‘পাকিস্তান জন্মের দিনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন’
প্রকাশিত : ১৯:০৮, ১৪ আগস্ট ২০১৮
ড. নূহ উল আলম লেনিন। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে যোগ দেন তার দলে। একে একে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্যের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের একমাত্র মুখপত্র `উত্তরন`র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক জীবনে নানা ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টতা পেয়েছেন। সাক্ষী হয়েছেন অনেক কিছুর। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে তাই একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম তাঁর। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে অনেক অপ্রিয় সত্য কথাও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আপনার প্রথম পরিচয় কবে কীভাবে?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় দু`ভাবে। প্রথমত তার সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে অনেক অনেক শোনা, দ্বিতীয়ত তার সঙ্গে সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ। আমার বাবা আবদুর রহমান মাষ্টার বামপন্থী রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সরকারকে যখন ৯২ ( ক) ধারায় ভেঙ্গে দেওয়া হল তখন আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাগারে ছিলেন। তখনো তিনি `বঙ্গবন্ধু` হননি। সেই হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের শৈশবের পরিচয় বাবার মাধ্যমে। জেলখানার নানা কাণ্ড কারখানা, গল্প, সাহস, সবাইকে মাতিয়ে রাখা - এসব ছিল বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তখন রাজনীতি নিয়ে আলাপ করার বয়স আমাদের না হলেও আমরা শুনতে শুনতে অনেক কিছু জেনেছিলাম। বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপ হতো। ১৯৬২ সালের পরে বিভিন্ন এলাকায় বঙ্কবন্ধু ঘুরে বেড়াতেন। সেসব ছবি পত্রিকায় আসত। আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে চিন্তার জগতে এভাবেই জড়িয়ে যাই।
বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি দেখি ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুথানের সময়। ওই বছর তিনি যেদিন জেল থেকে মুক্তি পান সেদিন আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। রাজনীতির কারণে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু যেসব নির্বাচনী সভাগুলো করেছিলেন সেগুলোতে কম বেশী আমি বক্তৃতা শুনেছি। কখনো কখনো সঙ্গে ছিলাম। ৭ মার্চের ভাষণ রেসকোর্সে উপস্থিত হয়ে আমরা কয়েকজন একসঙ্গে শুনি। আমি, তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এখানে না বললেই নয়, আমার বাবা যদিও বাম রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তথাপি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করতেন। আমাদের পরিবারের রাজনৈতিক কূলগুরু বলে খ্যাত কৃষক নেতা জীতেন ঘোষ ( যিনি জীবনে ৩৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনেই তার জীবন ব্যয় হয়েছে।) বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানা সময় প্রশংসা করতেন। তারা দু`জনেই বলতেন বঙ্গবন্ধু ভিন্ন মতাদর্শী হলেও বড়দের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। ফলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এক ধরণের সফট কর্ণার আমাদের আগে থেকেই ছিল।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে আপনারা তো ‘মতিয়া গ্রুপে’ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি মতিয়া গ্রুপের রাজনৈতিক মনোভাব কেমন ছিল?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: ছয় দফার কারণে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মতিয়া গ্রুপের মনোভাব ছিল সমর্থন সূচক। মূলত: সেই সমর্থনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে নাহিদ- মুজাহিদ- লেনিন পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আপনারা কোন নীতি অনুসরণ করেছিলেন। মুজিব বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কোন সুযোগ তো আপনাদের ছিল না।
ড. নূহ উল আলম লেনিন: মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের ইন্দিরা সরকার সিদ্ধান্ত নেয় মুজিব নগরে যেই অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছে ( বঙ্গবন্ধু যে সরকারের রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী) সেই সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, সহায়তা ও শরনার্থীদের আশ্রয় দেবে। প্রথমদিকে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ব্যতীত অন্য দলের সমর্থক বা কর্মীদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের ব্যাপারে অস্থায়ী সরকারের প্রবল আপত্তি ছিল। মার্কসবাদী দর্শনে দিক্ষিত ছেলেদের হাতে অস্ত্র আসুক সেটা কেউ তখন চায়নি। একটা সন্দেহ ছিল, ভয় ছিল। তবে পরে সেই পলিসি চেঞ্জ করে। যখন ছয় জনের একটা উপদেষ্টা পরিষদ করা হয়। সেই উপদেষ্টা পরিষদে ন্যাপের মোজাফফর আহমদ যেমন ছিলেন তেমনি কম্যুনিস্ট পার্টির মণি সিংও ছিলেন। এর আগ পর্যন্ত আমরা ট্রেনিং এর সুযোগ পাই নাই। ইন্দিরা সরকার, মুজিব নগর সরকার ও আমাদের মধ্যে মতামতের ঐক্য স্থাপিত হওয়ার পরেই আমরা সুযোগটা পাই। আমরা আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমাদের ছেলেদের কোনো পরিচয় ছাড়া যুদ্ধে যোগদান করানো। