লিবিয়ার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি বাংলাদেশের
প্রকাশিত : ২২:৫৩, ২৯ মে ২০২০ | আপডেট: ২২:৫৭, ২৯ মে ২০২০
৫ মে লিবিয়ার জাভিয়া শহরে করোনার মধ্যে একটি আটক কেন্দ্রে গাদাগাদি করে শুয়ে আছে অভিবাসীরা- রয়টার্স
লিবিয়ায় মানব পাচারকারীরা ২৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা ও ১১ জনকে আহত করার একদিন পর আজ সেদেশের কাছে বাংলাদেশ এই হত্যায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, লিবিয়ায় আমাদের মিশন ত্রিপোলি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং জরুরি তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।
তিনি বলেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জাতিসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলি ভিত্তিক গভর্মেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডকে (জিএনএ) এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় ঢাকাকে জানাতে বলেছে।
ড. মোমেন বলেন, এদিকে ঢাকা ২৬ বাংলাদেশীর মৃতদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দুষ্কৃতকারীরা এই ২৬ বাংলাদেশীর সঙ্গে আফ্রিকান ৪ ব্যক্তিকেও হত্যা করেছে।
মন্ত্রী বলেন, লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির মুখোমুখি করার নির্দেশ দিয়েছে।
তবে মোমেন বলেন, রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে মিজদা শহরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে, এটি গোলযোগপূর্ণ এলাকা, মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতিপক্ষ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের পর জিএনএ এই শহরের নিয়ন্ত্রন গ্রহন করেছে।
তিনি বলেন, ত্রিপোলি থেকে পাওয়া খবরে জানা যায় হটিয়ে দেয়া প্রতিপক্ষ বাহিনী দুই দিন আগেও বোমা হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধীদের কখন কিভাবে আটক করা যাবে সে বিষয় ধারণা করা কঠিন।
বৃহস্পতিবার রাতে ২৬ বাংলাদেশীসহ ৩০ জনকে মেজদায় জিম্মি দশায় গুলি করে হত্যা করা হয়, এ হামলায় অপর ১১ জন আহত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ত্রিপোলি থেকে সর্বশেষ খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ মিশন লিবিয়ার কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাতেই আহত বাংলাদেশীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলির হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। ত্রিপোলি থেকে সর্বশেষ রিপোর্টে জানা যায়, আহত ১১ বাংলাদেশীর মধ্যে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তবে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা অপর ৬ জন ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন।
‘গুরুতর আহত ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের সার্জারি হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিহত ২৬ জনের লাশ বর্তমানে মিজদা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিশন লিবিয়া সরকারের ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ এন্ড আইওএম’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা আহত বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
মোমেন বলেন, তিনি বলেন, লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিজদাতে এ হত্যাকান্ড ঘটে। সেখানে একটি গোপন স্থানে ৩৮ বাংলাদেশী নাগরিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। তাদেরকে হত্যা করা শুরু করা হলে তাদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি লিবিয়ায় বাংলাদেশ মিশনকে এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে অবহিত করেন।
মোমেন বলেন, প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বলেন, মানব পাচারকারী চক্রটি আরো অর্থের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের নির্যাতন করছিল।
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেন, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এ সময় তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হতো। একপর্যায়ে অপহৃতরা অতিষ্ঠ হয়ে মূল অপহরণকারী লিবিয়ান এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। এর জেরে অন্য দুস্কৃতকারীরা আকস্মিক তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের পত্রে বলা হয়, এ হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই বাংলাদেশী নাগরিক লিবিয়ায় কার বাসায় অবস্থান করে মিশনের সাথে যোগাযোগ করেন তা জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
তিনি জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানব পাচারকারীরা কাজের সন্ধানে তাদের লিবিয়ার ত্রিপোলি শহরে নিয়ে আসার পথে তিনিসহ মোট ৩৮ বাংলাদেশি দুস্কৃতকারীদের হাতে জিম্মি হন। একপর্যায়ে অপহৃতরা অতিষ্ঠ হয়ে ‘মূল অপহরণকারী’কে হত্যা করে। এর জেরে অন্য দুস্কৃতকারীরা আকস্মিক তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে।
এসি
আরও পড়ুন