৬ আগস্ট হিরোসিমা দিবসে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত : ২২:৪৯, ৬ আগস্ট ২০২০
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাপানের হিরোসিমায় ৬ আগস্ট ও নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার দিবস উপলক্ষে আজ ৬ আগস্ট ২০২০ জাতীয় প্রেসক্লাবের সমানে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধবিরোধী এ মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও বাম জোটের সমন্বয়ক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সচিব জুলফিকার আলী ও সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দুনিয়াব্যাপী বাজার ও সম্পদ দখলের জন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ একে অপরকে পরাজিত করার জন্য দুনিয়াব্যাপী ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামিয়ে আনে। হিটলার-মুসোলিনীর নেতৃত্বে জার্মান-জাপান-ইতালির অক্ষ শক্তি যে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় তাতে গোটা দুনিয়ায় ৪ কোটি মানুষ নিহত ও কোটি কোটি মানুষ আহত, পঙ্গু ও গৃহহীন হয়।
হিটলার-মুসোলিনীর নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড স্ট্যালিনের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। যে কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গোটা দুনিয়ায় যে ৪ কোটি মানুষ মারা যায় তার মধ্যে শুধুমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নেই নিহত হয় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। কমরেড স্ট্যালিনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে জার্মানির হিটলার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং জাপান আত্মসমর্পণ করার জন্য সময় তারিখ চূড়ান্ত করার জন্য যখন আলোচনা করছিল ঠিক সেই সময় যুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানানের হিরোসিমায় ও ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে পৃথিবীতে প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা হামলা করা করা হয়। এর মাত্র ৬ দিন পরেই জাপান ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে এবং ২ সেপ্টেম্বর চুক্তি হয়। ঐ বোমা হামলায় হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহরের প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিহত ও লক্ষ লক্ষ মানুষ আহত, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ হয়। দুটি শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। যা ৭৫ বছর পর আজও বসবাসের অযোগ্য হয়ে আছে।
বক্তাগণ হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে বোমা হামলার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, আজ ৭৫ বছর পরে এসেও আমরা দেখছি দেশে দেশে যুদ্ধাবস্থা। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান দখল করেছে, সিরিয়া দখলের মার্কিন পাঁয়তারা এখন চলছে। তেল ও বাজার দখল নিয়ে এবং অস্ত্র ব্যবসা জিইয়ে রাখতে এখনও বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। জায়ানবাদী ইসরাইল কর্তৃক স্বাধীন ফিলিস্তিনী ভূমি দখল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ, চীন-ভারত সীমান্তে যুদ্ধাবস্থাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক যুদ্ধ, খণ্ডযুদ্ধ, যুদ্ধান্মদনা চলছে যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রূপ নিতে পারে। এর কারণ সাম্রাজ্যবাদ তার অর্থনীতির সামরিকীকরণ করেছে। এই অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতেই তার যুদ্ধ ও যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব দরকার অস্ত্র বিক্রির জন্য। ফলে এ বিষয়টি পরিষ্কার যা কমরেড লেনিন বহু পূর্বেই গোটা বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছিলেন, যতদিন পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ টিকে থাকবে ততদিন পৃথিবীতে যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকবে।
আজকে লেনিনের এই কথাটি আরোও বেশি প্রাসঙ্গিক। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর নানা অসম চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী উপকূলে পর্যবেক্ষণ রাডার স্থাপন, সীমান্তে কাটাতারের বেড়া ও হত্যাকাণ্ড, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে এক তরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করাসহ নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
বক্তাগণ ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী দেশের সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। একই সাথে গোটা দুনিয়ার শান্তিকামী যুদ্ধবিরোধী মানুষদের ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গি শান্তি আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সে লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধবিরোধী ফোরাম গড়ে তোলার জন্য দেশের, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সকল বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শান্তিকামী রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানান।
আরকে//
আরও পড়ুন