ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

নির্বাচন সামনে রেখে সুযোগ নিতে পারে জঙ্গিরা : আইসিজি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১০:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিতে পারে জঙ্গিরা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-আইসিজি। স্থানীয় সময় বুধবার প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মেরুকরণে যে সংকট তৈরি হয়েছে, ইসলামপন্থি জঙ্গিদের তার সুযোগ নেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘাত ও তার নিরসনে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।
বাংলাদেশ সম্পর্কে সংস্থটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসার আল ইসলাম বর্তমানে এদেশের সবচেয়ে বড় জিহাদী সংগঠন। এই দুটি সংগঠন ২০১৩ সাল থেকে মুক্তমনা লেখক, বুদ্ধিজীবী, বিদেশি নাগরিক এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়েছে। অনেকেকে হুমকি দিয়েছে।  
রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরিতা জঙ্গিদের জিহাদী কার্যমক্রম পরিচালনার ক্ষেত্র তৈরি করে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাতের সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা। যদিও ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চরমপন্থী ও জঙ্গিদের দমনে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ।
‘কাউন্টারিং জিহাদিস্ট মিলিটান্সি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতার বিরতি ‘সাময়িক’ হিসেবে প্রতীয়মাণ হতে পারে।
প্রতিবেদনের সতর্ক করা হয় যে, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরিতার সুযোগ নিতে পারে জঙ্গিরা। তখন রাজনীতি আরও সহিংস ও বিষাক্ত হতে পারে।
দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড আবার ২০১৪-২০১৫ সালের রাজনৈতিক সংঘাত ফিরিয়ে আনতে পারে বলে মনে করছে আইসিজি। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত হবে বিরোধী দলগুলোকে মোকাবেলায় বেশি মনোযোগ না দিয়ে সন্ত্রাস দমন কৌশল গ্রহণ করা। জঙ্গি হুমকি মোকাবেলায় সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্যমত্য কিভাবে গঠন করা যায় সেদিকে সরকারের মন দেওয়া উচিত বলে মনে করছে আইসিস।
জেএমবির একটি অংশের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ রয়েছে বলে ধারণা আইসিজির। আর আনসার আল-ইসলামকে আল-কায়েদার দক্ষিণ এশিয়া শাখা সংশ্লিষ্ট হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের ইতিহাস নব্বই দশকের শেষ দিকের, যা শুরু করে আফগান যুদ্ধ ফেরতরা।
জঙ্গিদের প্রথম দফা তৎপরতার সবচেয়ে বড় প্রকাশ ঘটে ২০০৫ সালে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে।
এরপরে সরকার জেএমবি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু তারপরেও জঙ্গি গোষ্ঠীটি আবারও নতুন রূপে সংগঠিত হয়। অপর গোষ্ঠী আনসার-আল ইসলামের উত্থান ঘটে, এদিকে জেএমবির আরেকটি শাখার আত্মপ্রকাশ ঘটে, যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘নিও জামায়াতুল মুজাহিদ’ বলেছে, তারা নিজেদের ইসলামিক স্টেট-বাংলাদেশ বলে পরিচয় দিয়েছে এবং সিরিয়া ও ইরাকে যোদ্ধা পাঠিয়েছে।
দ্বিতীয় দফা জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ কাজ করেছে বলে মনে করে আইসিজি। তাদের ভাষ্য, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘ইসলামের ওপর আঘাত’ হিসেবে বিবেচনা করেছে আনসার-আল ইসলাম এবং সেখান থেকে তারা ব্লগার ও মুক্তমনাদের ওপর হামলা করেছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিল।
আইসিজির মতে, জেএমবির কাছে ‘শত্রুর’ তালিকা অনেক বড়। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিরোধিতার পাশাপাশি তাদের মতো করে ইসলাম পালনে অনাগ্রহীদেরই তারা লক্ষ্যবস্তু করে।
আহমাদিয়া মসজিদ, মাজার, বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির ও শিয়াদের তাজিয়া মিছিলসহ  সংখ্যালঘু, ধর্মীয় স্থাপনা ও অনুষ্ঠানের হামলার যে সব ঘটনায় আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে, সেগুলো এই জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ বলে পুলিশের ভাষ্য।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে আইসিজি বলছে, গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র এবং শহরের অভিজাত পরিবারের তরুণদের ওই হামলা বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে তেমন সমন্বয় না থাকার চিত্রকে প্রকাশ করেছে।
সূত্র : আইসিস এর ওয়েবসাইট।
/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি