কর্মক্ষেত্রে অরক্ষিত শ্রমিক, নেই চাকরির নিরাপত্তা
প্রকাশিত : ১১:১৩, ১ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৩:০৯, ১ মে ২০১৮
(ফাইল ফটো)
দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক এক শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মালিকপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকার কারণে কর্মক্ষেত্রে অরক্ষিত শ্রমিকরা। নেই চাকরির কোনো নিরাপত্তা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে শ্রমিক নির্যাতন ও মুজরি বৈষম্য এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। যে কোনো সময় চাকরি হারানোর ঝুঁকি থাকে। কর্মক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক নিহত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকটাই নিহত শ্রমিক স্বজনের কাছে পৌঁছায় না। শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এর পাশাপাশি শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ না করতে পারলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের অর্থনীতি। তারা বলছেন, নির্যাতনের কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে এলেও পরে দেখা যায় মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমিকদের নিরাপত্তারবিষয়ক সংগঠক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তাতে দেখা গেছে, গত ৪ বছরে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালে কর্মক্ষেত্রে ৭৮৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা গেছেন পরিবহন খাতে—৩০৭ জন। এরপরই আছে নির্মাণশ্রমিক। তাদের সংখ্যা ১৩১ জন। ২০১৬ সালের তুলনায় এই দুই খাতেই নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। ওই বছর পরিবহন খাতে নিহত হন ২৪৯ আর ৮৫ জন নির্মাণশ্রমিক। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ৭৮৪ জনের নিহত হয়েছে এরমধ্যে ১০৯ জন ছিল নারী।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় মোট ১৪৫ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ৩২টি ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির মধ্যে ব্যবস্থাপক পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন ছয় লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার এবং পুরুষ পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার। পেশাদার রয়েছেন ১৯ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ সাড়ে ১২ লাখ এবং মহিলা ছয় লাখ ৯০ হাজার। প্রযুক্তি এবং তৎসংশ্লিষ্ট কর্মে রয়েছেন সাত লাখ ২৭ হাজার, এর মধ্যে পুরুষ ছয় লাখ ২১ হাজার এবং নারী এক লাখ সাত হাজার। যারা কেননা কোনোভাবে নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত ।
এব্যাপারে জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পরিবহন, পাথর ভাঙা বা নির্মাণ খাতের মতো খাতে শ্রমঘণ্টা, মজুরির এসবের ক্ষেত্রে নিয়ননীতির কোনো বালাই নেই। গাছ থেকে ফল পড়ার মতো একটি করে জীবন টুপ করে ঝরে যায়, কেউ খেয়াল রাখে না। তাদের সুরক্ষার কথা কেউ চিন্তা করে না।
এব্যাপারে বিলসের নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, শ্রম অধিকারসংক্রান্ত সমস্ত আলোচনা বা সুযোগ-সুবিধা তৈরি পোশাক খাতের দিকেই নিবদ্ধ। অন্য খাতগুলো তাই দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পর এর দায় সাধারণত চালক ও তার সহকারীর ওপর চাপানো হয়। আর মালিক এর সুযোগ নিয়ে ক্ষতিপূরণ থেকে পার পেয়ে যায়। আমাদের দেশেকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতে হবে সবাইকে।
ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশের (ইনসাব) হিসাব অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শ্রমিক বা তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক মিলে মিটমাট করে ফেলেন। নামমাত্র অর্থ দিয়ে বা না দিয়েই মালিক পার পান।
এবিষয় ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, পত্রিকায় নির্মাণ শ্রমিকের নিহত হওয়ার যে খবর আসে, প্রকৃত সংখ্যা তার অনেক বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর পাওয়াই যায় না। দেশ উন্নয়নের জন্য শ্রমিকদের চাকরি ও স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক সময় তাদের বেতন পরিশোধ করতে হবে।
তবে এমন বিষয় মানতে নারাজ শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো, মুজিবুল হক। তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আমরা বাবাবার বসেছি। আলোচনা করেছি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এমনকি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন বছরমেয়াদি একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকদের অধিকার আরও সুরক্ষিত হবে।
টিআর /এসএইচ/
আরও পড়ুন