স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার শ্রদ্ধা নিবেদন
প্রকাশিত : ২১:৩৭, ২৬ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২১:৩৮, ২৬ মার্চ ২০১৮
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে ৭১-এ আত্মোৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার দৃপ্ত শপথে সমগ্র বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের স্মরণ করছে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছরে পদার্পণের শুভ মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন বাঙালি জাতির পালকে যুক্ত হয়েছে আরো একটি সাফল্য। একই সঙ্গে ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সেই কালজয়ী ভাষণও ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগে এই দুটি বিশাল সাফল্য আত্মপ্রত্যয়ী বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাসকে আরো বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মনে করছেন দেশের তরুণ প্রজন্ম।
৪৭ বছর আগে এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেদনে ফুলে ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের মূল শহীদ বেদী। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসে সব বয়সী মানুষ। এসেছিলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আহত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও। সকলের চোখে মুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ আর উচ্ছাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে।
দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সকাল ৬টা ১ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এরপর প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময়ে তারা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয় এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাদের অভিবাদন জানান। রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো শেষে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে আরেক দফা শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে শ্রদ্ধা জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি ও বিদেশি কূটনীতিকগণ।
এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটকটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিএনপি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ, বিএলআরআই, গন বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, বিভিন্ন সরকারী ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান, গনফোরাম, সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গনতন্ত্রী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সংসদ, জাসাস, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
হানাহানিমুক্ত দেশ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ স্মৃতিসৌধে আসে লাল-সবুজের পতাকার রঙ্গের পাঞ্জাবি আর শাড়ী পড়ে। এমন দৃশ্য ছিল সর্বত্র। হাত-মুখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জাতীয় পতাকা আঁকে শিশু-কিশোররা। অনেকে মাথায় পরিধান করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্বলিত ব্যান্ড। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই ছুটে আসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
এদিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকাতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র্যাব, পোশাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বাসস
আর/টিকে
আরও পড়ুন