ঢাকা, রবিবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে

স্বর্ণ গায়েব হয়নি লেখার ভুল মেশিনের হেরফের 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২২, ১৭ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২০:২৭, ১৭ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ গায়েব হয়নি। করণিক (লেখার) ভুল হয়েছে। মেশিন ভেদে মানের হেরফের হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

আজ মঙ্গলবার মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এসএম রবিউল হাসান, কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুলতান মাসুদ আহমেদ, কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন এ্যান্ড পাবলিকেশন্সের মহাব্যবস্থাপক জীএম আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।   

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ পরিবেশন করে একটি জাতীয় দৈনিক। এতে বলা হয় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি জমা রাখা হলেও অনুসন্ধানে মিশ্র ধাতু পাওয়া গেছে। ২২ ক্যারেট সোনা পাওয়া গেছে ১৮ ক্যারেট। 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন তাদের নিজেদের। তবে তদন্ত চলাচালীন সময়ে আমাদের সঙ্গে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধিতা ছিলো। তখন আমরা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সোনার মান পরীক্ষা করাতে আণবিক শক্তি কশিনের নাম প্রস্তাব করি। তাতে সংস্থাটি রাজি হয়নি।  

নির্বাহী পরিচালক এস এম রবিউল হাসান বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার বরাত দিয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক নয়, বস্তুনিষ্ট নয়। তবে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূতি নষ্ট হয়েছে।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা ধাতু বদলে যাবার কোন সুযোগ নেই। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুপার সুপার এবং সুপার। তবে এখানে শুল্ক গোয়েন্দা অনুমতি নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করে। ওই সময় তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। সংস্থাটি ভাড়া করা মেশিন নিয়ে সোনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে আসে। ফলে এটি তাদের নিজস্ব প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা তার প্রতিটি অংশ ব্যাখ্যা করে জবাব দিয়েছি। গত ১১ জুলাই তা এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।

সোনার মান পরীক্ষার পদ্ধতির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ম্যানুয়ালি সোনার মান পরীক্ষা করে শুল্ক গোয়েন্দা কে সোনা গ্রহণের প্রত্যয়পত্র দেওয়া হয়। তবে সেখানে কিছু করণিক ভুল ছিল। আমাদের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার (শখ জুয়েলার্স) সোনা পরীক্ষা করে ৪০ শতাংশ সোনা বলে মত দেন। তবে সেটি ভুলে প্রত্যয়নে ৮০ শতাংশ লেখা হয়। পরে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। তখন শুল্ক গোয়েন্দার সংশিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের এ সংক্রান্ত প্রত্যয়পত্রও দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারও পরে সেটি সংশোধন করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরো বলছে, শুল্ক গোয়েন্দা একটি ভাড়া করা মেশিন দিয়ে সোনার মান পরীক্ষা করিয়েছে। আমরা এটি আমলে কেন নেব। সেটি তাদের ব্যাপার। তবে তারা আমাদের প্রস্তাবে তৃতীয় কোন পক্ষের কাছে যেতে রাজি হয়নি। রাষ্ট্রের জিম্মাদার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে কোন অনিয়ম হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সার্বিক তত্তাবধানে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা ডিজিটালি সোনার মান পরীক্ষা করে জমা করতে আসেন। আমরা ম্যানুয়ালি করি। তবে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। জাপান থেকে একটি মেশিন ৪ কোটি টাকা দিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেটি অনেক সময় ভুল প্রতিবেদন দিচ্ছিলো। তাই মেশিনটি ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাচিত স্বর্ণকার আছেন। তিনি যাচাই বাছাই করে সোনার মান নির্ধারণ করে দেন। কেন একজন স্বর্ণকারের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য, এর আগে এমন পরিস্থিতি হয়নি। এখন বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হবে। 

কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জিএম সুলতান মাসুদ আহমেদ বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন মেশিন নেই যে স্বর্ণের সঠিকমান যাচাই করা যায়। একেক মেশিনে একেক ধরনের মান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে মানের যে হেরফের তা মেশিনের কারণেই।

জীএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভল্টে স্বর্ণের বিষয়ে নিরাপত্তার কোন ব্যতয় ঘটেনি। ভল্ট খুবই সুরক্ষিত। সেখানে ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাইলেই কেউ ঠুকতে পারেন না। এমনকি গভর্নরও প্রবেশ করতে পারেন না। একটি চাবিকে ভল্ট খোলা যায়না। তাই প্রতিবেদনে প্রকাশের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা যেতো।

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি