রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা
প্রকাশিত : ১৭:৩৯, ২১ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৪৭, ২১ মার্চ ২০১৮
মিয়ানমার থেকে চরম নির্যাতিত হয়ে এদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের জন্য এখন প্রয়োজন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহযোগিতা। যেমন- স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য উদ্ধুদ্ধকরণ, টিকা, আঘাত পুনর্বাসন, মানসিক সহায়তাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহযোগিতা। এসব সহযোগিতা তারা যদি না পায় তাহলে দেশে এইডসসহ নানা ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কনফারেন্স হলে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের (ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সেলান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান।
তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ওপর গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দিন গবেষণা চালানো হয়। এই দিনগুলোতে মোট ১৬৩৪টি পরিবারের ৭ হাজার ৯০৩ জন সদস্যর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের এলাকা ছিল কুতুবপালং (ক্যাম্প ১, ক্যাম্প ২) ও বালুখালিতে (ক্যাম্প ১ ও ক্যাম্প ২)।
মোট উত্তরদাতাদের শতকরা ৫৫ ভাগ পুরুষ। তাদের গড় বয়স ৩৬ এবং স্কুলে পড়ার গড় সময় ৪ বছর। শতকরা মাত্র ৪ ভাগ ১০ বছরের বেশি সময় স্কুলে পড়াশোনা করেছে। আর শতকরা ২৪ ভাগ কখনও স্কুলে যায়নি। এর মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ মনে করে তারা বর্তমানে অসুস্থ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্প পরিবারের সদস্যদের গড় সংখ্যা ৪ দশমিক ৮ জন। প্রতিটি পরিবারে কৃষিজমির গড় পরিমাণ ছিল ২৭০ দশমিক ৪ শতাংশ। শতকরা ২২ ভাগ পরিবারের কোনো কৃষি জমি ছিল না। তাদের স্বর্ণালঙ্কারের গড় পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ০৫ ভরি। শতকরা ২০ ভাগ পরিবারের কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ১ ভাগেরও কম পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল। ৯ ভাগ পরিবারের বাড়ির ছাদ ছিল পাতা ও ছন দিয়ে তৈরি। গত এক বছরে ৫০ ভাগ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১৯ ভাগ মানুষেরই খাবার স্যালাইন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।
এ ছাড়া মিয়ানমার অবস্থানকালে সর্বশেষ ছয়মাসে ছোট পরিবারের শতকরা ১৮ দশমিক ৩ ভাগ সদস্য বুলেট, লাঠি ও ছোরা ও যৌন হামলায় আহত হয়েছেন। শতকরা ৬৩ ভাগ উত্তরদাতা এখনও সেই হামলার কারণে ভুগছেন।
আহতদের মধ্যে শতকরা ৩৯ভাগ ফার্মেসি থেকে, শতকরা ২৯ ভাগ হাসপাতাল থেকে ও শতকরা ১৩ ভাগ কোনো চিকিৎসাই পায়নি। বিগত ছয়মাসে মোট আহতের সংখ্যা ২৩ হাজার ২৬৫ জন।
গবেষণায় বলা হয়, শতকরা ৫ ভাগ পরিবারের গত বছর এক সন্তানের জন্ম হয়। শতকরা ৬৭ ভাগ গর্ভবতী মা টিকা নিয়েছেন। শতকরা ৩৪ ভাগ মা কমপক্ষে একবার প্রসবোত্তর সেবা পেয়েছেন। শতকরা ৯০ ভাগ ডেলিভারি ঘরে সম্পন্ন হয়। শতকরা ৭২ ভাগ ডেলিভারি ধাত্রি দ্বারা, শতকরা প্রায় ১ ভাগ যোগ্যতা সম্পন্ন ডাক্তার দ্বারা সঞ্চালিত হয়। প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ পরিবার গর্ভপাতের রিপোর্ট করে। গত এক বছরের মধ্যে শতকরা ১২ ভাগ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে গত বছর যৌথ পরিবারে শতকরা ১৩ ভাগ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শতকরা ৫৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া শতকরা ১৫ ভাগ হঠাৎ মৃত্যু, শতকরা ৯ ভাগ জ্বর, শতকরা ৩ ভাগ পক্ষাঘাত, শতকরা ৪ ভাগ দুর্ঘটনা ও শতকরা ৪ ভাগ গর্ভধারণ সম্পর্কিত মৃত্যু হয়।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বুধবার প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে সবশেষে উল্লেখ করা হয়, ৬ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১৩ হাজার ৪৪৬ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
আআ/এসি
আরও পড়ুন