ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

নতুন কর্মস্থলও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে: মইনুল খান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০৪, ২ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৯, ৩ মার্চ ২০১৮

ড. মইনুল খান। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক। সোনা চোরাচালানকারীদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। জল, স্থল ও আকাশ পথে সোনা চোরাচালান রোধে অভিযান চালিয়ে বেশ আলোচিত তিনি। গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে ঢাকা শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনার পদে বদলি করা হয়।

বিদায় বেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের অ্যাকাউন্টে নিজের কর্মময় জীবন সম্পর্কে পোস্ট দেন তিনি। তার সেই ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো। 

“বিদায় শুল্ক গোয়েন্দা — সাড়ে চার বছর শুল্ক গোয়েন্দার হাল ধরে গতকাল বদলীজনিত কারণে বিদায় নিলাম। নতুন কর্মস্থলে কমিশনার, শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, হিসেবে যোগদানও করেছি।

এই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দাকে অত্যন্ত পেশাদার সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার আন্তরিক, সৃজনশীল ও সৎ চেষ্টা ছিল। মণকে মণ স্বর্ণ, মুদ্রা, মাদক, বিলাসবহুল গাড়ি, তেলের ভেতর কোকেন, অস্ত্র, সিগারেট, অবৈধ মোবাইল, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকৃত পণ্যসহ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা অন্যান্য পণ্য আটকে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার যেমন সমৃ্দ্ধ হয়েছে তেমনি সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় তা ভূমিকা রেখেছে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মূল তত্ত্ব সবসময় অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে — চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ মানিলন্ডারিংসহ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন অপরাধের অর্থায়নের সংশ্লেষ রয়েছে।

এটি করতে গিয়ে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করেছে সংস্থাটি। টাকার অংকে এই অর্থ বিপুল। কেবল স্বর্ণ ও মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়েছে হাজার কোটি টাকা। এই আটকের কারণে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ ও মুদ্রার পাচার রোধ হয়েছে। চট্রগ্রাম বন্দরে তেলের ভেতর যে কোকেন আটক হয়েছে তার মূল্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য আটক চোরাচালানকৃত পণ্যের মূল্য আরও অনেক। শুল্ক গোয়েন্দার দৃশ্যমান কার্যক্রমে কালো টাকা, অপরাধমুলক উৎস ও কারবার বেশ চাপের মধ্যে ছিল।

এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তারা নিশ্চয় দুর্বল নয়। এদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে নানা শত্রুতা ও হুমকি তৈরি হয়েছে। নানা অপবাদ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ থেকে সফলতার সাথে এসব চ্যালেন্জ মোকাবেলা করেছি।

এই অর্জনের অংশীদার শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিটি সদস্য। এনবিআরের নেতৃত্ব ও সরকারের সুযোগ্য নির্দেশনা এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনির সংস্থারাও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

একইসাথে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির নিমিত্তে বেশকিছু নাটক ও টেলিছবি তৈরি করেছি। বহুল আলোচিত ‘স্বর্ণমানব’ এর মধ্যে অন্যতম। উদ্দেশ্য ছিল ঘটনার পেছনের ঘটনা কাহিনির মাধ্যমে প্রচার করা। সাধারণ লোক যেন কোন অপরাধের ফাঁদে পা না দেয় — এমন বার্তা দেয়া হয়েছে এতে।

প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া শুল্ক গোয়েন্দার অন্যতম সহযোগী ছিল। তাদের ইতিবাচক প্রচারণার কারণে অনেক বড় বড় চোরাকারবারি ধরাশায়ি হয়েছেন। জেলও খেটেছেন। কারো কারোর মুখোশ জনসমক্ষে উম্মোচিত হয়েছে।

সার্বিকভাবে সময়টাতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর জাতির কাছে অন্যতম সরকারি সংস্থায় পরিণত ও পরিচিত হয়েছে। আশা করছি শুল্ক গোয়েন্দার নতুন নেতৃত্ব এই পথচলা অব্যাহত রাখবেন ও আরো উন্নত করবেন। অন্যদিকে সদ্য যোগদানকৃত নতুন কর্মস্থলও আরেকটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হবো — এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

এক নজরে ড. মইনুল খানের পরিচিতি

ড. মইনুল খান ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ে এমবিএ অর্জন করেন। আর ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পুলিশিং, গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা বিষয়ে গবেষণার জন্য ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেন।

ক্যারিয়ারের এক সময়ে বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউএনবিতে সাংবাদিক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেন এই সরকারি আমলা। ভ্রমণ, সামাজিক উপন্যাস এবং গোয়েন্দা কাহিনী লিখতে বেশি পছন্দ করেন ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের দায়িত্ব পালন করেন ড. মইনুল খান।

 এসএইচএস/টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি