জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা পেয়ে ভূমিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত : ২০:১৪, ৫ জুন ২০২০
জাতিসংঘের ‘ইউএনপিসি অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন ও ভূমিমন্ত্রী- ছবি একুশে টেলিভিশন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, জাতীর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে ও প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সাল হতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি সংস্কার বোর্ড, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন পূর্বক এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন উপলক্ষে শুক্রবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, জনসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ কর্তৃক এ বছরের ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের (ডেসা) আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লিউ ঝেনমিন।
বিবৃতিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ পেয়েছে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়। দেশব্যাপি ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে মন্ত্রণালয়টি এ পুরস্কার পেয়েছে। বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় 'ই-মিউটেশন' কার্যক্রমের জন্য ‘Developing Transparent and Accountable Public Institutions’ ক্যাটাগরিতে 'United Nations Public Service Award-2020' অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি কর্তৃক জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাকে প্রদত্ত এক চিঠির বরাত দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে লেখা চিঠিতে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যু ঝেনমিন উল্লেখ করেন, ‘জনস্বার্থে সেবার উন্নয়নে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে মন্ত্রণালয়টি (ভূমি) এবং আমি বিশ্বাস করি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ আপনার দেশে জনপ্রশাসনের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, এই কাজ (ই-নামজারি) জনসেবায় ব্রতী হতে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ হিসাবে কাজ করবে।’
প্রতিবছর ২৩ জুন, যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে জাতিসংঘ দিবসটি উদযাপন করে আসছে। এই সময়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি খাতে গৃহীত সর্বোত্তম উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহকে পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যদিও বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ এ বছর পাবলিক সার্ভিস পুরস্কার বিতরণ আপাতত অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। তবে, জাতিসংঘ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নমুখী প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে এই অসামান্য অর্জন ও পুরস্কার বিজয়ের বিষয়টি তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ভূমি মন্ত্রণালয় অধিকাংশ ভূমিসেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর সম্পন্ন করেছে এবং অবশিষ্ট ভূমিসেবাসমূহ ডিজিটাল করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমার নেতৃত্বে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে ই-নামজারি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমার নির্দেশে গত ১ জুলাই ২০১৯ হতে সারাদেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয় (তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে)। বর্তমানে ৪৮৫ টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং ৩৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ই-নামজারি বাস্তবায়ন হচ্ছে, ২০১৯-২০ সনের মে মাস পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭০টি আবেদন পাওয়া যায় এবং ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৮টি আবেদন অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০২০ হতে ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী জনগণকে ভূমি অফিসে গিয়ে মিউটেশন করতে হতো। এতে জনগণের সময়, অর্থ ও যাতায়াতে অনেক ব্যয় হতো। বর্তমানে এই সেবা ৪৫ কার্যদবসের পরিওবর্তে সর্বোচ্চ ২৮ দিনেই ঘরে বসেই ই-নামজারি করতে পারছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্লোগান “হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা”-এর ধারাবাহিকতায় জনগণ তাদের দোরগোড়ায় কম সময়ে, কম অর্থ খরছে এবং কম যাতায়াত করেই তাদের সন্তুষ্টি সহকারে তাঁরা সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, জাতীর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সাল হতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সকল কার্যক্রম অটোমেশন করা হচ্ছে। ই-মিউটেশন তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, ভূমি সংস্কার বোর্ড, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
এর আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ই-মিউটেশন উদ্যোগ বাস্তবায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে লেখা চিঠিতে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উল্লেখ করেন, ‘জনস্বার্থে সেবার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়টির অসামান্য অর্জন শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ আপনার দেশে জনপ্রশাসনের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, এই কাজ জনসেবায় ব্রতী হতে বাকিদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগাবে।’
ওই চিঠি পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের এ ধরনের সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দূরদর্শী উদ্যোগেরই ফসল।’
এনএস/
আরও পড়ুন