেশে যে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে তাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে মানুষের আকাংখা বেড়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তাঁর সরকারের বিগত ৯ বছর এবং পূববর্তী ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়াদে সরকারে থাকার সময়কার দেশের উন্নয়নের বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনাদের জীবনমান সহজ করা এবং উন্নত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা আজ সেসব সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে জনগণ ২০০ ধরনের সেবা পাচ্ছেন।৯ বছর একটানা জনসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ এর সুফল ভোগ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। হতদরিদ্র ২৪ দশমিক ২৩ ভাগ থেকে ৭ দশমিক ৯ ভাগে নেমে এসেছে। আমরা আগামী মার্চ মাসেই বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করতে যাচ্ছি। তখন কেউ আর আমাদের অবহেলা করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ছিলো ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক দুই-আট শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০৮-০৯ বছরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০১৭ সালের ডিসেম্ বর মাসে মুল্যস্ফীতি ৫ দশমিক আট-চার শতাংশে নেমে আসে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি’র আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৪ দশমিক আট-পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তাঁর সরকার ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে তাঁর সরকার সেখান থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশে ১৬ হাজার ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষকে বিদ্যুতের সুবিধা প্রধান করা হচ্ছে।
দেশে ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং দেশে ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল স্থাপন করে যেসব স্থানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই সেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
টিকে
আরও পড়ুন