যা হারিয়েছি তা পূরণ হওয়ার নয়: ক্যাপ্টেন আবিদের স্ত্রী
প্রকাশিত : ১৮:১৭, ১৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৮:২৩, ১৩ মার্চ ২০১৮
অসময়ে এভাবে আবিদের চলে যাওয়া অপূরণীয়। বলার মতো কোনো ভাষা নেই। তার চলে যাওয়া কোনো কিছুতে আর পূরণ হওয়ার নয়। যা কোনো দিন কল্পনা করিনি, তাই হয়েছে। তার জন্য সবাই দোওয়া করবেন। সে যেন জান্নাতবাসী হয়।
এভাবেই আবেগ আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন সোমবার দুপুরে নেপালে ইউএস বাংলার বিধ্বস্ত বিমানের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম টপি (৪০)।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সোমবারই ৫০ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। তখনও বেঁচে ছিলেন আবিদ। আবিদ সুস্থ হয়ে ফিরবেন- এমন আশাতেই ছিল তার পরিবার। কিন্তু আবিদ আর ফিরলেন না। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ আসে। সে খবরে আধার নেমেছে উত্তরা পশ্চিমের ১৩ নং সেক্টরের ১৮ নং সড়কের ৩৮ নং বাসায়। ওই বাসাটিই আবিদের।
মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর আবিদের আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় জমায় তার বাসায়। ছেলে তানজিব বিন সুলতানের গলা জড়িয়ে কাঁদছেন টপি। বাবাহারা সন্তানকে নিয়ে কালো মেঘের ভেলায় অনিশ্চিত ভবিষ্যত ভাবনায় ব্যাকুল টপি।
বলছিলেন, ‘এমন করে চলে যাওয়া কল্পনাতীত। ও খুব ইনোসেন্ট এবং দক্ষ। ওর মতো মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ে যাবে ভাবনাতীত। দোয়া চাই ওপারে ভাল থাকুক আবিদ।’
আবিদ সুলতানের বাবা এম ও কাশেমও পাইলট ছিলেন। আবিদরা ৫ ভাই। খুরশিদ মাহমুদ, সুলতান মাহমুদ, সেলিম মাহমুদ, আমির মাহমুদ সবাই প্রতিষ্ঠিত।
আবিদের ভাই খুরশিদ মাহমুদ বলেন, একমাত্র সন্তান তানজিব বিন সুলতান মাহি এবার ‘ও‘ লেভেল পরীক্ষা দেবে। অসময়ে ও এতিম হলো। আমরা ভাই হারালাম। ও খুব পারদর্শী, ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি।’ এমন দুর্ঘটনা মানতে পারছি না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু অনলাইন গণমাধ্যম ভুল বার্তা দিয়েছে। আবিদের নামটাও শুদ্ধ লেখেনি। টিভিতেও ভুল নামে স্ক্রল গেছে। এসব কারণে আমরা আরও বেশি প্রেসারে পড়েছি। ফাইনালি ওর মৃত্যুর খবর সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ওর মৃত্যুর কারণ, দুর্ঘটনার কারণ ইউএস বাংলা, এক্সপার্টরা ভালো বলতে পারবেন। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে পাইলটের কোনো ত্রুটি ছিল না।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের প্রত্যেকে পরিবারকে যেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, তাদের শোকাহত মুহূর্তগুলোকে যেন তাচ্ছিল্য করা না হয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি। এটা নিয়ে যেন টক শোতে নেতিবাচক কোনো কথা না হয়, যেন শুনতে না হয়, প্রধানমন্ত্রী দেখছেন সব। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
খুরশিদ মাহমুদ বলেন, আমার অনুরোধ, দ্রুত যেন আবিদসহ নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আবিদদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলারর রাণীনগরে। তার শ্বশুড়বাড়ি নাটোরে।
উল্লেখ্য, কাঠমান্ডুর নরভিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবিদ মারা যান বলে মঙ্গলবার ভোররাতে তার উত্তরার বাসায় ইউএস বাংলার পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়। সোমবার দুর্ঘটনার পরপরই বিমানটির কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ ও ক্রু খাজা হোসেন মারা যান। আজ গেলেন প্রধান পাইলট আবিদ সুলতান।
এসি
আরও পড়ুন