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়; ছাত্র হিসেবে যোগদান করা। অবশ্য পরে যখন সরকার পলিসি পরিবর্তন করে তখন ন্যাপ- ছাত্র ইউনিয়ন- সিপিবি নিয়ে যৌথ কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ। আমাকে দেশের ভেতরে রাখা হয়েছিল রিক্রুট করার জন্য।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাম রাজনৈতিক কর্মীরা কী যথাযোগ্য সম্মান পেয়েছিলেন? নাকি কোনো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: ছাত্র ইউনিয়ন করলেও পরে এফএফ ( FF) করেছে, সাহসী ভূমিকা রেখেছে তারা স্বীকৃতি পেয়েছে। হাতের কাছেই অন্যতম উদাহরণ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। কিন্তু বীর বিক্রম উপাধি পেয়েছেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমরা আগের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আপনার পরিচয় নিয়ে কথা বলছিলাম।
ড. নূহ উল আলম লেনিন: বঙ্গবন্ধু যেদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন সেদিন আমরা সেখানে ছিলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সভাপতি, আমি সহ সভাপতি, কাইয়ুম মুকুল ( প্রথম অালোর কাইয়ুম মুকুল) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরবর্তী সম্মেলন অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের নভেম্বরের সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি ছিলেন। সেই সম্মেলনে আমি সভাপতি ও মাহবুব জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭২-এর সম্মেলনের পর থেকে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অসংখ্যবার দেখা হয়েছে। তার কোনো লেখা জোখা হিসেব নেই। হিসেব করা সম্ভবও নয়। আমাদের চার জনের জন্য গণভবনে পাস লাগতো না। আমি, সাধারন সম্পাদক কাইয়ুম মুকুল, ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ডাকসু জিএস মাহবুব জামান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাদের ঘনিষ্টতা নিয়ে বলতে পারেন।
ড. নূহ উল আলম লেনিন: এখনো মনে উঠলে নিজে নিজে হাসি, কত ছেলেমানুষি করেছি আমরা। জগন্নাথ হলে খাওয়ার টেবিলে ছাত্রলীগ - ছাত্রইউনিয়নে বাকবিতন্ডা হচ্ছে। মারামারি হওয়ার উপক্রম। আমি গিয়ে ফোন করে ফেললাম ৩২ নম্বরে। তিনি বললেন, তুই আয়। আমি গেলাম। তিনি তোফায়েল ভাইকে ডাকলেন। তোফায়েল ভাইকে বললেন, এসব গন্ডগোল থামা। এখন ভাবি, জাতির জনককে আমি খাওয়ার টেবিলের ঝগড়া থামানোর জন্য ফোন করতাম!! আজকের দিনে কেউ এমন কথা কল্পনা করতে পারবে!!
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অন্য মতাদর্শের রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি তাঁর স্নেহসুলভ যে মনোভাব- তা এখনকার সময়ে ভাবা যায় না। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই পরিবর্তনের পেছনে কারণ কী?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: পাকিস্তান আমলে বিপরীত মতাদর্শের লোকদের প্রতি রাজনৈতিক মতানৈক্য ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খুবই সহনশীল। মূল্যবোধের জায়গাটা খুব স্ট্রং ছিল। মুক্তুযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও এটা ছিল। চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী ( ফাঁসিতে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা) কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতা ছিলেন। `অসমাপ্ত আত্মজীবনী`তে তার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু অনেক পজিটিভ কথা লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী জেলখানায়। বঙ্গবন্ধু জানতেন ফজলুল কাদের চৌধুরী হাভানা চুরুট খায়। কিন্তু জেলখানায় হাভানা চুরুট কে দেবে? বঙ্গবন্ধু জেলখানায় হাভানা চুরুট পাঠাতেন। সবুর খাঁ জেলখানায় থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু তার খোঁজ খবর নিতেন। মোহাম্মদ তোহা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। সশস্ত্র সংগ্রাম করার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধু খবর নিলেন তোহার পরিবার খেয়ে আছে নাকি না খেয়ে আছে। গণভবন থেকে বের হয়ে গোপনে নওয়াবপুর রোডে তার পরিবারকে অর্থিক সহায়তা দিয়ে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। তোহাকে গোপনে ডেকে এনে বলেছেন, তোহা, কেন পাগলামি করছিস? তোরা কিছুই করতে পারবি না। মজার বিষয় হচ্ছে তোহাকে যখন ডেকে এনে বুঝিয়েছেন তখনো তোহার মাথার উপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। কিন্তু তাঁকে এ্যারেস্ট করান নাই। এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। অন্য দশজন সাধারন মানুষের সাথে তাঁকে তুলনা করা যায় না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কিন্তু ইতিহাস তোহার কথা মনে রাখেনি। মনে রেখেছে সিরাজ শিকদারের কথা।
ড. নূহ উল আলম লেনিন: সিরাজ শিকদার সমস্ত পরিস্থিতিটা ঘোলাটে করে ফেলেছিল। ছাত্রলীগ যুবলীগের শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। সিরাজ শিকদারের অপকর্মের প্রধান এলাকা ছিল লৌহজং- শ্রী নগর এসব অঞ্চল। সিরাজ শিকদার কীভাবে মানুষকে ধরে নিয়ে অত্যাচার করেছে তা আমরা জানি। সুতরাং সিরাজ শিকদার ভিন্ন বিষয়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ওই সময়ে ওই প্রেক্ষাপটে টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বঙ্গবন্ধু। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ ( পরবর্তীতে যা চার মূলনীতি হয়ে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হয়) তাঁর মধ্যে কীভাবে এলো?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি মুসলিম লীগ নেতাদের মধ্যে দুটো ধারা স্পষ্ট ছিল। নাজিমুদ্দীনের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক বলয় যেমন ছিল তেমনি আবুল হাসিমদের ( বদরুদ্দীন উমরের বাবা) প্রগতিশীল বলয়ও ছিল। প্রগতিশীল বলয়টি নানা কারণে পাকিস্তান দাবি করেছে সত্য কিন্তু গোঁড়ামিকে কোন প্রশ্রয় দেয়নি। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্ত বাংলা (অভিন্ন বাংলা) করার যে প্রস্তাব ছিল সেই আন্দোলনেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন। সুতরাং বেসিক্যালি তিনি অসাম্প্রদায়িক। ১৯৪৭ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে তিনি বাঙালি ছেলেদের একটি সভা ডেকেছিলেন। সেখানে অনেক বামপন্থী ছিলেন। যেমন সৈয়দ নুরুদ্দীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এরকম আরও অনেকে। বঙ্গবন্ধু তাদের বললেন, `পাকিস্তান তো হইয়া যাইতাছে। যাইতাছি তো ঢাকায়। কিন্তু কী করব গিয়া? আমার কথা পরিষ্কার। ওদের সঙ্গে থাকা যাবে না। অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্মলগ্নেই তিনি বুঝেছিলেন, ওদের সঙ্গে আমাদের হবেনা। বিদেশী সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। দু`জনে একই প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটি হলো, আপনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন কবে প্রথম দেখেছিলেন? দু`জনকেই তিনি বলেছেন যেদিন পাকিস্তান হয়েছে সেদিন থেকে অামি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি। অতএব অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনা তার মনে, মগজে নিহিত ছিল।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ১৫ আগস্ট কী দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রের অনিবার্য বাস্তবতা ছিল?
ড. নূহ উল আলম লেনিন: ১৫ আগস্ট অনিবার্য ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা চক্রান্ত অনিবার্য ছিল এবং তা হয়েছেও বটে। ১৫ আগস্টে শত্রুরা সফল না হলে পরে আবার সফল হওয়ার চেষ্টা তারা করত। দীর্ঘদিন ধরে চলা চক্রান্তে মোস্তাক গং সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে ১৫ আগস্টের জন্য বঙ্গবন্ধুর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, দলের লোকদের প্রতি অন্ধবিশ্বাসও দায়ী। শত্রুরাও জানত বঙ্গবন্ধু তাদের অন্ধবিশ্বাস করে। দেশী বিদেশী নানা রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় র`এর চীফ, আমাদের তখনকার বাম নেতৃবৃন্দ সবাই কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু অন্ধ স্নেহ, আবেগ কাল হয়ে দাঁড়াল।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ১৫ আগস্টে আপনাদের ভূমিকা কেমন ছিল।
ড. নূহ উল আলম লেনিন: ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসার কথা। তার আগের রাতে আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজগোজের কাজে ব্যস্ত। শেখ কামাল অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ছিলেন। যেহেতু তিনি নববিবাহিত তাই আমরা তাকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করছিলাম। তিনি যেতে চাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত চা খেয়ে অনেক রাতে বিদায় নেয়। পরের দিন ভোরে যখন রেডিওতে মেজর ডালিমের সেই স্পর্ধিত কন্ঠ শুনি - ` শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে` তখন আমরা তাৎক্ষণিক করনীয় জানতে জাতীয় ছাত্রলীগের কনভেনর শেখ শহীদুল ইসলামের বাসায় ছুটে যাই। তিনি তখন থরথর করে কাঁপছিলেন। বললেন, আমার পক্ষে এখন কোনো নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। তখন আমরা দু`ভাগে ভাগ হয়ে যাই। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমরা যান কম্যুনিস্ট পার্টির নেতাদের কাছে। আর আমি ও চন্দন চৌধুরী যাই ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের কাছে। ওই বাসা থেকে আমি তোফায়েল ভাই সহ কয়েকজনকে ফোন করি। কিন্তু কাউকে পাইনা। মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভাই বললেন, তোমরা আপাতত ধৈর্য্য ধর। দেখি পরিস্থিতি কোনদিকে যায়। এরপর আমরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা পঙ্কজদা`র বাসায় যাই। সেখানে বসে আমরা নতুন সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান শুনি।
/ এআর /
আরও পড়ুন