চিরতরে হারিয়ে গেল রফিক জামানের পরিবার [ভিডিও]
প্রকাশিত : ১৯:৫৬, ১৯ মার্চ ২০১৮
নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় চিরতরে হারিয়ে গেছে কোন পরিবার; আবার কেউ হারিয়েছে সন্তান, কেউ বাবা অথবা মাকে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব পরিবারের জন্যই হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ যন্ত্রণার।
রফিক জামান, অনেকের প্রিয় রিমু ভাই। সাদা মনের মানুষ, নব্বইয়ের দশক থেকে সোচ্চার ছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। শ্লোগান- ৭১ আর সি আর আই এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। কাজ করতেন প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’ নিয়ে। জড়িত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে।
রফিক জামানের যোগ্য সহধর্মীনি সানজিদা হক বিপাশা। সুজনের সিনিয়র কো অর্ডিনেটর। সহকর্মীদের সবার প্রিয়, কর্মচাঞ্চল্যে উচ্ছল বিপাশা আর কখনই ফিরবেন না কর্মস্থলে, প্রিয়জনদের কাছে।
এই দম্পতির সন্তান অনিরুদ্ধ, বন্ধুদের বলে গিয়েছিলো পাহাড় দেখতে যাচ্ছে। কে জানতো বাবা-মায়ের সাথে অন্যভূবনে পাড়ি জমাবে সেও।
বিমান দুর্ঘটনা পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে দিলো রফিক জামানের পরিবারকে। স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা আর সাত বছরের ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে পাহাড় দেখার স্বপ্ন নিয়ে নেপাল যাচ্ছিলেন রফিক জামান।
কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের রানওয়েতে চিরতরে হারিয়ে গেছে এই পরিবার।
খবরের মানুষ ফয়সাল আহমেদ, নিজেই খবরের শিরোনাম। বিমান দুর্ঘটনায় থেমে গেলো তার কলম। বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আর কখনই খবর তৈরির ব্যস্ততায় অধীর হবেন না। ফিরবেন না ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান পাইলট আবিদ সুলতান, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তার শোকে প্রিয়তমা স্ত্রী আফসানা খানম গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছেন ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে।
ছবির কারিগর ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তিন বছর বয়সী মেয়ে প্রিয়ংম্ময়ী তামারাকে নিয়ে অন্যভূবনে পাড়ি জমালেন।
প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন, তবে জানেন না কি হারিয়েছেন তিনি। একই বিমানে থাকা অ্যানি, প্রিয়কের বড় ভাই মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
হিয়া, কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলার শিশু কন্যা। দুই বছরের ফুটফুটে এই শিশু জানে না, তার প্রিয় মা প্রতিদিনের মত কাজ শেষ করে ফিরবে না তার কাছে। আর কেউ মায়া ভরা আদরে ভরিয়ে দিবে না তার তুলতুলে গাল।
বাবা-মা আর দেশকে গর্বিত করে নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা না করে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন উড়োজাহাজের ফাস্ট অফিসার প্রিথুলা রশিদ।
ইউএস বাংলার মর্মান্তিক এই বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ২৬ বাংলাদেশীর প্রাণ। সেই সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে ২৬টি পরিবারের হাসি-আনন্দ আর বেঁচে থাকার শক্তি। দুর্বিসহ যন্ত্রণায় কাটছে স্বজনদের প্রতিটি প্রহর।
আরও পড়ুন