সরকারি খরচে চিকিৎসা পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা
প্রকাশিত : ১২:০৫, ১৮ মার্চ ২০১৮
সরকারি খরচে তিন ধাপে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অসুস্থ-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে প্রথম ধাপে। এ ছাড়া অন্য দুটি ধাপে সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন তাদেরও ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার। আর এসব চিকিৎসা দেওয়া হবে রাজধানীর ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালসহ জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। এ জন্য `মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসাসেবা প্রদান নীতিমালা` নামে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই কার্যকর হতে পারে এই নীতিমালা।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে এই প্রথম মন্ত্রণালয় থেকে এই নীতিমালাটি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নীতিমালার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামতও চাওয়া হয়েছে। কারণ হাসপাতালগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই নিশ্চিত করতে হবে। তাদের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) মতামত পাওয়া গেলে এর ভিত্তিতে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছাড় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নীতিমালা অনুসারে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধারা দেশের যে কোনো উন্নত হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের আর বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না। চলতি মাস থেকে এই সুবিধা চালুর ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন খাত থেকে উপার্জিত প্রায় ১৬ কোটি টাকা কল্যাণ ফান্ডে জমা রয়েছে। এই পুরো টাকাই মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবায় ব্যয় করা হবে। আগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে এই টাকা ব্যয় করা হতো। তবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই টাকা ব্যয় না হওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে এবার মন্ত্রণালয় থেকে তিন ধাপে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা কমিটি এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম রাজধানী নামিদামি হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদন করবে।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, পাঁচ কোটি টাকার বেশি সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ২৫ শতাংশ মওকুফ পাবেন। দুই কোটি ২৫ লাখ থেকে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ৫০ শতাংশ মওকুফ পাবেন। এ ছাড়া আয়কর দাতা হিসেবে নিবন্ধিত নন এমন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে শতভাগ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
চিকিৎসা ব্যয়ের উৎস প্রসঙ্গে নীতিমালায় বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পরিচালিত হাটবাজারের ৪ ভাগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ, রাজস্ব বরাদ্দ এবং ক্ষেত্রবিশেষে দান হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা হবে। চিকিৎসাসেবা বলতে সব ধরনের ডাক্তারি সেবা, শল্য চিকিৎসা, ওষুধ ক্রয় ও সরবরাহ, বেড ভাড়া, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ এবং সেবিকার সেবা চিকিৎসাসেবার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে মেডিকেল অ্যাটেনডেন্টের সব খরচ রোগীকে পরিশোধ করতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা নিজ নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন। এ ছাড়া রাজধানীতে ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন। তবে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে হলে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হলো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ।
এসএইচ/
আরও পড়ুন