ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ জানুয়ারি ২০২৫

‘ভাইয়া নেই, আমাদের চলার গতিও নেই’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩০, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

পটুয়াখালীর বাউফলের হাস্যজ্জ্বল ছেলে রাজীব যখন তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত, তখনই সে তার মাকে হারান। রাজীব অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর তার বাবাও চলে যান না ফেরার দেশে। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খালার বাসায় থেকে, কঠোর পরিশ্রমে স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন ওই তরুণ।

তিতুমীর কলেজে রাজিব পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন। তার সামান্য আয় আর আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় নিজের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। এখন তার ছোট দুই ভাইয়ের সামনে এখন অনিশ্চয়তার সীমা নেই।

মৃত্যুর আগে অজ্ঞান অবস্থায় রাজীবকে যখন রাখা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে। ভাইয়ের জ্ঞান ফেরার আগে আইসিইউর সামনে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রাজীবের ছোট দুই ভাই হাফেজ মেহেদি হাসান (১২) ও হাফেজ আবদুল্লাহকে (১১)। দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর বড় ভাই রাজীবের জন্য দুই ভাই মিলে কোরআন পড়েছে। মসজিদে দোয়া পড়িয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের পাশে দাঁড়িয়ে মেহেদী আর তার ছোট ভাই আবদুল্লাহর সাথে কথা হয়। তারা দুজন যাত্রাবাড়ীর তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সপ্তম আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

অশ্রু সিক্ত চোখে রাজীবের মেজো ভাই মেহেদী বলল, ‘আমাদের ভাইয়া আজ নেই, আমাদের আর চলার গতিও নেই।’

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ারবাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের (২১) হাত কাটা পড়ে। ১৩ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৬ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাতে রাজীব না ফেরার দেশে চলে যান।

সদ্য কৈশোরে পৌঁছানো রাজিবের ভাই মেহেদী যেন দু’চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। সে জানে না, কীভাবে এই বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব। তার আর্তনাদ, সরকার যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হয়ত লেখাপড়াটা চালিয়ে দিতে পারবে তারা।

মেহেদি জানাল, ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ার পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। নিজিই নিজের পড়ার খরচ চালাতেন। খুব সমস্যা না হলে কারো সাহায্য নিতে চাইত না ভাইয়া।

মেহেদী আর আবদুল্লাহর মামা জাহিদুল ইসলাম জানান, রাজীব সবসময় চাইতো জীবনকে কীভাবে একটু ভালো করা যায়। কষ্টেই ওর জীবনটা কেটেছে। প্রায়ই রাতে ভাগ্নের সঙ্গে কথা হত তার। রাত ১২টায় যখন তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম বলতাম কী কর? রাজিব বলতো, মামা কম্পিউটারে টাইপ করি। আমি বলতাম, রাত অনেক হয়েছে, এখন বাসায় যাও। ওই বলতো, ‘মামা, অনেক টাকার দরকার তো...’।

জাহিদুল আরো বলেন, হাসপাতালে রাজীবকে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম সহায়তার আশ্বাস দিলেও, এখনও কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। তবে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স সবাই যে আন্তরিক চেষ্টা করেছেন, সেজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা থাকব।

মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্ট মাজার মসজিদ চত্বরে রাজীবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে রওনা হন পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রামের বাড়ির পথে।

ক্ষতিপূরণ: বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর ঘটনায় মৃত্যুতে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন রাজীবের পরিবার। তারা বলছেন, রাজীবের অবর্তমানে তার এতিম দুই ছোট ভাইয়ের জন্য ওই অর্থ দরকার।

রাজীব আহত হওয়ার পরদিন ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে তার চিকিৎসা ব্যয় দুই বাসের মালিককে বহনের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রাজীবকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।

আর/টিকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি