বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী ভিয়েতনাম
প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ৬ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২০:১৮, ৬ মার্চ ২০১৮
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ঢাকা সফররত ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। দেশের অগ্রসরমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটি), চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, অবকাঠামো ও পর্যটনসহ সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করতে চায় দেশটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এসময় আরও বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-আগামীতে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হবে এবং চলতি বছর বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। ২০২০ সাল নাগাদ এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এসময় ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী পাম বিন মিন এবং পরিকল্পনা ও বিনিয়োগমন্ত্রী গুয়েন চিন ডাংসহ দু’দেশের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ফোরামে সেদেশের ৫০টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে ত্রান দাই কুয়াং বলেন, “এই সফরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের কাছে অনুকূরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানে সামাজিক ন্যায্যতাও সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই অগ্রগতির ওপর ভর করে বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং ডিজিটাল সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
ত্রান দাই কুয়াং ভিয়েতনামের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেদেশে বিনিয়োগ করতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম দু’দেশই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রাম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এছাড়া রফতানি প্রক্রিয়াকরণঞ্চল (ইপিজেড) রয়েছে। কর অবকাশসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়াসহ নানা বিনিয়োগ সুবিধা থাকছে।
তিনি সরকারের দেওয়া আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ অথবা এর বাইরে বিভিন্ন খাতে ভিয়েতনাম বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে ভিয়েতনাম ব্যবসায়ীদের কৃষি, খাদ্য-প্রক্রিয়াকরণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া, পাট, সিরামিক শিল্প এবং কৃষি উপকরণ ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে ভিয়েতনামের সাথে যৌথ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নের লক্ষ্যে এফবিসিসিআই এবং ভিয়েতনামের বেসরকারি খাত ‘বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মহিউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি পর্যায়ে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়। ‘সী ফুড’ এবং ‘লেদার ও ফুটওয়্যার’ এই দুই খাতে পৃথকভাবে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশ থেকে এসব খাতে পণ্য রফতানি এবং ভিয়েতনামের কারিগরি সহয়তা সম্প্রসারণ করা হব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় এ পর্বে ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গুয়েন চি ডাং এবং শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী চাও কুয়োক হাং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভিয়েতনামে রফতানি করে এবং ভিয়েতনাম থেকে ৪১২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য হচ্ছে কৃষিজাত পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ঔষধ সামগ্র।
টিকে
আরও পড়ুন