অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সীমান্তে বাড়তি সেনা: মিয়ানমার
প্রকাশিত : ১৮:১৪, ২ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৭, ২ মার্চ ২০১৮
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমার বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছিলো বলে জানিয়েছে দেশটি। আর এ কারণেই তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল ।
সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়ে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)এর ক্যাম্পে পতাকা বৈঠকে বসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষ হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুরুল হাসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্ত পুলিশের লেফটেন্যান্ট সোয়োজাই লিউ।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে তারা বাংলাদেশকে অবহিত করবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ (বিজিপি) বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। জবাবে আমরা তাদের জানিয়েছি, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।
৩৪ বিজিবির অধিনায়ক জানান, তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোন সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকরাও ভালো আছেন।
এর আগে আজ শুক্রবার সকালে বান্দরবান উপজলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এন সরয়ার কামাল প্রমুখ।
পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। পরে পতাকা বৈঠকের আহবান জানানো হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার পতাকা বৈঠকের আহবান করা হলেও রাজি হয়নি মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু এলাকায় বিজিপির বাড়তি তৎপরতা দেখা যায়। সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনে তৈরি হয় উত্তেজনা। মিয়ানমার অংশ থেকে ফাঁকা গুলির শব্দও পাওয়া যায়। এতে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। একইসাথে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যেও। এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করে তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহবানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
আর/টিকে
আরও পড়ুন